বৃহস্পতিবার সকালে একটি সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়ি থেকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাই হয়। ওই দিন বিকালেই ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা জানান ঢাকা মহানগর ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। উদ্ধার হওয়া চারটি ট্রাঙ্ক তুরাগ থানায় নিয়ে খোলার পর মিলে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। টাকার অঙ্ক নিয়ে ডিবি প্রধানের বক্তব্য ও তুরাগ থানা পুলিশের দুই রকম তথ্য নিয়ে তৈরি হয় রহস্য। গতকাল অবশ্য ভোল পাল্টান ডিবি কর্মকর্তা হারুন। তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে টাকা না গুনেই অনুমান করে টাকার অঙ্ক বলেছিলেন।
এদিকে ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও বাকি ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার হদিস পাওয়া যায়নি। লুট হওয়া বাকি টাকা কোথায় গেল। ৪৮ ঘণ্টায়ও ঘটনার কুলকিনারা হয়নি। গ্রেপ্তারও হয়নি জড়িত কেউ। এছাড়া গাড়িটিতে সিকিউরিটি গার্ড অস্ত্র ছাড়াই কেন এতগুলো টাকা বহন করছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মানি প্ল্যান্ট সিকিউরিটি কোম্পানির কর্মকর্তারা জড়িত কিনা সেটাও সন্দেহের চোখে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পুরো ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। ওদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্টের ভাইয়ের গাড়িচালকের কাছ থেকে মাইক্রোবাসটি ছিনিয়ে নিয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংকের টাকা লুট করে দুর্বৃত্তরা। ভাড়া নেয়ার নাম করে চালককে ডেকে নিয়ে মারধর করে হাত-পা বেঁধে গাড়ির পেছনেই ফেলে রাখা হয়। চক্রটি নতুন একটি সিমকার্ডও কিনেছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাইয়ের সময় ঘটনাস্থলে ৮-১০ জন সদস্য উপস্থিত ছিল। তাদের কয়েকজনের ব্যাপারে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া গেছে। শিগগির তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তদন্ত সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের এক সার্জেন্ট তাঁর ভাইয়ের মালিকানাধীন মাইক্রোবাসের দেখাশোনা করেন। সেটি একজন চালকের অধীনে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। ব্যাংকের টাকা লুটের আগের দিন সিলেটে যাওয়ার কথা বলে গাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়। ঘটনার দিন সকালে চালককে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যেতে বলা হয়। তিনি সেখানে গাড়ি নিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁকে মারধর করে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে তাঁকে বেঁধে গাড়িতে রেখেই ব্যাংকের টাকা লুট করে। পালানোর পথে তারা এক জায়গায় থেমে গাড়িতে তেল ভরে। পথের কোনো এক স্থানে তারা টাকা ভর্তি একটি ট্রাঙ্ক অন্য একটি গাড়িতে সরিয়ে নেয়।
সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন মাইক্রোবাসের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সার্জেন্ট ফোন করে চালককে পাচ্ছিলেন না। এতে তাঁর সন্দেহ হয়, চালক গাড়ি নিয়ে পালালেন কিনা। ফলে তিনি এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ তাঁর খোয়া যাওয়া গাড়ি ও চালককে খুঁজছিল। এর মধ্যে ছিনতাইয়ের সময় গাড়িতে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের দেওয়া তথ্য ও গাড়ির নম্বর অনুযায়ী, পুলিশ একটি সাদা রঙের গাড়ি শনাক্ত করে। তবে তারা সেটি দেখে জানায়, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত গাড়িটি ছিল কালো রঙের। প্রকৃতপক্ষে তাদের দেওয়া নম্বরপ্লেটের একটি অঙ্ক ছিল ভুল। এ পর্যায়ে তদন্তকারীরা লক্ষ্য করেন, পুলিশ সার্জেন্টের হারানো গাড়িটির রং কালো এবং নম্বরপ্লেটের একটি অঙ্ক শুধু আলাদা। তখন তারা বুঝতে পারেন, এই গাড়িটি ছিনতাইয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। চালকের কাছ থেকে এ ব্যাপারে বর্ণনাও পাওয়া যায়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ছিনতাইয়ে জড়িত চক্রটি পেশাদার অপরাধী বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা যে সিমকার্ড দিয়ে গাড়িচালককে কল করেছিল, সেটি সদ্য কেনা এবং মাত্র দুটি কল করা হয়। ছিনতাইয়ের পর কয়েকটি ভাগ করে বিভিন্ন স্থানে টাকা সরিয়ে ফেলা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে টাকা বহনের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান মানি প্লান্ট লিংক সিকিউরিটিজ কোম্পানির কোনো কর্মীর যোগসাজশ থাকতে পারে। জড়িতদের ধরতে গত রাতে ঢাকার বাইরে অভিযান চলছিল। এ ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় মামলা হয়েছে।
ডিবির এডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপর তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মানি প্লান্টের কয়েকজনকে এনেছিলেন। তারা মামলার আসামি নন। তাদের কাছ থেকে শুধু তথ্য নেওয়া হয়েছে। মূল ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মানি প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ৩টি ট্রাংক থেকে গত বৃহস্পতিবার ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি টাকার এখনো সন্ধান মিলেনি। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় মামলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করছে। আমাদের দুই গাড়িতে থাকা ৭/৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে মানি প্লান্টের একটি গাড়িতে সোয়া ১১ কোটি টাকা সাভার ইপিজেডে ডাচ্-বাংলার বুথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সকাল ৭টার দিকে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজ এলাকায় একটি মাইক্রোবাস দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে গাড়িটি থামানো হয়। পরক্ষণে সেই মাইক্রোবাস থেকে ১০-১২ জন নেমে টাকা বহন করা গাড়ির দরজা ভেঙে ফেলে। নিরাপত্তাকর্মীদের টানাহেঁচড়া শুরু করে, চড়-থাপ্পড় দেয়। অল্প সময়ের মধ্যেই টাকাভর্তি চারটি ট্রাঙ্ক লুট করে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। ওই দলের একজন নিজেকে ডিবির সদস্য বলে পরিচয় দেয়।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১২৭ বার