উৎপল দাস।।

আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদন্ধিতাপূর্ণ হবে- এমনটি বলা হলেও পর্দার অন্তরালে নানা কথাবার্তাই আলোচিত হচ্ছে। রহস্যময়তা ডালপালা মেলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক এবং জনমত যাচাইয়ের জনপ্রিয়তা নিয়ে যেসব প্রার্থীরা উঠে আসবেন তাদেরকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি যে ঘটতে যাচ্ছে না, সেটির ইঙ্গিতও দিয়েছেন। একটি প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারি ও বেসরকারী পর্যায়ে প্রার্থী বাছাইয়ের জরিপ কাজ কয়েক দফা করছে। সংগঠনকে সংগঠঠিত করতে, মাঠের কোন্দল নিরসনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহকর্মীদের নিয়ে পরিশ্রম করছেন।

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতার ভারসাম্য, প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, দল নিরপেক্ষ প্রশাসন, সংবিধান ও আইন, বিধি-বিধান বলে রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে এবং মাথাপিছু আয় ৫ হাজার ডলার করার অঙ্গিকারসহ ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করে একটি ইতিবাচক আগাম নির্বাচনী ইসতেহার দিয়েছেন। বিএনপি সারাদেশে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে গিয়ে প্রতি আসনে ৩ জন করে ৩০০ আসনে মোট ৯০০ জনের নাম তালিকাভুক্ত করেছে। মূল প্রার্থীদের কাজ শুরু করার সবুজ সংকেতও দেয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা বললে আন্দোলন নয়, বিএনপি মূলত ভোটযুদ্ধের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে।

এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ নামস্বর্বস অনেক দল নিয়ে সম্মিলিত মহজোট গড়েছেন। বর্তমান সংসদের তার দলের প্রায় ৪০ জন এমপি রয়েছেন। এদের সঙ্গে যুক্ত করে দেড়শ প্রার্থীর আসনে প্রতিদ্বন্ধিতামূলক ভোট করতে চান। ধর্মভিত্তিক যে ভোটটি বিএনিপর দিকে ঝুঁকে পড়ে তাদের পক্ষে টানতেই তিনি কৌশলগত কারণে এই সম্মিলিত মহাজোট করেছেন। সামনে ধর্মভিত্তিক আরো কিছু দল তার সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে।

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাংগঠনিক সফরে বের হতে বললেও তিনি এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। একদিকে শারিরীক অসুস্থতা অন্যদিকে নির্বাসিত পুত্রের দণ্ড, দলের নেতাকর্মীদের নামে হাজার হাজার মামলার ভারে মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত। অনেকে বলছেন, ব্যাপক সাংগঠনিক সফর করার মতো শক্তি ও সামর্থ্য তার নেই। কিন্তু দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার মনোবল এখনো অনেক শক্তিশালী। জিয়া আরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার খড়গ তার সামনে ঝুলছে। কেউ বলছেন, খালেদা জিয়ার কাছে এমন কোনো বার্তা আছে, যার হিসাব মিলাতে গিয়ে তিনি এখনই সাংগঠনিক সফরে বের হচ্ছেন না। হয়তো ভাবছেন, নির্বাচনের ৬ মাস আগেই সারাদেশ সফরে বের হলেও হবে। আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচন উপযোগী সংগঠন গুছাতেই তার মন। এমনকি সরকার তার বিরুদ্ধে মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে কি সিদ্ধান্ত সামনে নেবে সেটিও দেখতে চাইছেন।

পর্দার অন্তরালে নানা কথাবার্তা বইছে। বলাবলি হচ্ছে, সরকার যদিও অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ আগামী জাতীয় নির্বাচনের কথা বলছে, বাস্তবে গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয়, সন্দেহ রয়েই গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জোট ফের আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে আরো ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গণতান্ত্রিক ধারাটি দৃশ্যমান করা হলেও ফলাফল নিশ্চিত করেই ছক আঁকা হয়েছে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মামলায় দণ্ডিত হলে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ও কারান্তরীণ করেই ভোটযুদ্ধ হবে যেখানে বিএনপির একটি অংশ ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে মাত্র। খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে তার জনপ্রিয়তা বাড়বে কিনা, পরিস্থিতি কোথায় কি দাঁড়াবে সেটি নিয়েও হিসাব নিকাশ চলছে। সেই আলোকে সংসদে বিরোধী দল হিসাবে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকেই আবারো বিরোধী দলে বসানো হবে। বিএনপির যে অংশটি নির্বাচনে আসবে, তাদের অবস্থান হবে তৃতীয় স্থানে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পর্দার অন্তরালের যে আলোচনা, কথাবার্তা চলছে- এ বছরের শেষ নাগাদ তা দৃশ্যমান হবে। রাজনীতির গতিপথ পর্যবেক্ষণের এখন সময়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn