সাজ্জাদ হোসেন শাহ্-

হাওর বেষ্টিত ভাটির জনপদ খ্যাত তাহিরপুর উপজেলায় গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে উপজেলার সীমান্ত নদী যাদুকাটা, মাহারাম, রক্তি, বৌলাই নদীর পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। উপজেলার বালিজুরী, বাদাঘাট, তাহিরপুর সদর, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর বড়দল, দক্ষিণ বড়দল ৭টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামের ৫০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

উপজেলার ৭ ইউনিয়নের গ্রামীণ ছোট ছোট রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভার্ট  ভাঙাসহ কিছু কিছু বাড়ী-ঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ৭ ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা রয়েছে প্রায় বন্ধ। সেই সাথে রোপা আমন রয়েছে হুমকির মুখে। এছাড়াও উপজেলার ১১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেঝেতে পানি ওঠায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুর্যোগ মোকাবেলায় তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে শনিবার সকাল জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাাপ্ত চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম আখঞ্জির সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন- জেলা প্রসাশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদ, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহমদ, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী জাহান, বিপ্লব সরকার, ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন, আজহার আলী, বিশ্বজিত সরকার, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম, একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী মনোলাল রায় প্রমুখ। সভায়  উপজেলার যে সমস্ত স্থানে রাস্তা ঘাট ও ব্রীজের ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।বাদাঘাট ইউনিয়নের বিন্নাকুলি ব্রীজের এপ্রোচ, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, সড়ক ও জনপথের আনোয়ারপুর-ফতেহপুর রাস্তার ৩ স্থানে ভাঙ্গন, আনোয়ারপুর  ব্রীজ হতে বালিজুড়ি পর্যন্ত ভাঙ্গা রাস্তা, তাহিরপুর বাজার হতে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রতি পাহাড়ী ঢলের পানির তোড়ে ভেঙ্গে চলাচলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ‘উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের পাতারী তিওরজালাল, বড়খলা, আনোয়ারপুর, বালিজুরী, দক্ষিণকূল, মাহতাবপুর, নোয়াহাট, পিরিজপুর, মেঞ্জারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের উতিয়ারগাঁও নোয়াগাঁও রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের লক্ষীপুর রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পানি ওঠায় শনিবার শিক্ষার্থীরা কোন ক্লাস করতে পারেনি। উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মোদেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা রায়হান উদ্দিন রিপন বলেন, ‘গত দু’দিন ধরে তারা বসতঘর থেকে বেরুতে পারছেন না, ঘর থেকে বেরোলেই কোমরের নীচে পানি। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম আখঞ্জি বলেন, ‘ঢলের পানিতে ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তাঘাটগুলো পরিদর্শন করছি।

সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ ১,২,৩ (তাহিরপুর, মধ্যনগর, ধরমপাশা) সদস্য সেলিনা আবেদীন বলেন, হাওরবাসীর বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন ভিটে মাটি এখন চলে যাওয়ার অবস্থা দেখা দিয়েছে, কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে যে সমস্ত এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং যে সকল লোকজন বন্যাকবলিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দেয়াসহ তাদের দ্রুত পূনর্বাসনের ব্যাবস্থা করতে হবে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহামম্মদ আব্দুস ছালাম জানিয়েছেন, উপজেলার বাদাঘাট, বালিজুরী, উত্তর শ্রীপুর, উত্তর বড়দল, দক্ষিণ বড়দল, ৫টি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর রোপা আমন পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম রোববার বিকেলে এ প্রতিবেদক কে বলেন, আমি আজ সারাদিন উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছি এবং যেখানে ত্রাণের প্রয়োজন সেখানে ত্রাণও বিতরণ করেছি, পর্যায়ক্রমে বন্যাকবলিত সকলের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn