ডিসেম্বরের মধ্যে ফোর জি : তারানা হালিম
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল সেবা ফোর জি চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আজ বুধবার সচিবালয়ে ফোর জি সেবা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের টার্গেট হচ্ছে নভেম্বরের শেষের দিকে আমরা (ফোর জি তরঙ্গ) নিলাম সম্পন্ন করব এবং ডিসেম্বরের মধ্যে ফোর জি সুবিধা জনগণকে প্রদান করতে সক্ষম হব। এটি আমরা টার্গেট বলছি এ কারণে যে, এর মধ্যে কিছু ইকুইপমেন্ট আমদানির বিষয় আছে, সেটির উপর আমাদের হাত নেই। আমাদের টার্গেট মত আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করব ডিসেম্বরের মধ্যে।’ ২১০০ মেগাহার্টজে পাঁচটি, ১৮০০ মেগাহার্টজে চারটি ও ৯০০ মেগাহার্টজে দুটো ব্লকে নিলাম হবে। ফোর জি নিলামের মাধ্যমে সরকারের কমপক্ষে ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী।
তারানা হালিম বলেন, ‘আমরা (ফোর জি) ট্রায়াল রান করেছি। সকল অপারেটর ফোর জির জন্য প্রস্তুত। ফোর জির বিষয়ে সকলেই উৎসাহী। অপারেটররা গত ৬/৭ মাস ধরে যত ইকুইপন্ট এনেছেন ফোর জি ইকুইপমেন্ট আমদানি করেছেন। থ্রি জি’র চেয়ের ফোর জি’র দিকেই বেশি দৃষ্টি দিচ্ছেন।’ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নিলামে যদি আমাদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন ব্লক বিক্রি করা সম্ভব হয়, তাহলে সেই ক্ষেত্রে সরকার কমপক্ষে ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হবে। এটা শুধু তরঙ্গ নিলাম এবং টেকনোলজি নিরপেক্ষতার যে ফি আছে তা দিয়ে এ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তরঙ্গ নিলাম গাইডলাইন, সেই সঙ্গে ফোর জি লাইসেন্সিং গাইডলাইন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। সরকারের এই অনুমোদনের পর গাইডলাইন অনুযায়ী ২১০০ মেগাহার্টজ, ১৮০০ মেগাহার্টজ এবং ৯০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলাম হবে। এই নিলামকে যে অপারেটররা আছেন তারা অংশ নিতে পারবেন এবং প্রাক মূল্যায়নে উত্তীর্ণ নতুন প্রতিষ্ঠান ২১০০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে পারবেন। উক্ত ব্যান্ডে বিজয়ী হলে পরবর্তী সময়ে তারা ১৮০০ ও ৯০০ মেগাহার্টজের তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে পারবেন।’ নতুন গাইডলাইনে কিছু নতুনত্বও রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর ইউনিক ফিচারটি হচ্ছে তরঙ্গ নিলামের মাধ্যমে বরাদ্দ করা সব তরঙ্গ টেকনোলজি নিউট্রাল হবে, অর্থাৎ ওই তরঙ্গে টু-জি, থ্রি-জি এবং ফোর-জি এলটি সেবা দেয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে।’
মোবাইল অপারেটরদের আগে বরাদ্দ দেয়া তরঙ্গ টেকনোলজি নিউট্রালিটিতে রূপান্তর করতে হবে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন, ‘অনেক সময় বলা হয় থ্রিজি রোল আউট (পরিকল্পনা বাস্তবায়ন) সম্পূর্ণ হয়নি। এ জন্য ফোর-জি গাইডলাইনে সুনির্দিষ্টভাবে রোল আউট প্ল্যানও (ফোর জি সেবা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা) রেখেছি, যেন ধীরে ধীরে কখন কোন সময়ে ফোর-জি সেবাটি বিস্তৃত করতে হবে।’ ‘আমাদের প্রথম পর্যায়ে আছে লাইসেন্স প্রাপ্তির ৯ মাসের মধ্যে সব বিভাগীয় হেড কোয়ার্টারে সেবা দিতে হবে। নতুন অপারেটর এলে তাদের জন্য এই সময় হবে ১৫ মাস। দ্বিতীয় পর্যায়ে লাইসেন্স প্রাপ্তির ১৮ মাসের মধ্য ৩০ শতাংশ জেলা হেড কোয়ার্টারে সেবা দিতে হবে। নতুন অপারেটরের ক্ষেত্রে এ সময় হবে ২৪ মাস। তৃতীয় ফেইজে লাইসেন্স প্রাপ্তির ৩৬ মাসের মধ্যে সারাদেশে এই সেবা দিতে হবে। নতুন অপারেটরের ক্ষেত্রেও এই সময় রাখা হয়েছে।’ -জানান তারানা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন দেখা শুরু করলাম আমরা অনেক ক্ষেত্রে কেন মান সম্মত সেবা দিতে পারছি না। কেন কলড্রপ হচ্ছে। তখন অপারেটররা আমাদের জানালেন তাদের পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম (তরঙ্গ) নেই। ২০১৩ সালে স্পেমট্রাম অকশনের সময় অপারেটররা স্পেকট্রাম নেননি। তাই আমি মনে করি এই স্পেকট্রাম অকশনের মধ্য দিয়ে শুধু ফোর-জি সেবা জনগণের কাছে পৌঁছাবে সেটিই নয়, সেবার মানও উন্নত হবে।’ ফোর-জির প্রস্তাবিত গাইডলাইন নিয়ে অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলার পর কিছু সংশোধন আনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৮০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের ক্ষেত্রে প্রতি মেগাহার্টজের ভিত্তিমূল্য ছিল ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখান থেকে পরিবর্তন করে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার করা হয়। এক্ষেত্রে বর্তমান স্পেকট্রাম থেকে টেকনোলজি নিউট্রালিটি স্পেকট্রাম কনভার্সনের (রূপান্তর) জন্য প্রতি মেগাহার্টজের দাম ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে।’
‘৯০০ মেগাহার্জের স্পেকট্রামের ক্ষেত্রে বর্তমান স্পেকট্রাম থেকে টেকনোলজি নিউট্রালিটি স্পেকট্রাম কনভার্সনের জন্য প্রতি মেগাহার্টজের ফি ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু পরিবর্তন করেছি, যেগুলো অনুমোদন হয়েছে। আবেদন করার যোগ্যতার ক্ষেত্রে অপারেটরদের বিদেশি অংশীদারকে বাংলাদেশ থেকে কোনো ঋণ না নিয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগের বিধানটি বাদ দিয়েছি, তারা বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।’
লাইসেন্স অ্যাকুইজেশন ফি ১৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। বার্ষিক লাইসেন্স ফি ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। গ্রস রেভিনিউ শেয়ারিং ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমিত ৫ শতাংশ করা হয়েছে বলেও জানান টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। তারানা হালিম বলেন, ‘পারফরমেন্স ব্যাংক গ্যারান্টির ক্ষেত্রে চারটি ব্যাংক গ্যারান্টির পরিবর্তে থ্রিজি লাইসেন্সিং গাইডলাইনের মতো তিনটি ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান এবং রোল আউট ঠিক মতো করেছেন সেই সাপেক্ষে অবমুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। রোল আউট বাধ্যবাধকতায় থ্রিজি লাইসেন্সের মতই করা হয়েছে। কল রেকর্ডের ক্ষেত্রেও আমারা তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। অন্যান্য ক্ষেত্রে সে রকম কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, যেমন ছিল মোটামুটি তেমনই রাখা হয়েছে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত কাজ করতে অঙ্গিকারবদ্ধ। দিনক্ষণ ওইভাবে ঠিক না করলেও মাস হিসেবে কিছুটা গণনা করেছি। অকশন শেষ করতে মোটামুটি ৪২ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগবে। তারপর ৩০ দিনের সময়ের একটা বাধ্যবাধকতা আছে। আশা করি ৭৫ দিনের মধ্যে তরঙ্গ নিলাম সম্পন্ন করতে পারব। সেই সঙ্গে লাইসেন্স দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হাতে আরও ৩০ দিন সময় রেখে দিয়েছি।’
থ্রি-জি বাস্তবায়নে শর্ত অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে, ফোর-জির ক্ষেত্রে এমনটা হবে কি না? -জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘থ্রি-জি রোল আউট অবলিগেশনটা ছিল। এক্ষেত্রে এটা রিপিটেশন হবে না। কারণ খুব কঠোরভাবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা মনিটর করব। বিটিআরসি অপারেটরদের কাছ থেকে রিপোর্ট নেবে। যে টার্গেট আছে তার মধ্যে তা সম্পন্ন করল কিনা সেই প্রতিবেদন বিটিআরসির কাছে জমা দিতে হবে। সেই প্রতিবেদন বিটিআরসি মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। মনিটরিংটা আমরা কঠোরভাবে পালন করব।’ নতুন কোনো অপারেটর আসছে কি না- জানতে চাইলে তারানা হালিম বলেন, ‘নতুন কোনো অপারেটর এসেছে বা আসতে আগ্রহী এমন নয়। কিন্তু আমরা ওপেন রেখেছি। যাদের অতীত ইতিহাস ভালো নয়, যারা বিভিন্ন সময়ে ডিফল্টার হয়েছে, তারা যদি নতুন মোড়কে আসতে চান। আমরা অবশ্যই সেই বিষয়ে সতর্ক থাকব।’ সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার উপস্থিত ছিলেন।