দুর্গোৎসবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে সুনামগঞ্জের ৪১০টি মন্দির
পুরাণ মতে, ত্রেতা যুগে শরৎকালে রাবনের সঙ্গে যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বে রামচন্দ্র দুর্গা দেবীর পূজা করেছিলেন। পূজার শুরুতে দেবীকে বিল্ববৃক্ষে অধিবাসের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এই পূজাপদ্ধতি বোধন বলে পরিচিত। পূজার শুরুতে মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় দেবীর বোধন হয়। অসুরের সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের মানসে রামচন্দ্র অকালে যে পূজা করেছিলেন তার ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত আছে। মানব সমাজের সকল অনাচার-অবিচার রোধে মর্ত্যবাসী প্রতিবারের ন্যায় এবারও দেবীর আরাধনায় যুক্ত হচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিমান কান্তি রায় বলেন, ‘এ করোনাকালে করোনা মুক্তির আরাধনায় এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদেরকে ২৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এ নির্দেশনা আমরা প্রতিটি উপজেলায় পৌঁছে দিয়েছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পুরোহিত ও ভক্তদের অবশ্যই মাস্ক পরিধান করতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। অঞ্জলী প্রদানে এক সঙ্গে না দাঁড়িয়ে নিরাপদ দূরত্ব মেনে দফায় দফায় তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শুধু মন্দিরকেন্দ্রীক আলোকসজ্জা এবং সাউন্ড সিস্টেমে ধর্মীয় গান ব্যতীত উচ্চশব্দে গান বাজানো পরিহার করতে হবে। এছাড়া কোনো ধরণের যাত্রা, নাট্যানুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ও আরতি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যাবে না। করোনা প্রভাবের কারণে জনমনে একটু ভীতি কাজ করলেও করোনামুক্ত হতে সবাই উৎসাহ-উদ্দীপনায় জাঁকজমকভাবেই দেবীর আরাধনায় অংশ নিচ্ছেন।’
সুনামগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, এবারের দুর্গোৎসবে জেলার ১১টি উপজেলার ৪১০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪৪টি, ছাতকে ৩৬টি, জগন্নাথপুরে ৩৯টি, দিরাইয়ে ৬৫টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি, জামালগঞ্জে ৪৯টি, বিশ্বম্ভরপুরে ৩০টি, শাল্লায় ৩০টি, তাহিরপুরে ২৯টি, দোয়ারাবাজারে ১৭টি, ধর্মপাশায় ১৮টি এবং ধর্মপাশার অধীনস্থ মধ্যনগরে ২৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। গতবছরও সমান ৪১০টি মন্দিরে পূজানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ বছর সমান সংখ্যক পূজা অনুষ্ঠিত হলেও করোনার কারণে একটু বাড়তি শঙ্কা কাজ করছে। তবে সার্বিক আয়োজনে করোনার নেতিবাচক প্রভাব তেমনটা নেই বলে জানিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ।
দুর্গাপূজায় করোনার প্রভাব নেই উল্লেখ করে সাচনা বাজার জগন্নাথ জিউর মন্দিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী আরাধন পাল জানিয়েছেন, তিনি এ বছর ৫টি মূর্তির কাজে হাত দিয়েছেন। গতবারও ৫টি প্রতিমা তৈরি করেছিলেন তিনি। এবারের পূজানুষ্ঠান সুন্দরভাবেই অনুষ্ঠিত হবে বলে মনে করছেন তিনি। সাচনা দক্ষিণপাড়া সার্বজনীন দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপ্রেশ দেবনাথ বাবলু বলেন, ‘আমাদের এলাকায় করোনার প্রভাব তেমন নেই। তারপরও এবারের পূজায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার শতভাগ না হোক, যতটুকু পারা যায় তা পালনের চেষ্টা করা হবে। তবে দুর্গাপূজায় করোনার প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।’
ছাতক উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘করোনার জন্য আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনাড়ম্বরপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। তবে করোনার জন্য মানুষকে তেমন চিন্তিত দেখি না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে করোনার প্রভাব নেই। যদিও আমাদের বিধিনিষেধ আছে, তারপরও মানুষ আড়ম্বরপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে চাই।’ শাল্লা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ কান্তি দাস বলেন, ‘আমাদের এখানে করোনার প্রভাব লক্ষণীয় নয়। পূজা উপলক্ষে মানুষের মাঝে আলাদা উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। সার্বিক পরিস্থিতিও ভালো। পূজা উদযাপনে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আমরা যে নির্দেশনা দিচ্ছি, তাতে পূজার্থীদের মাঝে কিছুটা আপত্তি আছে।’