সমাজে সবচেয়ে শ্রদ্ধার ও আলোকিত মানুষ হলেন- শিক্ষক।মূলত তাদের আদর্শিক আলোয় আমরা ব্যক্তি ও সমাজে অবদান রাখলেও  অবসর নেওয়ার পর এসব শিক্ষকদের কেউ আর খোঁজ খবর নেয়না। বার্ধক্য, আর্থিক অনটনসহ নানা সমস্যায় দিন পার করেন  শিক্ষকবৃন্দ। টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন শিক্ষকদের কল্যাণে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত  একটি  চ্যারিটি  সংগঠন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ফাউন্ডেশন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, অসুস্থদের সহায়তা  ও সম্মাননা প্রদান করছে। এছাড়াও  অবসরকালীন  সময়কে আনন্দময় করতে  শিক্ষার্থীদের সাথে একটি হার্দিক সম্পর্ক অটুট রাখার লক্ষ্যে নানা রকম সৃজনশীল উদ্যোগ এবং  সামাজিকভাবে শিক্ষাগুরুদের সর্বোচ্চ সম্মান জানানোর যে কোন উদ্যোগ নিতে  শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতন ও অনুপ্রেরণা দানে কাজ করছে।

গত ৩১মে বুধবার পূর্ব লন্ডনের একটি হলে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশনের ২০২৩-২৪ সালের কার্যকরী পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতাকালীন সভাপতি ফয়ছল আহমদ রুহেল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা সহ নতুন কমিটি পরিচয় করিয়ে দেন প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক  ছরওয়ার আহমদ। অনুষ্ঠানে  প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন  প্রবীন শিক্ষক অদ্বৈত কান্ত দাস। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার মাসুদ চৌধুরী।

প্রধান অতিথি শিক্ষাবিদ অদ্বৈত কান্ত দাস বলেন- ব্যক্তি ও সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু বিশেষ করে অবসর সময়ে শিক্ষকদের জীবন যাপন সুখকর নয়।এবং অনেক ক্ষেত্রে তা  বেদনাদায়ক। টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন -সমাজকে আলোকিত করতে যারা কাজ করেছেন, সেই মানুষ গড়ার কারিগরদের সার্বিক কল্যাণ ও তাদেরকে সম্মান দানের জন্য কাজ করছে। যা বর্তমান সমাজে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এইরকম প্রেরণাদায়ী কাজ সমাজে যতো বেশী চর্চা  হবে সমাজ ততো উপকৃত হবে বলে বিশ্বাস করি।

‘শিক্ষকদের কল্যাণে কাজ করে এরকম সংগঠন আছে বলে আমি এর আগে শুনিনি‘- উল্লেখ করে বিশেষ অতিথি  ব্যারিস্টার মাসুদ চৌধুরী  বলেন, মানুষ গড়ার কারিগরদের সার্বিক কল্যাণ ও তাদের সম্মান জানানোর কাজে যারা নিবেদিত হয়েছেন তাদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা প্রকাশ করছি। এই রকম কাজ সমাজে আলোর স্ফোরণ ছড়াবে- সন্দেহের অবকাশ নেই।

ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক  ছরওয়ার আহমদ ভূমিকা বক্তব্যে বলেন, আমাদের একটি সুনিদৃষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য  আছে-তা হলো শিক্ষার্থীদের যারা জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছেন, তাদেরকে  শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গায়  রেখে সমাজে একটি পজিটিভ বার্তা দেয়া। তা হলো- যার যার অবস্থান থেকে বাবা-মার পাশাপাশি তাদের শিক্ষাগুরুদের প্রতি সামাজিক ভাবে সম্মানের জায়গায় রাখার দায়িত্বটি যেন আমরা যথাযতভাবে পালন করি।

ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফয়ছল আহমদ রুহেল  সকল ট্রাস্টিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন- ফাউন্ডেশনটি হাটি হাটি পা পা করে এই অবস্থা দাড়ানোর পেছনে ট্রাস্ট্রিদের সহযোগিতা আমরা শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছি। সার্বিক সহযোগিতার জন্য  তিনি বিগত কার্যকরি  কমিটির প্রতিও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা  প্রকাশ করেন।অনুষ্ঠানে যুক্তরাস্ট্র থেকে লন্ডনে ভ্রমনে আসা  ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি  শামসুল হক বেবুল এবং বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণে আসা ফাউন্ডেশনের শুভাকাঙ্খি  চ্যালেন এস এর বিশেষ প্রতিনিধি সাংবাদিক হাসানুল হক উজ্জ্বল কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন  কার্যকরি কমিটি ২০২৩-২৪  হলো- সভাপতি  ফয়ছল আহমদ  রুহেল, সহ সভাপতি নজমুল ইসলাম তাপাদার, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম অভি,সহ সাধারণ সম্পাদক রাসেল আহমদ চৌধুরী,কোষাধ্যক্ষ  মো. বদরুল ইসলাম, সহ কোষাধ্যক্ষ  শফিকুর রহমান ছুট,সাংগঠনিক সম্পাদক  ফরহাদ হোসেন টিপু,সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক  শাহ মাহমুদ হাসান সিদ্দিকী, সহ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক  ফখরুল ইসলাম।

নির্বাহি সদস্যবৃন্দ হলেন  ছরওয়ার  আহমদ,আব্দুল ছালাম দুদু,ফারুক উদ্দিন ,কামাল হোসেন ,দেলওয়ার হোসেন খান,ওহিদুর রহমান চৌধুরী। উপদেষ্টা বৃন্দ হলেন- সাবেক শিক্ষক অদ্বৈত কান্ত দাস, ব্যারিস্টার মাসুদ চৌধুরী,সাবেক প্রভাষক  নুরুজ্জামান জামান, ফিনান্সিয়াল কনসালটেন্ট আজাদ হোসেন ও মো. এনামুল হক।

প্রসঙ্গত  টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন  ২০২০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসরপ্রাপ্ত গুণী শিক্ষকদের  টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক এবং বিশেষ সম্মাননা পদক প্রদান করছে।   ফাউন্ডেশন  অবসরপ্রাপ্ত  শিক্ষকদের জীবনী  লিখে তা  সংবাদপত্রে প্রচার এবং  লেখাটি ফ্রেমবন্দি করে  আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরিবারের হাতে শ্রদ্ধার সাথে প্রদান করে  থাকে। ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেট জেলার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের  সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে  ৫জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০২২ ও  সিলেট বিভাগের ১৯ জন শিক্ষককে টি আলী স্যার বিশেষ  সম্মাননা দেওয়া হয়।

২০২৩ সাথে সিলেটের  হবিগঞ্জ জেলার  ৫জন অবসর প্রাপ্ত গুণী শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০২৩ ও ১৩ জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন  বিশেষ সম্মাননা পদক দেয়া হবে। টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদকটি প্রাথমিকভাবে সিলেট বিভাগ এর কৃতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । তবে ফাউন্ডেশনের এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে সারা বাংলাদেশে বিস্তৃত করা হবে। ফাউন্ডেশন তাদের  সকল কার্যক্রম  সচেতনভাবেই শিক্ষকদের সম্মান এবং সমাজে তাদের  অনুকরণীয় ও আলোকিত অর্জনের  দিকগুলো  বিবেচনায়  রেখে  সমাজে  অগণিত শিক্ষার্থীদের  মাঝে প্রেরণাদায়ী  আলোর বার্তা দিতে কাজ করে থাকে। ‘সহায়তা‘ বা ‘দান’ নামে  শিক্ষকদের  নাম ও ছবি যুক্ত কোন  সংবাদ প্রকাশ বা প্রচার করে না।

সংগঠনটির ৬ সদস্য বিশিষ্ট  ফাউন্ডার  কর্মকর্তারা হলেন- আহবায়ক  ফয়সল আহমদ রুহেল, যুগ্ম আহবায়ক-ছরওয়ার আহমদ, সদস্যবৃন্দ – বদরুল ইসলাম,নজরুল ইসলাম তাপাদার,মো: নুরুজ্জামান জামান ও আনোয়ারুল ইসলাম অভি ।ফাউন্ডেশনের  বাংলাদেশ সমন্বয়ক  এর দায়িত্বে আছেন-সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও  সিলেট বিভাগ সরকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি  কবির খান।

উল্লেখ্য তজম্মুল আলী একজন মানুষ গড়ার কারিগর। ভালোবেসে তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রীরা নাম রাখেন- টি আলী স্যার। ২০১৯ সালে শিক্ষকদের কল্যাণে তার নামেই যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে -টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন। টি আলী স্যার সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার বৃহত্তর জলঢুপে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩১ বছর হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি হোস্টেল সুপারের মত গুরু দায়িত্বও পালন করেন। এই গুণী শিক্ষক ২০০০ সালের ২৮ ডিসেম্বর সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপে নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন।

 

 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn