সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে জমির স্বত্বলিপির চূড়ান্তপর্চা বিতরণের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ ওঠেছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে সুকৌশলে প্রতিটি মৌজার পর্চা বিক্রি করছে উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত দালাল ও অফিসের কর্মচারীরা । মৌজা প্রজাস্বত্ব বিধিমালা ১৯৯৫ এর ৩০ নং বিধিমতে উপজেলার ১৬৬টি মৌজার সকল আপত্তি মামলাসমূহের স্বত্বলিপির চূড়ান্ত প্রকাশনা শেষ। এখন জমির মালিকদের চূড়ান্ত পর্চা বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পকেট ভারি করছেন সেটেলমেন্ট অফিসের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেএলনং ১২৫ নৈনগাঁও মৌজার ডিপি খতিয়ান ১৬৩২, জেএলনং ৭৮ বালিজুরি মৌজার ২১১৭ ও ২১৯৭ খতিয়ানে টেম্পারিং কাজে ব্যাপক দূর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। একইভাবে জেএলনং ১২৬ বাজিতপুর মৌজার ৪৮৭ ডিপি খতিয়ানে একক নামে মালিকানা থাকা স্বত্ত্বেও অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে আরও দুই মালিকের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে।
অপরদিকে চাঞ্চল্যকর এক তথ্যে জানা গেছে, চূড়ান্ত পর্চার কাজ সম্পন্ন হওয়া ২০টি মৌজার ৬৬৬৬টি খতিয়ান বাবদ ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা এবং ১০২০টি নকশা বাবদ ৫ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় সেটেলমেন্ট কর্তৃপক্ষ। পরে ওই টাকার বিনিময়ে শুধুমাত্র মোহাম্মদপুর, জিনারি ও সুলতানপুর ওই ৩টি মৌজার নকশা ও খতিয়ান হস্তান্তর করা হয় ওই ব্যক্তিকে। বাকিগুলো সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মচারী অংশু চাকমা, সার্ভেয়ার আবুল কাশেম ও সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারের ব্যক্তিগত সহকারী শাহিন মিয়া, পেশকার জীপম চাকমা, কর্মচারী সেলিম ও মোতালেব মিয়া পর্চাপ্রতি জমির মালিকদের কাছে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা করে বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন।
উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট মৌজার সংখ্যা ১৬৯টি। তন্মধ্যে নাছিমপুর, বৈঠাখাইসহ ৩টি মৌজার কাজ এখনও অসমাপ্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক মৌজার চূড়ান্ত পর্চা বিতরণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোর বিতরণকাজ চলছে। এদিকে গত ২৩ ও ২৪ আগস্ট উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের সার্ভেয়ার আবুল কাশেমের নেতৃত্বে তার নিযুক্ত দালালচক্রের মাধ্যমে উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের উত্তর সাউদেরগাঁও মৌজায় পর্চাপ্রতি ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা এবং নকশাপ্রতি বাবদ ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে অতিসম্প্রতি বিভিন্ন গনমাধ্যমকর্মীরা বিতরণ স্থানে উপস্থিত হলে সার্ভেয়ার আবুল কাশেম দালাল সিন্ডিকেটসহ দ্রুত সটকে পড়েন।ওই মৌজার ভূমিমালিক সাজিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে পর্চাপ্রতি ৪শ’ টাকা এবং নকশাপ্রতি ৯শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে।
মান্নারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজ বলেন, ‘সাউদেরগাঁও মৌজায় পর্চা বিতরণের বিষয়ে অফিসিয়ালি চিঠি পেয়েছি। তবে কোথায় বিতরণ করা হবে তা জানানো হয়নি। পর্চাপ্রতি ২শ’-৩শ’ টাকা করে টাকা করে নেয়া হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।’ দোয়ারাবাজার উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (এসও) রফিকুল মিয়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নির্ধারিত ফি ব্যতীত অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কোনো নিয়ম নেই।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনাদের দোয়ারাবাজারে ঘরে ঘরে দালাল। শাহীন মিয়া নামে আমি একজনকে চিনি। সে আর দোয়ারাবাজার যাবেনা। সেখানে গেলে আপনারা তাকে পুলিশে দিয়ে দেবেন।’