কক্সবাজারের টেকনাফ থানা পুলিশ শনিবার মওলানা তাহের নঈম (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় ‘রহস্যময় মানুষ’ হিসাবে পরিচিত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে জঙ্গি সম্পৃক্ততার। টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের ত্রাণ ও পূণর্বাসন কাজ পরিচালনায় স্থাপিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসের মালামাল লুঠ ও জাতির জনক এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি অবমাননার অভিযোগে এই মওলানাকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই ঘটনায় জামায়াত ও বিএনপির ৩০ নেতাকর্মীর বিরদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুুলিশ সুত্রে জানা গেছে, মওলানা তাহের নঈম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের টেকনাফ উপজেলার সভাপতি ছিলেন। তিনি ২০০৫ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েই জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে সেই সময়েও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়েছিল। টেকনাফ থানার হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির তদানীন্তন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বর্তমানে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বাশার জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে রাখাইনের নির্যাতিত রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ বেড়ে গেলে সীমান্ত এলাকায় বহু সংখ্যক অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবির খোলা হয়। এসব শিবিরের দেখভাল করার জন্য কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দ্দেশে প্রতিটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় অফিস খোলা হয়। এরই ধারবাহিকতায় টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে উনচিপ্রাং নামক বাস ষ্টেশনে একটি অফিস খোলা হয়। রোহিঙ্গা শিবিরের ত্রাণ ও পূণর্বাসন কার্যক্রম তদারকির জন্য খোলা ইউনিয়ন অফিসটিতে লাগানো হয়েছিল বৈদ্যুতিক ফ্যান। সেখানে ছিল চেয়ার-টেবিল ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। সেই সময় অফিসটি উদ্ভোধন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন সিকদার জানান, গত শুক্রবার রাতে মওলানা তাহের নঈমের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের বিএনপি-জামায়াত কর্মী তাদের অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। তারা অফিসের যাবতীয় মালমাল লুঠ করে নেয়। এমনকি এই দুর্বৃত্তরা এক পর্যায়ে জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিতে গোবর লেপন করে জঘন্য অপরাধ করে। হারুন সিকদার জানান, মওলানা তাহের নঈম বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একজন ‘রহস্যময় ব্যক্তি’ হিসাবে এলাকায় পরিচিত। তার বিরুদ্ধে সীমান্তে সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে জঙ্গি কানেকশনে জড়িত থাকারও। তিনি বছরে কয়েকবার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশে সফরে গিয়ে ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্টানের নামে বিপুল অংকের টাকাও হাতিয়ে আনেন। টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কর্মী এবং আটক মওলানা তাহের নঈমের আপন মামা আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি একজন তৃণমূলের আওয়ামী আদর্শের লড়াকু কর্মী। তাই আমার আপন ভাগ্নের বিরুদ্ধেও আজ আমি সোচ্চার। আমার ভাগ্নে জাতির জনকের ছবি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিতে গোবর লেপনের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছে। আমি মামলায় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেব।’আটক মওলানা তাহের নঈমের মামা আজিজুর রহমান আরো বলেন, মওলানা তাহের নঈম টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং গ্রামের বাসিন্দা মৃত মওলানা আবদুস সালামের পুত্র। মওলানা তাহের নঈম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের টেকনাফ উপজেলার সভাপতি ছিলেন। তিনি দৈনিক দিনকাল ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার এক সময় টেকনাফ উপজেলা সংবাদদাতা হিসাবেও পরিচয় দিতেন। বর্তমানে টেকনাফ নিউজ ২৪ ডটকম নামের একটি ওয়েব পোর্টালের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবেও রয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় সংবাদকর্মী পরিচয়ে তিনি নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েই গোপন কাজ করতেন।

মামা আজিজুর রহমান আরো জানান, তার ভাগ্নে তাহের নঈম কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে তৌহিদ এক্সপ্রেস নামের কয়েকটি যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মালিক। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাঈনুদ্দিন খান বলেন, ‘আমি অভিযোগ পেয়ে আজ সরেজমিন গিয়ে দেখেছি আওয়ামী লীগের অফিসটিতে যা করা হয়েছে তা জঘন্য ঘটনা। আটক মওলানা তাহের নঈম অকপটে ঘটনার কথা স্বীকারও করেছেন।’ নঈমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতাসহ আরো ৩০ জনের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে ও মামলা হয়েছে বলে ওসি জানান।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn