অহী আলম রেজাঃ

অবশেষে আসছে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটি। বার বার কেন্দ্র থেকে তাগাদা দেয়ার পর এবার সভাপতি- সম্পাদকের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে জমা দেয়া তালিকা থেকে কমিটি হচ্ছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের মাঝামাঝি সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমনকে ডেকে কমিটি চ’ড়ান্ত করা হবে। দীর্ঘদিন পুর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারার ব্যর্থতা থাকলেও তাদের পরামর্শেই কমিটি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমনের আধিপত্য থাকছে বলে জানা গেছে। তবে, নেতাকর্মীরা বলছেন, সম্মেলনের পর দেড়বছর অতিবাহিত হওয়ায় সভাপতি- সম্পাদকের ব্যর্থতা স্পষ্ট। ঐক্য নয় বরং অনৈক্যের কারণে সুনামগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের পর জেলা পরিষদে দলীয় প্রাথর্রি ভরাডুবি হয়েছে। আবার তাদের পরামর্শে কমিটি করা হলে দলের ক্ষতি হবে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালের ১৮ মার্চ। ওই সময় আবদুজ জহুরকে সভাপতি ও আইয়ুব বখত জগলুলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ৫৪ সদস্যের ওই কমিটির ১০ জনই এখন বেঁচে নেই। ছয়জন দীর্ঘদিন থেকে প্রবাসে আছেন। কেউ কেউ দল ত্যাগ করেছেন। কয়েকজনকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্যে নিস্ক্রিয় আছেন আরও ১০-১৫ জন। হাতে গোনা কয়েকজনকে দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দেখা যায়। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আয়ুব বখত জগলুলকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখন যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুটকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর ২০০৮ সালে আবদুজ জহুর মারা যাওয়ার পর সহভাপতি মতিউরকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে দীর্ঘদিন চলে সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগ। বার বার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সম্মেলন হয়নি। চারবার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে মতিউর রহমানকে সভাপতি ও ব্যারিস্টারে এনামুল কবীর ইমনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সভাপতি নিয়ে কোন প্রশ্ন না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমনকে মেনে নিতে পারেনি সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী অংশটি। তখন থেকেই সভাপতি- সম্পাদকের আলাদা বলয় প্রকাশ্যে দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়ে।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট। নির্বাচনে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। নুরুল হুদা মুকুটের পক্ষে কাজ করেন জেলা সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব বখত জগলুল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম শামীম, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম, ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী, জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুল মনাফ।
অন্যদিকে ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমনের পক্ষে ছিলেন সুনামগঞ্জ- ৩ আসনের সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ- ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শাহানা রব্বানী, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিছ আলী, ছাতক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল। নির্বাচনে ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন পরাজিত হন। আরও দূরত্ব বেড়ে যায় দুই বলয়ে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান সেলিম বলেন, রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিকদের কমিটিতে স্থান দিতে হবে। সুবিধাবাদীরা যাতে আর দলের ক্ষতি না করতে পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
কমিটি গঠনের ব্যাপারে, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন বলে, দলকে সংগঠিত ও গতিশীল করতে প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে কমিটি আসবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে দলকে আরও শক্তিশালী করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট বলেন, ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের দিয়ে কমিটি করা না হলে দলের ক্ষতি হবে। ক্ষমতায় থাকাি সত্বেও গত দুই বছরে সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের কোনো কার্যক্রম নাই, দলীয়, রাষ্টীয় কোনো কর্মসূচী পালন হয় না। দল ক্ষমতায় থাকায় সুদিনে আজ যারা আছে তারা হয়তো একদিন থাকবে না। এ জন্য ক্ষমতা উপভোগ নয় দলকে বাঁচাতে সত্যিকারের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn