জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী
এবার এমন এক সময়ে বিশ্ব নেতারা জাতিসংঘ অধিবেশনে মিলিত হচ্ছেন, যখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গার পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও আশপাশের জেলায় এ দফায় প্রবেশ করেছে আরও প্রায় চার লাখ শরণার্থী। রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই সংখ্যা ১০ লাখে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
সূত্র বলছে, রোহিঙ্গাদের অধিকার ও নিজ দেশে তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের বিষয়ে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি সবিস্তারে সব কিছু তুলে ধরবেন।জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন সেই প্রস্তুতিই নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনের বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়।জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সময়ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি গুরুত্ব পাবে। বলা হচ্ছে, মানবিক এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের জানান, ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওআইসি’র রোহিঙ্গা বিষয়ক যোগাযোগ গ্রুপের একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্টসহ ওআইসি দেশসমূহের নেতৃবৃন্দ এতে অংশগ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ওআইসি সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রসমূহের জোরালো সমর্থন কামনা করবেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে ৫২ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ সরকারি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন।সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার কথা সবাই জানেন। এবারের অধিবেশনে এ সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আপনারা নিশ্চয়ই এ বিষয়ে ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন। এটি গত ৯ বছরে নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক মিয়ানমার বিষয়ে প্রদত্ত প্রথম বক্তব্য।সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এবারের জাতিসংঘে উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের বৃহত্তর সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করা হবে। এছাড়া আরও একাধিক কারণে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব জাতিসংঘের সংস্কার কার্যক্রমের উপর বিশেষ জোর দিয়েছেন। তার এই উদ্যোগের সঙ্গে আমরা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের অধিকাংশই সংহতি প্রকাশ করেছে। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের সংস্কারের উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। যেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বের অন্যান্য অনেকগুলো দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আপনারা জানেন যে- জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শান্তিরক্ষী এবং জাতিসংঘের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সেক্সুয়াল এক্সপ্লয়িশন এন্ড এবাস- (যৌন শোষন এবং অপব্যবহার) এর কিছু নজির আছে। এ বিষয়ে নতুন মহাসচিব অত্যন্ত সোচ্চার। শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশসমূহসহ এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালনকারী সদস্য রাষ্ট্রসমূহের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ‘সার্কেল অব লিডারশীপ’ নামে একটি প্লাটফর্ম গঠন করতে চাচ্ছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মাত্র ৪টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যতম।
১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী মি. স্টেফান লফভেন-এর উদ্যোগে আয়োজিত একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী টেকসই শিল্পায়ন, শোভন ও যথোচিত কর্ম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয়গুলো তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে মহাসচিবের ‘হাই লেভেল প্যানেল অন ওমেন্স ইকোনোমিক এমপাওয়ারমেন্ট’ শীর্ষক বৈঠকে একজন প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য দেবেন।
২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মত এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার আদায়, দারিদ্র দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবকাঠামোগত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য গাঁথার বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে মর্মে আশা করা যাচ্ছে।