ডুবছে হাওর পুড়ছে কপাল দোয়ারাজারের কৃষকদের
মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী-
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি হাওর। হাওর ডুবছে আর কপাল পুড়ছে এ উপজেলার কৃষকদের। শনিবার (০১ এপ্রিল) উজানের পানির স্রোতে উপজেলার বোগুলা বাজারের নিকটবর্তী চিলাই নদীর নবনির্মিত রাবার ড্যাম প্রকল্পের উজানে তিন স্থানে ও ভাটিতে তিন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে ফসলি জমিতে। এছাড়া বাংলাবাজার-বোগুলাবাজার সড়কের চিলাই নদীর ভোলাখালি ব্রিজের নিকটে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে দুই ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সরেজমিন বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে- হাওরে ঢলের পানিতে ডুবন্ত সোনালী ফসলহানির শঙ্কায় কৃষকরা এখন আহাজারি করছে। কিছু কিছু হাওরে ডুবন্ত আধাপাকা ২৮ বোরো ফসল কেটে নৌকা বোঝাই করতে দেখা গেছে।
উপজেলায় ১১টি হাওরের মধ্যে ইতোমধ্যে নাইন্দার হাওর, কাংলার হাওর, দেখার হাওর, বড়জাই, গোজাউড়া বন্দসহ বেশ কয়েকটি হাওর তলিয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে হুমকির মুখে রয়েছে পুরাধুওয়া, কনছখাই, চওলার হাওর, গুপ্ত মানিক, মাইল্লার হাওর, শান্তিপুরসহ বন্দেহরি, বাগাম, নৈনগাঁও ছোট ছোট সব ক’টি হাওর ও বিল। গত ১৫ মার্চ থেকে অব্যাহত ভারীবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যা ও কৃত্রিম জলাবদ্ধতার কারণে নিমাঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন জনবসতির লোকজনও। জলাবদ্ধতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে কৃষকদের চাষাবাদকৃত ফসলি জমি ও শাকসবজি। বৃষ্টিপাত না-কমলে উপজেলায় ফসলহানি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে- চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৬শ’ ৮০ হেক্টর। গত কয়েকদিনের পানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর বোরো ফসলসহ শাক সবজি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এনামুল হক জানিয়েছেন- শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বর্ষণ অব্যাহত থাকলে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বোরো ফসল পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার জানিয়েছেন- কাংলার হাওর, কনছখাই হাওরে ঢলের পানি ঢুকে ইতোমধ্যে বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এছাড়া খাসিয়া মারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন জায়গা দিয়ে পানি ঢুকছে ফসলি জমিতে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে কৃষকদের কপাল পুড়বে। লক্ষ্মীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমীরুল হক বলেছেন- শনিবার ভোর থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। কাংলার হাওর, কণছখাই হাওর সহ বেতুরা, নোয়াগাঁও, হইলের গোঁফ বিলসমূহ ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীরপ্রতিক জানিয়েছেন- কনছখাই আংশিক ও দেখার হাওরের পান্ডারগাঁও অংশ ব্যতিত উপজেলার সবক’টি হাওরে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। শনিবার সকাল থেকে স্থানীয় কৃষকসহ প্রশাসনিক তদারকিতে পানি আটকানোর জন্য কাজ করা হচ্ছে। বর্ষণ অ্যাহত থাকলে এবং ঢলের পানি না-কমলে ভয়াবহ ক্ষতি হবে সোনালী বোরো ফসলের।তিনি আরো জানান- আমার জীবনে চৈত্র মাসে অকাল বন্যা ও এতা ভারীবর্ষণ কখনোই দেখিনি। সবই প্রাকৃতিক দুর্যোগ।