তাহিরপুরে মৃত ব্যক্তির নামে কার্ড করে সরকারি ধান ক্রয়
এম.এ রাজ্জাক :: প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূলে ধান ক্রয়ের অংশ হিসেবে তাহিরপুর উপজেলায় ১৪শ’ ১৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কৃষকরা তাহিরপুর সদরে মোট ৩০ হাজার কৃষকের কাছ থেকে এ ধান সংগ্রহ করবে খাদ্য গোদাম কর্তৃপক্ষ। আর যে কৃষকরা ধান বিক্রি করবেন তাদের উপজেলা কষি অফিস ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত হতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় উপজেলার সকল কৃষক নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন। সেখান থেকে লটারীর মাধ্যমে ৩০ হাজার কৃষক বাছাই করা হবে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ উপজেলার একটি প্রভাবশালী চক্র টাকার বিনিয়মে কৌশল করে তাদের পছন্দের কৃষকদের লটারীতে বিজয়ী করে নিবন্ধন প্রদান করেছেন। এছাড়াও নিবন্ধন তালিকায় একই পরিবারের একাধিক লোক এমনকি মৃত ব্যক্তির নামেও কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার ৪নং বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য নোয়াজ আলী, ৫নং ওয়ার্ড সদস্য আবু তাহের, ৬নং ওয়ার্ড সদস্য স¤্রাট মিয়া, ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আহসান হাবিব, ৪,৫,৬ নং সংরক্ষিত সদস্যা সুষমা জাম্বিল জানান, তাদের ওয়ার্ড থেকে পাঁচ শতাধিক লোক স্বশরীরে গিয়ে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও একজনের নামও লটারীতে আসেনি। অথচ যারা আবেদন করেননি তাদের নিবন্ধন করা হয়েছে কিভাবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এতে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, লটারীর নামে তাদের সহজ সরল কৃষকদের সঙ্গে প্রহসন করা হয়েছে।
৫নং ওয়ার্ড সদস্য আবু তাহের বলেন, তার ওয়ার্ডে একই পরিবারের তিনজনকে কার্ড প্রদান করা হয়েছে। তারা হলেন, পুরানঘাট গ্রামের আমির উদ্দিনের ছেলে আব্দুস ছাত্তার, তার ছোট ভাই আব্দুল মোতালেবের ছেলে কাজল মিয়া ও তার আপন ছোট ভাই আব্দুল গফফারের স্ত্রী ছাবিনা।
৪নং ওয়ার্ড সদস্য নোয়াজ আলী বলেন, তার ওয়ার্ডে একই পরিবারের দুজনের নাম নিবন্ধিত হয়েছে, তারা হলেন মাহারাম গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে বিল্লাল মিয়া ও তার আপন চাচাত ভাই গণি মিয়ার ছেলে জমসেদ মিয়া।
৬নং ওয়ার্ড সদস্য স¤্রাট মিয়া ও ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, তাদের ওয়ার্ডের রাজাই গ্রামের ১৭১নং কার্ডের গবীন্দ্র হাজং গত এক বছর আগে মারা গেছেন, ব্রাক্ষণগাও গ্রামের ০৪৯৫নং কার্ডধারী আব্দুল মালেক তিন বছর আগে মারা গেছেন। অথচ তার নামেও কার্ড ইস্যু হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম অভিযোগ করে জানান, নিবন্ধনের আবেদন স্ব-শরীরে গিয়ে উপস্থিত হয়ে করার কথা আমি কৃষকদের স্ব শরীরে পাটিয়েছি। পরে গিয়ে দেখি সকাল ১০টায় রেজিস্টার খোলার আগেই প্রতি ওয়ার্ডের কৃষকরা পৌছার আগেই প্রতি ওয়ার্ডে ৫০-৬০জনের নামের তালিকা আগেই নিবন্ধন করা হয়ে গেছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী আবুল হাসানসহ অন্যজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও কৃষি কর্মকর্তার নির্দেশে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমি বিষয়টি ইউএনওকে জানানোর পর আমার ইউনিয়নের নিবন্ধনের তালিকা নতুন করে করার নির্দেশ দেন তিনি। সেখানেও তারা দুর্নীতি করে একই পরিবারে তিনজনের নাম এবং দুইজন মৃত ব্যক্তির নামেও কার্ড ইস্যু করেছেন। এখনও তারা কিছুসংখ্যক কার্ড নিজেদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকা দিয়ে বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ কাজটি মূলত খাদ্য অধিদপ্তরের, আমি শুধু সহযোগিতা করেছি মাত্র। উপজেলা খাদ্য গোদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনধন চন্দ্র দাস তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি শুধুমাত্র ধান ক্রয়ের মালিক আমার কাজ তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাজ থেকে ধান ক্রয় করা। উপজেলা ক্রয় কমিটি রয়েছে তারাই তালিকা প্রনয়ন করেছেন উনাদের তালিকা অনুযায়ী আমি ধান ক্রয় করছি। তালিকা তৈরির বিষয়ে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ এ বিষয়ে বলেন, মৃত ব্যাক্তিদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হলে তালিকা বাতিলসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।