৮ মার্চ ২০০৭। বেগম জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হলো। এসময় চলল সমঝোতা নাটক। ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত সরকার বেগম জিয়াকে প্রস্তাব দিলেন, তিনি (বেগম জিয়া) যদি স্বেচ্ছায় দেশত্যাগ করতে চান এবং এই মর্মে মুচলেকা দেন যে, আর রাজনীতি করবেন না, তাহলে তাঁকে এবং তাঁর দুই ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। বেগম জিয়া তাঁর বড় ছেলের মতামত নিতে বললেন। সেনা সদস্যরা কথা বললেন বন্দী তারেক জিয়ার সঙ্গে। তারেক রাজি হলেন। কোথায় যেতে চান, জানতে চাওয়া হলে তারেক জিয়া বললেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র’। সেনা সদস্যরা বেগম জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। সেনা সমর্থিত সরকারের শর্ত হলো দু’জন (বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়া) এক সঙ্গে একই দেশে যেতে পারবেন না। বেগম জিয়াও রাজি হলেন এই শর্তে।
এরমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ঘোষণা দিলেন ‘বাংলাদেশে আমার জন্ম, মৃত্যুও হবে এদেশে’। শেখ হাসিনা অনড় অবস্থান নিলেন, দেশত্যাগ না করার ব্যাপারে। বেগম জিয়া এতে কিছুটা মনোবল পেলেন। তিনিও বেঁকে বসলেন। সেনাসমর্থিত সরকার জানতো বেগম জিয়ার দুর্বলতা কী? ১৬ এপ্রিল তাঁরা গ্রেপ্তার করল বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে। এবার সত্যি সত্যি ভেঙ্গে পড়লেন বেগম জিয়া। তিনি রাজি হলেন। ঠিক হলো, বেগম জিয়া প্রথমে যাবেন সৌদি আরব, তারপর তারেক জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে পাঠানো হবে যুক্তরাষ্ট্রে। সৌদি সরকার জানিয়ে দিলো, তাঁদের আপত্তি নেই। ১৭ এপ্রিল বেগম জিয়ার পাসপোর্ট জমা দেওয়া হলো সৌদি দূতাবাসে। ভিসাও হলো চট জলদি। বিকাল নাগাদ বেগম জিয়ার ১৬ স্যুটকেস পৌঁছে গেলো বিমান বন্দরে। কিন্তু সব ওলট পালট হয়ে গেল মার্কিন দূতাবাসের এক ফোনে।
মার্কিন দূতাবাস থেকে ১৭ এপ্রিল বিকেল ৪ টায় ফোন করা হলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। বলা হলো. রাষ্ট্রদূত জরুরি ভিত্তিতে কথা বলতে চান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে। বললেন, ‘ভেরি আর্জেন্ট।’ এক ঘণ্টার মধ্যেই সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হলো। মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানালেন ‘তারেক জিয়াকে মার্কিন ভিসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এফবিআই তাঁর ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূত একটি গোপন প্রতিবেদন উপদেষ্টাকে দিয়ে বিদায় নিলেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাপারটা প্রধান উপদেষ্টাকে জানালেন। প্রধান উপদেষ্টা জানালেন সেনা প্রধানকে। বেগম জিয়ার যাওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এর মধ্যেই সামরিক গোয়েন্দার দুই কর্মকর্তা এলেন দেখা করতে।
তারা বেগম জিয়াকে জানালেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তারেককে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বেগম জিয়া ক্ষেপে গেলেন। জানালেন, তাঁর ছেলেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না হলে তিনি কোথাও যাবেন না। বেগম জিয়া থেকে গেলেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন তারেক জিয়াকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল এফবিআই? জানা যায়, এফবিআই, তাদের প্রতিবেদনে তারেককে সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিদের মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। এফবিআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী চার দলের অন্যতম সংগঠন ইসলামী ঐক্যজোট একটি জঙ্গি সংগঠন এবং তারেক জিয়া এই সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষক। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিম এবং উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার সঙ্গে তারেক জিয়ার ঘনিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে সে সময় বাংলাদেশের ১২৫ টি ইসলামি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছিল, যার সবগুলোর সঙ্গেই তারেকের যোগাযোগ আছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এফবিআই, রিপোর্টে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানে তারেকের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। তবে ওই রিপোর্টের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ছিল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা বিষয়ে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাই প্রথম ২১ আগস্ট ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলাকে তারেকের ব্লুপ্রিন্ট এবং জঙ্গিদের অংশগ্রহণ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn