জাবিতে শুরু হচ্ছে বর্ণাঢ্য ‘মুক্তি সংগ্রাম নাট্যোৎসব’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুরু হতে যাচ্ছে সাত দিন ব্যাপী মুক্তি সংগ্রাম নাট্যোৎসব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগামী ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী এই নাট্যোৎসবের ঘোষণা দিয়েছেন। নাট্যোৎসবকে কেন্দ্র করে একের পর এক আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, আর্ট ক্যাম্প, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে অনন্য এই সাত দিনের নাটক, সঙ্গীতের সমারোহে হারিয়ে গিয়ে নিজেকে পূর্ণ চেতনায় ফিরে পেতে পুরো ক্যাম্পাস যেন মুখিয়ে আছে। ঐতিহাসিক নাটক আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের গৌরবময় স্থান সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ। আর এই মুক্তমঞ্চেই সাত দিনের উৎসব দিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভেতর দেশপ্রেমের চেতনা জাগাতে চান আয়োজকরা।
আয়োজিত নাট্যোৎসবে ২৬ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদকে মরণোত্তর স্মারক প্রদান করা হবে। তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এমপি বাবার পক্ষে স্মারক গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তানুযায়ী ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। জাতির এই চির আকাঙ্খিত সময়কে প্রলম্বিত করতে চায় না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। আর তাই সাত দিনের কর্মসূচির শুরু হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ২৫ মার্চ তারিখটিকে। তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এদিন বিকাল থেকেই শুরু করবে চেতনাদ্দীপ্ত এই সপ্তাহব্যাপী কর্মযজ্ঞ। বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি, বীরপ্রতীক বিকাল চারটায় জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকার উত্তোলন করবেন। উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক রাজধানী জাহাঙ্গীরনগরের সাত দিনের চেতনার মহোৎসব শুরু হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।
প্রথম দিনের কর্মসূচির অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকবে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের যৌথ আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক পরিচিতির বুথ উন্মোচন। দিনটিকে আরও বর্ণিল ও স্মরণীয় করে রাখতে জাহাঙ্গীরনগরের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে আয়োজন করছেন ‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আর্ট ক্যাম্প প্রদর্শনী’।
দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় মুক্তি সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হবে। সূচনা সঙ্গীতের সঙ্গে থাকবে মঙ্গল মশাল প্রজ্বলন। এ সময় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক বশির আহমেদ। অধিবেশনে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও নাট্য আন্দোলন নিয়ে বক্তব্য দেবেন অধ্যাপক এ কে এম ইউসুফ হাসান, নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য ও সাবেক জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবাদুল করিম বুলবুল।
প্রধান অতিথি হিসেবে প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। দিনশেষে রাতের মূল আকর্ষণ হবে বাংলাদেশের গুণী ব্যক্তিত্বদের স্মারক সম্মাননা প্রদান পর্বটি। অন্যান্যদের মধ্যে মরণোত্তর স্মারক সম্মাননা পাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র, উপমহাদেশের সফল অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী। এই রাতে আরও স্মারক সম্মাননা দেওয়া হবে নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, এবাদুল করিম বুলবুল, ডা. দীপু মনি এমপি, নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন (মরণোত্তর), আব্দুল্লাহ আল মামুন (মরণোত্তর), কবি সৈয়দ শামসুল হক (মরণোত্তর), শহীদ জননী জাহানারা ইমাম (মরণোত্তর), তারামন বিবি বীর প্রতীক এবং স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হবে পদাতিক নাট্য সংসদ (টিএসসি) এর পরিচালনায় নাটক ‘কালরাত্রি’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে।
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে অনুষ্ঠান শুরু হবে এক অভিনব কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশব্যাপী ৩০ লাখ বৃক্ষ রোপণের উদ্বোধন করবেন। এর সাথে সঙ্গতি রেখে দুপুর তিনটায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মুখপাত্র অধ্যাপক শাহরিয়ার কবিরের পরিচালনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও শুরু হবে বৃক্ষরোপণ। বৃক্ষরোপণ শেষে শুরু হবে স্মারক সম্মাননা (মরণোত্তর) প্রদান অনুষ্ঠান। এদিন সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাবি; শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ, জাবি এবং জয় বাংলা সাংস্কৃতিক জোট।
২৭ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা ও সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করতে উপস্থিত থাকবেন গাজী গোলাম দস্তগীর এমপি, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, অভিনয় ব্যক্তিত্ব ফেরদৌসী মজুমদার। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ঢাকার বেইলি রোডে থিয়েটারের পরিবেশনায় মঞ্চস্থ হবে নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। ২৮ মার্চ থেকে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুণী ব্যক্তিত্বরা আসবেন। শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরে জ্ঞানালোকের বিকাশ ঘটাবেন।
অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত থাকবেন বধ্যভূমির আবিষ্কারক ডা. মো. আবুল হোসেন, সাংবাদিক মনজরুল আহসান বুলবুল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আকম মোজাম্মেল হক, সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ভেলরি এন্ড টেলর, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নারায়ণগঞ্জের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি, বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, অভিনেতা তারিক আনাম খান, ডাক্তার নুজহাত চৌধুরী, মাহাবুব আরা গিনি এমপি, পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আবু নাসের কামাল চৌধুরী, নাট্য ব্যক্তিত্ব সারা যাকের, রামেন্দু মজুমদার, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব এন্ড্রু কিশোর। শেষের দিন মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হবে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনিরকে। ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ মার্চ মঞ্চস্থ হবে যথাক্রমে সময়ের প্রয়োজনে, নটপালা, মৃত্যুপাখি ও জেরা নাটক।