তাহিরপুরে’র কিছু সংবাদ
পুলিশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
তাহিরপুরে থানা পুলিশ হেফাজতে এক কয়লা ব্যবসায়ীকে আটক করে অমানুষিক ভাবে শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তাহিরপুর থানায় কর্তব্যরত এস আই তপন কুমার দাস ও ট্যকারেঘাট পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এ এস আই পিযুষ কান্তি দাসের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার বিকাল ৪টায় তাহিরপুর জাগ্রত জনতার আয়োজনে উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের কলাগাঁও বাজারে এই দুই এসআই এর অপসারনের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়েছে। মানবন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন,কলাগাঁও গ্রামের যুবলীগ নেতা ইকবাল হোসেন সেলিম, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জাবির আহমেদ জাবেদ,জাহাঙ্গীর আলম,সোহেল আহমদ,সুনামগঞ্জ সদর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি সুহেল আহমদ বিপ্লব বাবু,সাধারন সম্পাদক আকসার ইবনে আজিজ পাঠান প্রমূখ। মানববন্ধন চলাকালে বক্তারা বলেন, কলাগাঁও গ্রামের মুরশেদ আলম সাদ্দাম নামের এক ব্যবসায়ীর লেনদেনের চেক সংক্রান্ত একটি মামলায় তাহিরপুর থানায় একটি ওয়ারেন্ট ছিল। এর প্রেক্ষিতে গত সোমবার তাহিরপুর থানার অধীনে টেকেরঘাট পুলিশ ফাড়ির এস আই তপন দাস ও এ এস আই পিযুষ কান্তি দাস সঙ্গীয় এক কন¯েটবল ইসমাইল তাকে ওয়ারেন্টের আসামী দেখিয়ে আটক করে পুলিশ ফাড়ির ভিতরে নিয়ে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করে। নির্যাতনের সময় মুরশেদ আলম সাদ্দামের কান্নার ধ্বনি মোবাইলের মাধ্যমে মামলার বাদীকে ওই পুলিশ কর্মকর্তারা শুনাচ্ছিল। মুরশেদ আলম সাদ্দাম ওই মামলায় পরদিন মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে জামিন পান। বক্তারা তাহিরপুর থানার এসআই তপন দাস ও এ এস আই পিযুষ কান্তি দাস সহ সঙ্গীয় কন¯েটবল ইসমাইলকে তাদের দায়িত্ব থেকে অপসারন করে বিভাগীয় শাস্তির দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ৩ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নন্দন কান্তি ধরের নির্দেশে,এসআই তপন,এএসআই পীযুষ ও কন্সস্টেবল ইসমাইল কর্তৃক কয়লা ব্যবসায়ী মোর্শেদ আলম সাদ্দামকে বেদম মারপিঠক্রমে গুরুতর আহত করার অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় শহরের কাজীর পয়েন্টস্থিত কুটুমবাড়ী রেস্টুরেন্টে নির্যাতনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের কলাগাঁও গ্রামের হাবিবুর রহমানের পুত্র কয়লা ব্যবসায়ী ও যুবলীগ নেতা মোর্শেদ আলম সাদ্দাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বিচারাধীন ১৯৭/২০১৭ নং মামলায় একটি নির্ধারিত তারিখের হাজিরা মিস হওয়ায় আমার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত হতে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয়। তৎপ্রেক্ষিতে এএসআই পীযুষ ও কন্সস্টেবল ইসমাইল গত ৮ মে সোমবার সকাল সাড়ে ৯ টায় কলাগাও বাজার জামে মসজিদের সামনে থেকে বাজার বনিক সমিতির সেক্রেটারী আজাহার বাশার, ছাত্রলীগ নেতা সোহেল আহমদ বিপ্লব (বাবু),সোহেল মিয়া,ব্যাবসায়ী বিল্লাল মিয়া ও ব্যাবসায়ী বিপ্লব পালসহ স্থানীয় লোকজনের সামনে আমাকে গ্রেফতার করেন। এসময় আমার ভাতিজা সোহেল আহমদ বিপ্লব (বাবু) আমাকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারের কারণ জেনে,নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে আমাকে যথাসময়ে আদালতে প্রেরনের জন্য অনুরোধ করে। এতে উত্তেজিত হয়ে গ্রেফতারকারীরা টেকেরঘাট পুলিশ ফাড়িতে নিয়ে গ্রীলের সাথে আমার বাম হাত হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় ঝুলিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে এসআই তপন হাতে পুলিশের ব্যবহৃত বেতের লাঠি নিয়া “ছাত্রলীগের মারে …” বলিয়া আমার পিটে ও দুই উরুতে ১০ মিনিট সময় নিয়া প্রায় ২৫টি বারী মারিয়া মারাত্মক ফোলা ও বেদনাদায়ক জখম করেন। দ্বিতীয় দফায় এএসআই পীযুষ,তৃতীয় দফায় কন্সস্টেবল ইসমাইল অনুরুপভাবে একই লাঠি দ্বারা আমাকে বেদম মারপিঠ করত: আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ফোলা জখম করেন। রাত এশার নামাজের সময় এসআই তপন আমাকে নিয়া তাহিরপুর থানা হাজতে আটক রাখেন। ওসি দম্ভোক্তি প্রকাশ করে বলেন,“এই শ্যালার পুতরে ফোলা জখম শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোর্টে চালান দেয়া ঠিক হবেনা। সুযোগ পাইলেই শ্যালার পুত মামলা কইর্যা দিবো” বলে আমাকে আদালতে না পাটিয়ে ইচ্ছেকৃতভাবে রাত্রে থানা হাজতে আটকে রাখেন। আমি অনুনয় বিনয় করার পরও তারা আমাকে প্রথম দিন আদালতে প্রেরন করেননি। পরে ওসি সাহেব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘটনার কথা জানিয়ে একজন ডাক্তারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ আনিয়ে এসআই তপনের দ্বারা আমার পিঠে মলম লাগান এবং আমাকে টেবলেট খাওয়ান। উক্ত ব্যবস্থাপত্রটি বিজ্ঞ আদালতে সংশ্লিষ্ট মামলার নথীতে রয়েছে। পরদিন ৯ মে মঙ্গলবার দুপুর অনুমান ১২ টার সময় ২জন পুলিশ কন্সস্টেবল দ্বারা আমাকে সুনামগঞ্জ কোর্টে চালান করেন। বিকেল অনুমাণ দেড়টায় আমি কোর্ট হাজতে পৌছি। গ্রেফতার করার পর থেকে তাহিরপুর থানা পর্যন্ত মোট ২৭ ঘন্টা এবং আদালতে পৌছানো পর্যন্ত ২৮ ঘন্টা সময় আমি তাহিরপুর থানা পুলিশের হেফাজতে নির্যাতিত ছিলাম। বিকেল আড়াইটায় বিজ্ঞ আদালত হতে আমি জামিন পাই। আমার আইনজীবী এডভোকেট ফজর আলী এবং বিজ্ঞ আদালতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন আমার শরীরের জখমের ক্ষতচিহ্ন মোবাইল ফোনে ভিডিও করে রাখেন।
পরে আমার উপর পুলিশী জুলুম ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ১০ মে বুধবার বিকেল ৪টায় কলাগাঁও বাজারে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। অস্ত্র ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এসআই তপন তার বিরুদ্ধে স্থানীয় কলাগাঁও বাজারে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসুচি বানচালের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে যথারীতি প্রতিবাদ মিছিল ও মানবন্ধন অনুষ্টিত হয়। মানববন্ধনে পর্দার আড়ালে থাকা গডফাদার ও প্রতিভূ থানার দালাল চক্রের স্বার্থে খুন করার অসদুদ্দেশ্যে তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নন্দন কান্তি ধরের নির্দেশে,এসআই তপন,এএসআই পীযুষ ও কন্সস্টেবল ইসমাইল কর্তৃক আমার উপর দফায় দফায় বর্বরোচিত মারপিঠসহ নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এর আগে ১০ মে বুধবার সকাল ১০টা ৫৯ মিনিটে এসআই তপন তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ০১৭১২-৪৭৪১৫৬ নং হতে আমার মোবাইল ফোন ০১৭১১-০৪০৫২৯ নম্বরে কল করে “আমি এএসআই পিযুশ ও কন্সষ্টেবল ইসমাইলকে বদলী করে দিয়েছি তুমি মন থেকে সব বাদ দাও” বলে আমার কাছে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। অন্যদিকে জামিন লাভের পর আমি ১১ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহন করি। কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে সিলেটে গিয়ে অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
এমতাবস্থায় আমার নিবেদন,যেহেতু সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্রী নন্দন কান্তি ধর,এসআই তপন,এএসআই পীযুষ ও কন্সস্টেবল ইসমাইল সেবার পরিবর্তে সন্ত্রাস করেছেন এমনকি আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে বেদম মারপিঠক্রমে গুরুতর আহত করার পাশাপাশি ২৮ ঘন্টা থানাপুলিশের হেফাজতে আটক রেখে আমাকে যথাসময়ে আদালতে হাজির করেননি এবং ১১ মে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত কলাগাঁও বাজারে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আওয়ামীলীগ নেতা মনাফ মোড়ল,আনিছ ভূইয়া ও সিরাজ খন্দকারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে মারপিঠের ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করে নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা অব্যাহত রেখেছেন,সেহেতু প্রকাশ্য দিবালোকে অপরাধ সংগঠনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ কামরুল আহসান বলেন,পুলিশ আইনের উর্ধে নয়,পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন আছে। আইন অনুযায়ীই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা পুলিশ সুপার মোঃ বরকতুল্লাহ খান বলেন, আসামী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত তাহিরপুর থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য তাহিরপুর থানায় পুলিশ কর্তৃক আসামী নির্যাতন কোন নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও গত ২০০৩ইং সনে অনুরুপভাবে ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুজ্জামান শিপলু হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে ওসি শরীফ উদ্দিন ও এসআই সুজনসহ ৪ পুলিশ সদস্য দীর্ঘদিন কারাভোগ ও চাকরীচ্যুত হন।