তাহিরপুরে কাজ না থাকায় ২০হাজার শ্রমিক কর্মহীন
তাহিরপুর প্রতিনিধি:: কিতা কইমু যাদুকাটা নদীতে ম্যাজিষ্ট্রেট আইয়া আমাদের পাথর তোলা বন্ধ করে দিছে। ভারত তাইকা পাথর ও কয়লা পাহাড়ী ডলের সাথে ভাইসা আয় আর এ পাথর আমরা শ্রমিকরা তুইল্লা বেইচ্ছ আমরার সংসার চালাই। এইডা বুলি পরিবেশের ক্ষতি করে। আমরার ছেলে-মেয়েরা না খেয়ে আছে ডিসি সাব দেখইন না কেনে অহন। নদী বন্ধ রাখলে আমাদের কাজ-কাম দিতে অইব। কাজ কাম পাইলে আমরা নদীতে যাইমু না। আমার স্বামী কাজ করার সামর্থ না থাকায় ছেলে-মেয়ে সহ ৫জনের সংসার আমার রোজগারের উপরই নির্ভরশীল। নদীটি খুলে দেয়া হলে আমাদের বাচাঁর অবলম্বন হতো। নদীতে পাথর ও কয়লা উত্তোলন বন্ধ থাকায় বর্তমানে কোথাও কোন কাজ না থাকায় বেকার আছি। সংসার কিভাবে চলবে তা বুঝতে পারছিনা। নদী চালু থাকলে প্রতিদিন ৫-৬শ টাকা রোজগার করতে পারতাম। নদী বন্ধ থাকায় খুবই কষ্ঠ আছি। কাম নাই কাজ নাই সংসার চালাতে পারছিনা এই সবকথা গুলো ক্ষোবের সাথে জানান,স্থানীয় পাথর শ্রমিক সুজাতা বেগ
এছাড়াও স্বরূপগঞ্জ গ্রামের দিন মজুর আব্দুর রহমান,মুখশেদপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়া সহ শত শত শ্রমিক বেচেঁ থাকার জন্য একেই দাবী নদীটিতে কাজ করার সুযোগ চাই। স্বরজমিন এলাকা ঘুরে জানাযায়,সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তের যাদুকাটা নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রায় ২০হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রতি বছরই ফাল্গুন-চৈত্র মাসে সীমান্তের যাদুকাটা নদী থেকে পাথর ও কয়লা কুড়িয়ে হাজারো শ্রমিক জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কয়লা ও পাথর গুলো বন্যার পানির সাথে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে বয়ে বিভিন্ন ছড়ার পানির সাথে ভেসে এসে যাদুকাটা নদীর তলদেশে জমাটবদ্ধ হয়ে যায়। আর এই জমে থাকা কয়লা ও পাথর কুদাল,বেলছা ও দেশীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছে ২০হাজারের অধিক নারী,পুরুষের স্থানীয় শ্রমিকরা। সেই সাথে ছোট ছোট গর্তে পানি জমে থাকায় সেলো মেশিন দিয়ে পানি সেচার কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু সম্প্রতি প্রশাসন কর্তৃক পরিবেশবাদী সংঘটনের হাইকোর্টে রিট আবেদনের অজুহাতে বন্ধ করে দিয়েছে সীমান্তবর্তী গ্রাম ও পার্শ্বভতি ১৩টি গ্রামে ২০হাজারে অধিক শ্রমিকের এক মাত্র উপাজর্নের করে বেচেঁ থাকার প্রধান অবলম্বন। যাদুকাটা নদীতে জনশূন্য হয়ে নিরব,নিঃস্ববতা,হাহাকার বিরাজ করছে। সবাই অপেক্ষায় আছে কবে আবার চালু হবে যাদুকাটা নদীটি। লাউরগড় বালি পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ওসমান গনি বলেন,প্রাকৃতিক ভাবে জমাট হওয়া বালির চরে প্রতি বছরই এই মৌসুমে প্রায় ২০হাজার শ্রমিক বালির নিচ থেকে ছোট ছোট গর্ত করে পাথর উত্তোলন করে আসছে। কোন কোন গর্তে পানি জমাট হয়ে গেলে ছোট সেলো মেশিন দিয়ে পানি সেচে হাতে খুড়ে পাথর ও কয়লা উত্তোলন করে হাজারো কর্মহীন মানুষ জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন যুগযুগ ধরে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসক ”বেলা” নামক একটি পরিবেশ বাদী সংঘটনের দোহাই দিয়ে ঐসব শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। নদীটি খোলে দেবার দাবী জানাই। তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন,আমি নিজে স্বরজমিনে নদীর চরে ঘুরে দেখেছি এতে পরিবেশের কোন ক্ষতির কারন রয়েছে বলে মনে হয় নি এবং এ বিষয়টি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সকল সদস্য ও এলাকার শতাধিক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত হয়ে হাজার হাজার শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের পথে উন্মুক্ত রাখার দাবী জানিয়েছি।
সুনামগঞ্জ-১আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন,আমি নিজে এলাকা পরিদর্শন করেছি আমার নির্বাচনী এলাকায় হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক ভাবে জেগে উঠা নদীর মধ্যবর্তী চরে যুগযুগ ধরে শ্রমিকরা পাথরও কয়লা উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। পাথর উত্তোলনের কাজে ড্রেজার বা বোমা মেশিন ব্যবহার হচ্ছে না যাতে করে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ঐ অঞ্চলের মানুষের রোজগারের কোন পথ না থাকলে বিভিন্ন খারাপ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে। এই বিষয়টি জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে অচিরেই হয়ত এ সমস্যার সমাধান হবে।