ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় তাহিরপুরে ১৩ মেশিন ধবংস
গতকাল বহস্পতিবার সকাল ১১টায় তাহিরপুর উপজেলার লাউড়্রগেড় এলাকায় কোয়ারীতে বোমা ও ড্রেজার মেশিণ চলছে এমন খবরে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চলে। ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তাহিরপুর উপজেলা ভূমি কমিশনার(এসিল্যান্ড) মনতাসির হাসানের নেতৃত্বে তাহিরপুর থানা পুলিশের সদস্যরা লাউড়েরগড় কোয়ারী এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে ১৩টি বোমা ও ড্রেজান মেশিন ভেঙ্গে ঘুরিয়ে দেয়া হয় এবং ত্রিশহাজার টাকা আর্থিক জরিমানাও আদায় করা হয়। এ সময় অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনকারী প্রভাবশালী চক্রের হোতারা ও কর্মরত শ্রমিকদের পালাতে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলে স্থানীয় জনসাধারনের মনে একটু শান্তি ফিরে আসে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাহিরপুর থানার এস আই দিপংঙ্কসহ পুলিশ সদস্যরা।
স্থানীয় ভুক্তভোগী লোকজনের অভিযোগ জেলা প্রশাসনের নির্দেশ থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আতাত করে সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করছে । এদিকে প্রশাসন দিনে অভিযান পরিচালনা করলেও ঐ চক্রটি কৌশল বদল করে দিনের পরিবর্তে রাতেই ড্রেজার ও বোমা মেশিন লাগিয়ে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে বেশ কয়েক লাখ টাকার বালু ও পাথর। । নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান এভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে স্থায়ীভাবে বন্ধ হবে না পরিবেশ ধবংসকারী বোমা ও ড্রেজার মেশিনের উৎপাত। তাই এই চির সবুজের সৌন্দর্য্যের অপার লীলাভূমি রুপের রানী যাদুকাটাকে বাচাঁতে সরকারের দায়িত্বশীলদের পাশাপাশি প্রশাসনের উধর্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান।
এদিকে বিকেলে তাহিরপুরের ফাজিলপুর এলাকার আনোয়ারপুর ব্রীজের উজান দিকে রয়েলিটি পরিশোধ করে রয়েলিটি ঘাট থেকে জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়নের লম্বাবাক গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে মোঃ মন্নান মিয়া তার ৬ হাজার ফুটের ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন বালু বোঝাই করে এই মালামাল নিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্তি যাওয়ার প্রস্তুতিকালে রয়েলিটি ঘাটে আসামাত্র ফাজিলপুরের ইজারাদার বালিজুরী ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামের রাজাহাসের ছেলে মোঃ কাশেম মিয়ার লোকজন । ঐ বলগেট বালু বোঝাই নৌকাটি আটক করে ৩ হাজার টাকা ঢোল বাবত নির্ধারিত ৩ শত টাকার পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা চাদাঁ দাবী করেন। এই বলগেট মালিক এত টাকা চাদাঁ দিতে অস্বীকৃতি জানানে কাশেম মিয়ার নেতৃত্বে ১০/১২ জন মিলে তাকে ৩ হাজার টাকা দিতে চাপ প্রয়োগ করে। তা না হলে নৌকা আটক রেখে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার হুমকি দিলে তিনি প্রাণের ভয়ে এক হাজার টাকা চাদা দিয়ে মুক্তি নেন বলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের জানান।
এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রুপের রানী যাদুকাটার বালুচর এলাকার লাউড়েরগড়, বিন্নাকুলি, ডলারপাড়, ঘাগটিয়া, পশ্চিম গড়কাটি, বিন্নাকুলির পূর্বপাড়,মিয়ারচর থেকে পাঠানপাড়া এলাকায় চলছে বোমা ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলনের কাজ এপাশপাশি ঐ চক্রটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের ফলে বশে কয়েকটি গ্রামের ৫০ হাজার লোকজন তাদের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আতংঙ্কে রয়েছেন। পাশপাশি বারু উত্তোলনের মহোৎসবে নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুকিতে রয়েছে মসজিদ,মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অন্যদিকে কোটি কোটি টাকার পাড় কেটে বালু মাটি বিক্রি করছে ঐ সমস্ত চাদাঁবাজ চক্রটি। এভাবে যদি সরকারী জায়গা থেকে অবৈধভাবে ক্ষমতার জোরে এই যাদুকাটা নদীর লাউড়েরগড় সহকয়েকটি স্পটে বালু ও পাথর উত্তোলন চলতে থাকে তাহলে এই অঞ্চলের ঐহিত্যবাহি অপার সম্ভাবনার সেই রুপের রানী যাদুকাটা তার গৌরব উজ্জল রুপ হারাতে বসবে। ফলে এই রুপের রানী যাদুকাটায় কোনদিন আসবে দেশী বিদেশী পর্যটক। এই অপতৎপরতা দ্রুত বন্ধ করতে না পারলে খুব সহসাই এই যাদুকাটায় ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যাবে।
ভারসাম্য হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহি লাখো মানুষের পর্যটন কেন্দ্র ও হিন্দু ধর্মালম্বীদের শতশত বছরের শ্রী শ্রী অদৈত্য মহাপভুর মন্দিরসহ লাখো বক্ত বৃন্দের স্নানকেন্দ্র পনাতীর্থ স্থানটি। যেখানে চোখ জোড়ানো লাখো লাখো ভক্তবৃন্দদের সমাগম হয় প্রতি বছর। কালের আবর্তে এবং ঐ সমস্ত প্রভাবশালী চক্রধারা প্রতি বছর বারকি শ্রমিকদের কর্মস্থল বন্ধ করে দানবের ন্যায় অবৈধ মেশিন দিয়ে তুলা হচ্ছে বালু পাথর। শ্রমিকদের কর্মস্থলের ভাগ্যের বারটা বাজিয়ে নদীতে চলছে চাদা আদায়সহ পাড়কাটার মহোৎসব। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয়দের কাছ থেকে জানাযায় এসব চলছে স্থানীয় লাউড়েরগড় গ্রামের প্রভাবশালী চক্রের হোতা সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহজাহান মিয়া মোদেরগাও গ্রামের রিপন মিয়া,ফাজিলপুরের কাশেম মিয়া, রব্বানী মিয়া, বাক্কী, বাবুল মিয়া, রুয়েল মিয়া, সোহাগ, দর মিয়া, রুবেল মিয়া,রতন মিয়া, হাদিস মিয়া, সুমন,জামাল মিয়া,আবু মিয়া, নাছির উদ্দিন, আলী আকবর টাইগারসহ২০/২৫ জনের একটি সিন্ডিকেট চক্র ।
এ ব্যাপারে ফাজিলপুরের ঢোল আদায়কারী কাশেম মিয়ার সাথে সরকারের নির্ধারিত প্রতি বলগেট হতে তিন শতাধিক টাকার পরিবর্তে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা করে চাঁদা নেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন আমরা চলতি বছর অনেক টাকা দিয়ে ফাজিলুপুর ঘাটটি লীজ এনেছি। কাজেই যে টাকাগুলো আমাদের খরচ হয়েছে সে টাকাগুলো তুলতে প্রশাসনের নির্ধারিত টাকার চেয়ে একটু বেশী টাকা নৌকার মালিকদের নিকট হতে তুলা হচ্ছে। তবে তিনহাজার টাকা চাঁদা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও তাহিরপুর উপজেলা ভূমি কমিশনার(এসিল্যান্ড) মনতাসির হাসান মোবাইল কোর্টের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান আজকের পর থেকে এই তহিরপুর যাদুকাটা নদীতে কেহ অবৈধভাবে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলনের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ও জানান।