জিয়াউর রহমান লিটন-

দুর্যোগ যেনো কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা হাওরবাসীর। ধানের পর এবার মৎস্য ভান্ডার খ্যাত হাওর ও নদ নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠছে। ধান পঁচে ও মাছ মরার উৎকট গন্ধে নদী ও হাওরের পানি দূষনের কবলে পড়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে।  সোনালী ফসলের বুকে যখন বিশাল জলরাশির ঢেউ আর কৃষকের চোখের পানি একাকার, সব হারিয়ে কৃষকরা যখন নি:স্ব । কৃষককুল তবুও হাওরের বুকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু হাওরে মরা মাছ ভাসতে দেখে তাদের স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে।

হাওর পাড়ের বাসিন্দারা জানান, গত দুই ধরে শুধু মাছ মরে ভাসছে না, পানির দূষণে বাতাসে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। এভাবে পানির দূষণ ও বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে জনস্বাস্থের জন্য হুমকি হয়ে পড়বে। একদিকে হাওরের ফসল পঁচে  মাছ  আক্রান্ত হয়ে মাছগুলো মরে পানিতে ভেসে উঠছে। অনেকেই মৃত মাছ শিকারে ব্যস্ত পড়ে পড়ছেন। ফসলহানির পর এবার মাছ হারানোর আশংকায় হাওবাসীর কষ্টের যেন শেষ নেই।

জানা যায়, সাস্প্রতিকালে দিরাই ও শাল্লা উপজেলার ছোটবড় ২৭টি হাওরের কাঁচা আধা পাকা সোনালি ফসল সর্ম্পূন পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। অসময়ে ফসলহানির ঘটনায় কৃষকরা চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। এর মধ্যে সোমবার কলনী নদী, টাংনী,চাপতি,বরাম শাল্লার ছায়ার হাওরসহ সব ক’টি হাওরে রুই, কাতলা, বোয়ালসহ ছোট বড় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছগুলো মরে পানিতে ভেসে যাচ্ছে। কেউ কেউ মাছ ধরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে বেশি বেশি মাছ ধরে বাজার বিক্রি করেছেন।

দিরাই পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া দাবী করছেন, জমিতে আগাছা নিধনে এক ধরনের কিটনাশক অতিমাত্রায় ব্যবহার করায় তার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাছ মরে ভাসছে, অকাল বন্যায় ধান ও এবার মাছের মড়কে হাওরবাসীর দুর্যোগের সীমা থাকবে না। মাছে ভাতে হাওরবাসীর জীবনজীবীকা কঠিন হয়ে পড়বে।

টাংনী হাওর পাড়ের বাসিন্দা সবুজ মিয়া চৌধুরী জানান, ফসল হারানোর পর বেঁচে থাকার কিছুটা আশা ছিল হাওরের মাছ। গতকাল সোমবার টাংনি হাওরে অনেক বড় বড় মাছ মরে ভেসে উঠছে। পানিতে দুর্গন্ধ।  বছরের ছয় মাস মাছ শিকার করে জীবন জীবিকা চলে হাওরবাসীর। কিন্তু এবার ধানও গেল মাছও গেল। কৃষক ও জেলেদেও বেচে থাকার আর কোন অবলম্বন রইলো না।  এদিকে কালনী তীরবর্তি সাকিতপুর,আনোয়ারপুর,সুজানগর, চানপুর ও তাড়ল গ্রামের লোকজন সোমবার নদীতে মরা মাছ ভাসতে দেখে অনেকেই তা সংগ্রহ করে পাড়ে তুলছেন,কেউবা বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন আবার কেউবা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

ভাটিবাংলা যুবসমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত সাগর দাস বলেন, হাওরপাড়ের বাসিন্দার বোরো ফসল ও হাওরের মাছের ওপর নির্ভরশীল। এবারে কৃষকের ঘরে নেই ফসল। কৃষকদের জীবন জীবিকার একমাত্র অবম্বল ছিল হাওরের মাছ। এবার মাছও গেল মরে। তার ওপর কাল বৈখাশী ঝড়ের তান্ডব। সব কিছু মিলে হাওরবাসীর মহা সংকটে পড়েছেন। এ সংকট মোকাবেলায় সরকারের প্রতি ন্যশনাল সার্ভিস কর্মসুচি চালুর দাবী জানান তিনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: হাসিবুর রহমান বলেন, নদ নদী ও হাওরের দোষিত পানি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার ও আক্রান্ত মরা মাছ জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। হাওর ও নদীতে মাছ মরে ভেসে যাওয়ার খবর জানে না দিরাই উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ জামান খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আমি এখন এলাকায় নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুজ্জামান পাবেল বলেন, এ ব্যাপারে করণীয় কি তা ঠিক করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn