ডিজিটাল হুন্ডি প্রক্রিয়ায় কমছে প্রবাসী আয়
বাংলাদেশে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক। বাইরে থাকা বাংলাদেশিরা অর্থ পাঠাতে (রেমিট্যান্স) আবারও হুন্ডিতে ফিরে যাচ্ছেন। প্রক্রিয়াটি এবার ডিজিটাল। অর্থ পাঠাতে ও পেতে এখন আর ব্যাংকে লাইন দিতে হচ্ছে না। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিনিময় হার বেশি মিলার পাশাপাশি অর্থ পাঠানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই জমা হচ্ছে গ্রাহকের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে। এ ডিজিটাল হুন্ডি প্রক্রিয়ার কারণে প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে না। অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে প্রবাশে সেকেন্ড হোমের নিবন্ধন, বাড়ি, গাড়ি কেনাসহ নানা ধরনের কাজে। এছাড়া অর্থ পাচারকারীদের কাজ আরও সহজ করে দিয়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা । উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কমে গেছে ১৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক এসব হুন্ডি পদ্ধতি বন্ধ করতে কম খরচে দ্রুত পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করেছিল। ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা বেড়ে যায়। কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অবৈধ ব্যবহারের কারণে এখন আবার প্রবল প্রতাপে আবার ফিরে এসেছে সেই হুন্ডি ব্যবস্থা। ফলে লোকসানে পড়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধিদল গত মার্চ মাসে গিয়েছিল সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরব। তিন দেশে গিয়েই দলটি দেখেছে, বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘বিকাশ’-এর নামে রেমিট্যান্সের অর্থ গ্রহণ করা হচ্ছে। শুধু মোবাইল নম্বর দিয়েই টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে। ৫-১০ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশের বিকাশ হিসাবে ওই টাকা জমা হয়ে যাচ্ছে। কিছু এলাকায় ডাচ্-বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘রকেট’–এর নামেও এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন দেশে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক ও অনান্য এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। বর্তমানে ১৩ দেশে থাকা ৩৬ ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউসের বেশির ভাগই লোকসান করছে। লোকসানে পড়ে এরই মধ্যে ১০টি এক্সচেঞ্জ হাউস বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জানান, দুটি দল বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে। এসব দেশে বিকাশ, রকেটের নাম ব্যবহার করে টাকা জমা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পরিদর্শনে আরও কিছু বিষয় এসেছে। এজেন্টদের ওপর নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে অনেকেই এজেন্টদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করছে।
সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের শ্রমিকেরা প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, বিকাশ বৈধ না অবৈধ এসব বোঝার দরকার নেই। সহজে টাকা জমা দেওয়া যায়, বাড়িতে টাকা চলে যায়। টাকাও একটু বেশি মেলে। এসব কথা উল্লেখ করে প্রতিনিধিদলটি তাদের প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে। প্রবাসী আয় বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকায় বিকাশ বেশ কিছু এজেন্টের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। যদিও বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায়নি বিকাশ কর্তৃপক্ষ।
বিকাশের প্রধান নির্বাহী কামাল কাদির বলেন, ‘কোনো এজেন্টের অনুমোদন বাতিল করলে, আইন অনুযায়ী আমরা বলতে পারি না। তবে আমরা কাজ করছি, সবাইকে নিয়ম মেনে সেবা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নাম ব্যবহার করে যেন অবৈধ কাজ না হয়, এ জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রমতে, প্রতিনিধিদলের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে বেশ কিছু নির্দেশনা এবং মন্ত্রণালয়কে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে।