দিরাইয়ে নিজ অর্থায়নে ব্রিজ নির্মাণ করে আলোচনায় জামাল উদ্দিন
সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরে নিজ অর্থায়নে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করে চামটি নদীর উপর ব্রিজ নির্মান করে সর্বত্র আলোচনায় উঠছেন জামাল উদ্দিন। চামটি নদীর পার দিয়ে হারানপুর-মজলিশপুর-ঘাগটিয়া রোডে ব্রিজের পাশ দিয়ে প্রতিদিন শতশত লোকজন চলাচল করছেন। সবার মুখে একই আলোচনা- এত টাকা খরচ করে ব্রিজ নির্মাণকারী কে, ঐ জামাল উদ্দীন। পৌরশহরে সর্বত্রই জামাল উদ্দীনকে নিয়ে আলোচনা। অনেকে তাকে পাগল বলেও উপাধি দিচ্ছেন। তাতে কোন দুঃখ নেই জামাল উদ্দিনের। তিনি বলেন- এটা একটি সামাজিক সেবামূলক কাজ। এতে আমারও লাভ হবে দশেরও লাভ হবে। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি অনেক বাধার সম্মুখিন হয়েছেন। পারিবারিকভাবেও সমর্থন করা হয়নি তাঁকে। কাজ করতে গিয়ে অনেক মালামাল চুরি হয়েছে তাঁর। অবশেষে মেয়র, ইউএনও কাউন্সিলর ও উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিইডি) সহযোগিতায় ব্রিজের নির্মাণকাজটি সমাপ্ত করেছেন বলে জানান জামাল উদ্দিন।
জামাল উদ্দিনের বাড়ি জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর গ্রামে। আত্মীয়তার সুবাদে তাঁর দিরাই আসা-যাওয়া। পৌরসভায় তিনি পনেরো কেয়ার জমি ক্রয় করেন। ২০০৮ সালে পৌরসদরের দাউদপুর গ্রামে ৫২ শতক জায়গা ক্রয় করেন তিনি। সেবামূলক কাজ করার চিন্তা নিয়ে মূলত এই জায়গা ক্রয় করেন। প্রথমে এই জায়গায় স্কুল করার চিন্তা থাকলেও ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা না-থাকার কারণে তা আর করা হয়নি। এরপর দুধ উৎপাদনের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ডেইরি ফার্ম করার পরিকল্পনা করেন এবং ২০১১ সালের দিকে ডেইরি ফার্ম করেন জামাল উদ্দিন। কয়েক বছর চালু করার পর পারিপার্শ্বিক কারণে ডেইরি ফার্মটি লাভের মুখ দেখেনি, লোকসান গুনতে হয়েছে তাঁকে। লোকসানের কারণ হিসেবে জানা যায়- জামাল উদ্দিন বহিরাগত হওয়ায় স্থানীয় শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ ও সুষ্ঠুভাবে বাজারজাত করা সম্ভব হয়নি তাঁর। এছাড়া হোটেল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কারণে ডেইরি ফার্ম থেকে দুধ উৎপাদন করলেও বাজারজাত করতে পারেননি জামাল উদ্দিন। হোটেল মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে না-পারলে ডেইরি ফার্ম করলেও কেউ লাভের মুখ দেখতে পারবেনা বলে জানান জামাল উদ্দিন।
বর্তমানে জামাল উদ্দিন এই জায়গায় কিন্ডার গার্ডেন স্কুল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুন্দর ও নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনে নিজ অর্থায়নে এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ করেছেন। অচিরেই স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু করবেন বলে জানান তিনি। জামাল উদ্দিন জানান- সৌদি আরবে দীর্ঘ ১৯ বছর চাকুরি করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি দেশে ফিরেন। ঢাকায় ইস্টার্ন হাউজিং ব্যবসা করেন কয়েক বছর। ঢাকায় ৩-৪টি ফ্লাটের মালিক হন তিনি। ঢাকার বনশ্রী ও আপ্তাব নগরে দোকান ছিল তাঁর। কিন্তু সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভে এই সম্পদ খোয়াতে হচ্ছে তাঁকে। জামাল উদ্দিনের ছয় মেয়ে। তিন মেয়ে মেডিকেলে পড়াশুনা করছে। বাকি তিন মেয়েকেও মেডিকেলে পড়াশুনা করানোর চিন্তা রয়েছে তাঁর। সন্তানদের উচ্চশিক্ষিত করতে গিয়ে জামাল উদ্দিনকে ঢাকার ফ্লাট, দোকানসহ অনেক সম্পদ বিক্রি করতে হয়েছে। ইংল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেলেও শুধুমাত্র সন্তানদের লেখাপড়ার জন্যে দেশ ছাড়েননি তিনি।
জামাল উদ্দিনের বড় মেয়ে হিবা আক্তার সিলেট রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় মেয়ে ওয়াফা জাহান ও তৃতীয় নাফিয়া ইয়াছমিন টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। চতুর্থ মেয়ে মাহফিয়া তাহছিন প্রভা সিলেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের শিক্ষার্থী। মেডিকেলপড়ুয়া তিন মেয়েকে শুরুতে জামাল উদ্দিন ধানমন্ডির ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া করান। শিক্ষার শীর্ষ স্থানে পৌঁছে সেবামূলক কাজ যেনো তাঁর মেয়েরা করে যেতে পারে এই প্রত্যাশাই জামাল উদ্দিনের।