আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ খেলেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। টেস্ট খেলেন না তো সেই ২০০৯ সাল থেকে, সবশেষ জাতীয় লিগেও খেলেছেন সাড়ে তিন বছর হলো। তাই আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া জাতীয় লিগের হাইলাইট হলো খুলনা বিভাগের হয়ে ছুটবেন নড়াইল এক্সপ্রেস। গতকাল মিরপুরে তারই শেষ প্রস্তুতির ফাঁকে এ নিয়ে ওয়ানডে অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন সাইদুজ্জামান, যথারীতি কথোপকথন গড়িয়েছে আরো বহুদূর

প্রশ্ন : সাকিব আল হাসান টেস্ট থেকে সাময়িক ছুটি নিলেন আর আপনি ছুটছেন জাতীয় লিগ খেলতে। এর মধ্যে আবার কোনো যোগসূত্র নেই তো?

মাশরাফি বিন মর্তুজা : (অট্টহাসি) নারে ভাই, আমার তো বিশ্রাম আর বিশ্রাম! তিন মাস হয়ে গেল ম্যাচ খেলি না। প্র্যাকটিসে নেট করছি। কিন্তু ম্যাচ প্র্যাকটিস ভিন্ন জিনিস। দক্ষিণ আফ্রিকায় যাব ৭ তারিখ, তার আগে যদি সম্ভব হয় জাতীয় লিগের দুটি রাউন্ড খেলতে চাই। প্রথমটা খেলে যদি ভালো মনে হয়, দ্বিতীয় রাউন্ডটাও খেলব। দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে ম্যাচে ৪০-৫০ ওভার বোলিং করে যেতে পারলে ভালো হবে বলেই জাতীয় লিগে খেলছি। এখনই টেস্টে ফেরা নিয়ে ভাবছি না।

সে অনেক দূরের ব্যাপার। পরেরটা পরে দেখা যাবে।

প্রশ্ন : টেস্ট আর ওয়ানডে তো দুটি ভিন্ন ফরম্যাট। ফায়দা মিলবে চার দিনের ম্যাচে বোলিং করে ওয়ানডেতে নেমে?

মাশরাফি : আমার কাছে লংগার ভার্সন হলো সব ক্রিকেটের পাঠশালা। আপনি এ ফরম্যাটের ক্রিকেট না খেললে কখনোই অন্য ফরম্যাটে লম্বা সময় খেলতে পারবেন না। আমরা বোলাররা সব সময় নির্দিষ্ট একটা জায়গায় বোলিংয়ের কথা বলি। সেই অ্যাকুরেসি আপনার আসবে যদি মন দিয়ে লংগার ভার্সন ক্রিকেট খেলেন। ওয়ানডেতে আমাকে কখনো আক্রমণাত্মক, কখনো-বা রক্ষণাত্মক বোলিং করতে হয়। সেটা শেখার জায়গাই হলো লংগার ভার্সন। এখানে অনেক বেশি বল করার সুযোগ পাবেন। ভুলগুলো শোধরানোরও সময় বেশি পাবেন। ওয়ানডেতে আপনি ৬০টা বল করবেন, জাতীয় লিগে আমি মাশরাফি এক দিনেই এক শর মতো বল করব। অ্যাকুরেসিও বাড়বে তাতে। আমি মনে করি লংগার ভার্সন হলো পারফেকশনের জায়গা।

প্রশ্ন : কিন্তু জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের চার দিনের ক্রিকেট খেলার সুযোগই তেমন একটা হয় না। অভিযোগ আছে, অনেকে এই টেস্ট ক্রিকেটও খেলতে চান না…বিশেষ করে পেস বোলাররা। কেন?

মাশরাফি : কেউ চায় না, কথাটা আমি এভাবে বলব না। আমার মনে হয় টেস্ট ক্রিকেট কিংবা লংগার ভার্সনের ক্রিকেটের গুরুত্বটা অনেকে ঠিকভাবে বুঝতে পারে না। আমি আমার জায়গা থেকে পেসারদের সঙ্গে কথা বলি, ওদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে লংগার ভার্সন ক্রিকেটে বোলিং করলে লাইন-লেন্থ যেমন ঠিক হবে, তেমনি ম্যাচ ফিটনেসও বাড়বে। তা ছাড়া খ্যাতির কথা যদি বলেন, টেস্ট ক্রিকেটারদেরই সুনাম বেশি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ছাড়া টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টদের কথা কি আপনার মনে পড়ে? আপনার কাছে কারা তারকা? যারা অন্য দুই ফরম্যাটের সঙ্গে টেস্টটাও ভালো খেলে, তারাই। আপনার সামর্থ্যের আসল পরীক্ষা হয় টেস্ট ক্রিকেটেই। ছোট ফরম্যাটের সবচেয়ে বড় তারকারা কিন্তু টেস্টেও দুর্দান্ত। কালকে (গত পরশু) হাশিম আমলার ব্যাটিং দেখেছেন? একসময় বলা হতো ও ওয়ানডেতে পারবে না। কিন্তু এখন টি-টোয়েন্টিতেও দাপিয়ে খেলছে। তো, এসব দেখে কারোরই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা না।

প্রশ্ন : আরেকটা অনুযোগ আছে ক্রিকেটারদের তরফে, টেস্ট তো আর সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের মতো কম কষ্টে বেশি আয়ের ক্ষেত্র নয়।

মাশরাফি : মানছি ম্যাচ দৈর্ঘ্যের তুলনায় টেস্টের ম্যাচ ফি কম। কিন্তু আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে টেস্টে ভালো করলেই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে আপনার ক্যারিয়ার লম্বা হবে, মানুষ আপনাকে মনে রাখবে।

প্রশ্ন : দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে আপনার কথার মূল্য অনেক। আপনি কি মনে করেন যে ম্যাচ ফি বাড়ালে টেস্ট ম্যাচে লাল বল হাতে ছুটতে চাইবে আরো অনেক তরুণও?

মাশরাফি : খুব বেশি না হলেও টেস্টের ম্যাচ ফি কিন্তু বেড়েছে। কিন্তু কোনো কিছু চাওয়ার পাশাপাশি আমাকে তো কিছু দিতেও হবে! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেস্টের ম্যাচ ফি খুব কম, এটা আমি বলব না। কিন্তু ওই যে বললাম, শুধু চাইলেই হবে না, আমাকে দিতেও হবে। আমি যদি আমার কাজটা করে যাই, একদিন তার প্রতিদান পাবই। শুধু কিছু পাওয়ার আশায় তাকিয়ে থাকলে হবে না।

প্রশ্ন : পুরো অস্ট্রেলিয়া সিরিজ চলাকালে আপনাকে খুঁজেছি একটা প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য। আচ্ছা, ওয়ানডেতে হোম সিরিজেও তিন এমনকি চার পেসারও খেলে আপনার অধীনে। কিন্তু টেস্টে সেটা দুই থেকে একে-ও নেমে আসে, কারণটা কী?

মাশরাফি : ব্যাপারটা নিয়ে আমি, আমরা সিনিয়র ক্রিকেটাররাও কথা বলি। স্বীকার করতে দোষ নেই, এটা আমাদের অনেক বড় একটা ঘাটতি। আমাদের যে টেস্ট বোলার নেই, তা না। মুস্তাফিজ, তাসকিন, (কামরুল ইসলাম) রাব্বি, শুভাশীষ—অনেকে আছে। তার পরও মুশফিককে পুরোপুরি স্পিনারদের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। স্পিনাররা ভালো রেজাল্টও দিচ্ছে। পেসাররা পারবে না, তা আমি বিশ্বাস করি না। চট্টগ্রাম টেস্টের মাঝামাঝি সময়ে মুস্তাফিজের বোলিং কিন্তু সেটাই বলে। আমার মনে হয় পেসাররা একদিকে যেমন আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারেনি, তেমনি আমরাও ওদের সমর্থন দিতে পারিনি। আমি মনে করি, সাকিবের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওকে যেমন ছুটি দিয়েছে, তেমনি টেস্টের জন্য পেস বোলারদের ‘ব্যাক’ করবে বিসিবি। জেনুইন পেস বোলার ছাড়া টেস্টে আপনি বেশি দূর এগোতে পারবেন না। হাতের কাছে যারা আছে, তাদের দিয়েই বোলিং ইউনিট তৈরি করা সম্ভব, হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn