দুদকের তদন্ত বন্ধে আপিল বিভাগের চিঠি,সরকারে বিস্ময়
আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ করে। তারা অভিযোগ করেছিল, বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়ে বিচারপতি জয়নাল আবেদীন রিপোর্টটি উপস্থাপন করেছেন। আওয়ামী লীগ তখন তার নীতি-নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নোটিস করা হয় বিচারপতি জয়নালকে। এরপরই তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক। তদন্ত চলাকালেই সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর স্বাক্ষর করা ওই চিঠি দুদক ও সরকারের ভিতরে বিস্ময় সৃষ্টি করে।
কী আছে সেই চিঠিতে: সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর স্বাক্ষর করা চিঠিতে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না বলে উল্লেখ করা হয়। নিচে চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘‘উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের প্রেক্ষিতে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, মাননীয় বিচারপতি জনাব জয়নাল আবেদীন দীর্ঘকাল বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপীল বিভাগের বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালীন সময় তিনি অনেক মামলার রায় প্রদান করেন। অনেক ফৌজদারী মামলায় তার প্রদত্ত রায়ে অনেক আসামীর ফাঁসীও কার্যকর করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশেও সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মাননীয় বিচারপতি কর্তৃক প্রদত্ত রায় সকলের উপর বাধ্যকর। এহেন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ আদালতের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির বিরুদ্ধে দুদক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাঁর প্রদত্ত রায়সমূহ প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে বিভ্রান্তির উদ্রেক ঘটবে।
অতএব মাননীয় বিচারপতি জনাব জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবে না মর্মে সুপ্রীম কোর্ট মনে করে। বিষয়টি আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে প্রেরণ করা হলো। (অরুণাভ চক্রবর্তী)” এদিকে দুদকের তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের এমন হস্তক্ষেপকে একটি বিরল ঘটনা হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তারা মনে করেন এটি একটি ন্যায়বহির্ভূত হস্তক্ষেপ।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ চিঠির সঙ্গে একমত নন জানিয়ে বলেন, কোনো তদন্তে বাধার সৃষ্টি করা উচিত নয়। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। যে কারও বিরুদ্ধে তদন্ত করার এখতিয়ার রয়েছে দুদকের। তথ্য-প্রমাণাদি থাকলে অবশ্যই তদন্ত করা চলে। তিনি বলেন, বিচারপতি যে কোনো মামলায় আইনের ভিতরে থেকেই রায় দিয়ে থাকেন। আর যে কোনো রায় তিনি তো একা দেন না। রায় দিয়েছেন বলেই যে আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন এটা ঠিক নয়। আর এই চিঠি দেওয়া ঠিক হয়নি।
আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম তদন্তে বাধার সৃষ্টি করাকে সম্পূর্ণরূপে সাংবিধানিক বিধানের লঙ্ঘন বলে মনে করেন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের সংরক্ষক এবং অভিভাবক। সংবিধানে বলা হয়েছে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সাংবিধানিকভাবেই কোনো অপরাধ বিষয়ে তদন্ত ও বিচার হওয়া বিধিসম্মত। সংবিধানের অভিভাবক হয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির দুর্নীতির তদন্তে বাধা সৃষ্টি করা সম্পূর্ণরূপে সাংবিধানিক বিধানের লঙ্ঘন।