তনু হত্যাকাণ্ড: বিশ মাসেও তদন্তের অগ্রগতি নেই
বহুল আলোচিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ২০ মাস পেরিয়ে গেছে সোমবার। দীর্ঘ এ সময়ে এ মামলার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় তনুর পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা এদিকে তনু হত্যায় সন্দেহভাজন হিসেবে যে তিনজনের নাম সিআইডিকে বলেছিলেন তার মা তাদেরকে গত ২৮ অক্টোবর থেকে টানা তিনদিন সিআইডির একটি দল জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত সিআইডির সূত্র থেকে জানা গেছে। গত বছরের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতর পাওয়ার হাউস এলাকায় কালভার্টের পাশের একটি জঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। স্পর্শকাতর এলাকায় কারা, কী কারণে তনুকে খুন করেছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। থানা-পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হাত ঘুরে হত্যা মামলাটি এখন তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জালাল উদ্দীন বলেন, তনুর মা তার মেয়ের হত্যাকারী বলে যাদের সন্দেহ করছেন, তাদের প্রত্যেককে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমরা নিখুঁতভাবে তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। হত্যায় কতজন অংশ নিয়েছে, তা জানা গেছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সেটা বের করার জন্য আরও কিছু সময় প্রয়োজন।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, কুমিল্লা সেনানিবাসের তত্কালীন সার্জেন্ট জাহিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সিআইডি তাদের জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সার্জেন্ট জাহিদ ছাড়াও তার স্ত্রী, সিপাহি জাহিদ ও সার্জেন্ট তাজুলকেও তিনি সন্দেহ করেন। ঘটনার দিন তার মেয়ে তনু ছাত্র পড়ানোর জন্য জাহিদের বাসায় গিয়েছিলেন। খুন হওয়ার মাস তিনেক আগে জাহিদের বাসায় টিউশনি নিয়েছিলেন তনু। ওই বাসায় সিপাহি জাহিদ ও সার্জেন্ট তাজুলেরও যাতায়াত ছিল। আনোয়ারা বেগমের ধারণা তনুকে ওই বাসাতেই হত্যা করে পরে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে যায় হত্যাকারীরা। এর আগে গত বছরের ১০ মে আনোয়ারা বেগম কুমিল্লায় প্রথমে সাংবাদিকদের, তারপর সিআইডির কর্মকর্তাদের বলেছিলেন- সার্জেন্ট জাহিদ ও সিপাহি জাহিদ তনুকে ডেকে নিয়ে যান। এরপর আর সে ফিরে আসেননি। ওই দুইজন এ হত্যায় জড়িত বলে তিনি সন্দেহ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে পরীক্ষা করে তনুর ব্যবহূত কাপড় থেকে পৃথক তিন ব্যক্তির শুক্রাণুর(বীর্য) উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে মৃত্যুর আগে তনু ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এর উল্লেখ ছিল না। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, তনুর লম্বা চুল ছিল। কিন্তু মৃত্যুর আগে তার চুল ছেটে ফেলা হয়। যারা ধর্ষণ করেছে তারাই তনুর চুল কেটেছেন বলে মনে হয় না। এ ঘটনায় কোনো নারীর সম্পৃক্ততাও থাকতে পারে। জানতে চাইলে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এ সম্পর্কে বলার সময় এখনো হয়নি। বিষয়টি তদন্তাধীন।