নায়িকা মা হলে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে কেন: অপু বিশ্বাসের প্রশ্ন
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের এসময়কার সবচাইতে আলোচিত একজন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস মনে করেন, নায়িকাদের বিয়ে বা সন্তান হয়ে গেলে ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যায় বলে যে ধারণাটি প্রচলিত রয়েছে, সেটি অত্যন্ত ভুল একটি ধারণা। বিবিসি বাংলার এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে সংবাদদাতা আহ্রার হোসেনের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন,
“আমি যে বিয়ের পরে আট বছর কাজ করেছি, কেউ বুঝতে পেরেছে? আমি মনে করি, মা বা বিয়ে হওয়া, এটা কোন ম্যাটার না কোন নায়িকার জন্য। কারণ নায়িকারা অনেক মেইনটেইন করতে জানে।” “মানসিকতা আমাদের ঠিক করতে হবে, যে আমরা ওই মেয়েটার কি দেখতে চাই। মেয়েটার গ্ল্যামার-কাজ দেখতে চাই? নাকি ও মা হয়েছে দেখে ওকে আলাদা করতে চাই, ধ্বংস করতে চাই?” বাংলাদেশের শীর্ষ চিত্রনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে আট বছর আগের গোপন বিয়ে ও তাদের সন্তান হবার খবর সম্প্রতি নাটকীয় ভাবে প্রকাশ করে বিরাট বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান অপু বিশ্বাস। গত এপ্রিল মাসে তিনি একটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে হাজির হন এক নবজাতক শিশুকে নিয়ে। সেখানে তিনি দাবি করেন, চিত্রনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে আট বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল। তারা এতদিন গোপনে সংসারও করেছেন এবং এই শিশুটি তাদেরই সন্তান। এ নিয়ে বাংলাদেশে শোরগোল পড়ে যায়। পরবর্তী বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এই অপু বিশ্বাস – শাকিব খানই ছিলেনই মূল আলোচনায় ও বিতর্কের কেন্দ্রে। শাকিব খান প্রথম দিকে বিয়ের কথা স্বীকার না করলেও পরে স্বীকার করে নেন বলে খবরে প্রকাশ। অপু বিশ্বাস যতগুলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, তার অধিকাংশেরই নায়ক শাকিব খান।
এই অপু-শাকিব জুটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে বিগত এক দশক ধরে সবচাইতে জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল জুটি বলে পরিচিত। ফলে তারা দুজনে প্রেম করছেন বা বিয়ে করেছেন এরকম একটি গুজব বাংলাদেশে সবসময়েই ছিল, যা কখনোই স্বীকার করেননি অপু কিংবা শাকিব কেউই। বিবিসি বাংলা এই প্রসঙ্গটি সামনে আনলে অপু বিশ্বাস বলেন, “প্রবাদ আছে, যা রটে তার কিছুটা তো ঘটেই।এটার সবচাইতে বড় প্রমাণ আমরা”।
চলচ্চিত্রে উত্থান:
ছোট বেলায় থেকেই নৃত্যচর্চ্চা করতেন বলে জানাচ্ছিলেন অপু বিশ্বাস। শৈশব কেটেছে বগুড়া শহরে। সেখানেই লেখাপড়া,নৃত্যচর্চ্চা। ২০০৫ সালে এফ আই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ নামের একটি চলচ্চিত্রে শাকিব খানের নায়িকা ছিলেন অপু বিশ্বাস। চলচ্চিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল হয়। তার পর থেকেই অপু-শাকিব নিয়মিত জুটি। অপু বিশ্বাসের ভাষায়, “সেখান থেকেই আমার শাকিব খান এবং ইন্ডাস্ট্রির সাথে একদম যাকে বলে ওতপ্রোত পরিচয় বা ভালবাসা”। অবশ্য এর আগে ‘কাল সকালে’ নামে একটি চলচ্চিত্র দ্বারা প্রথম রূপালি পর্দায় আগমন করেন অপু বিশ্বাস। সেখানে মূল নায়িকা শাবনূরের বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
প্রেম ও বিয়ে:
তারকাদের প্রেম ও বিয়ে নিয়ে সবসময়েই মানুষের আগ্রহ দেখা যায়, আর এ কারণেই হয়ত বিনোদন সংবাদদাতারা সুযোগ পেলেই এ ব্যাপারে জানতে চান তারকাদের কাছে। কিন্তু অপু-শাকিবের প্রেম-বিয়ে-সন্তান বাংলাদেশে এ ধরণের খবরাখবরে একেবারে নতুন এক মাত্রা এনে দিয়েছিল। তো, কবে বিয়ে হয়েছিল অপু-শাকিবের?
অপু বিশ্বাস জানাচ্ছেন, “একদম প্রথম পর্যায়ে আমাদের বিয়েটা হয়ে যায়। চার বা পাঁচ নম্বর ছবিটি করছি তখন”। ‘কথা দাও সাথি হবে’ ছায়াছবির শুটিং চলছে তখন। “একদিন শার্ট-প্যান্ট পরে মাকে বললাম পারলারে যাচ্ছি, তারপর গিয়ে বিয়ে করে ফেললাম। আমার মেজ বোন ছিল সাথে। সে কান্না করছিল, কারণ আমার ধর্মটা বদলে ফেলতে হচ্ছে”। ধর্ম বদলে অপু বিশ্বাস নতুন নাম নিয়েছিলেন অপু ইসলাম খান। এই নামটা অবশ্য শুধু বিয়ের কাবিনেই আছে। আর কোথাও ব্যবহৃত হয়নি কখনো, হওয়ার সম্ভাবনাও নেই, বলছিলেন অপু বিশ্বাস। আর বিয়ে করে যে যার বাসায় চলে গিয়েছিলেন সেদিন। অপু বিশ্বাস বলছেন, “আমি নিজেও আসলে ভাবিনি আমাকে সংসার করতে হবে। খুব ছোট ছিলাম তখন”। “তারপর আর সংসারটা হয়নি। শুধু ‘সার’-টা হয়েছে, বিয়ের সার। সং-টা আর হয়ে ওঠেনি”। এর পর আট বছর এই বিয়ের খবরটি গোপন রেখেছেন। গত বছর এক পর্যায়ে হঠাৎ দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যান অপু বিশ্বাস চলে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে। ওইসময় আসলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এক পর্যায়ে বিদেশে গিয়ে জন্ম দেন ছেলে আব্রাম খান জয়কে। বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দেবার সময় জয়কে সঙ্গে করে নিয়েই সংবাদদাতার সামনে আসেন অপু বিশ্বাস।
বিয়ের ঘোষণা দিতে কেন এত নাটকীয়তা?
অপু বিশ্বাস বলেন, তিনি ভেবেছিলেন, শাকিব বলবেন। কিন্তু বলেননি। এক পর্যায়ে সন্তান হল। শাকিব সন্তানকে যত্ন আত্তিও করলেন। কিন্তু এটা জনসমক্ষে আনতে গা করেননি কখনো।
“সন্তান হওয়ার পর প্রথম ৫ মাস পুরো ব্যাপারটা গোপন রাখতে হয়েছিল। এটা করা খুব কঠিন ছিল। এটা আমি আর নিতে পারছিলাম না”। “ওর সঙ্গে আমার কিছু হয়নি। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছিল, ও যখন বলতে পারছে না, লজ্জাবোধ করছে, থাকগা, আমি বলে দি। আমি তো মা। আমার তো আর লুকনোর কিছু নেই”। এখনো তো সবাই জানে, অপু-শাকিব বিবাহিত। তাদের সাত মাস বয়েসী সন্তান আছে। এখন কি তাদের সংসার হচ্ছে? দেখা যাচ্ছে, অপু বিশ্বাস এখনো আগের মতোই তার নিজের বাসাতেই আছেন। শাকিব খানও থাকেন তার নিজের বাসায়। আলাদা বাসা। অপু বিশ্বাস বলছেন, “ওইরকমই হচ্ছে। কিন্তু অবশ্যই বাচ্চাকে নিয়ে ও এবং আমরা দুজন সুখী। সময় এলে হয়তো ভাল সংসার করতে পারব। আপাতত না। কিন্তু আশা করি হয়ে যাবে”।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা:
অপু বিশ্বাস জানাচ্ছেন আগামী ঈদে তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘রাজনীতি’ মুক্তি পাচ্ছে। এই ছবিটির কাজ অবশ্য অন্তঃসত্ত্বা হবার আগেই শেষ করেছিলেন তিনি।
সেই সিনেমার নায়ক কে?
“নায়ক আমার স্বামী। আগেতো বলতাম সিগনেচার হিরো। এখন আমি স্বামী বলব”। এছাড়া আগে বেশ কিছু অর্ধনির্মিত চলচ্চিত্রে মাস শীঘ্রই কাজ শুরু করবেন বলে জানাচ্ছেন অপু বিশ্বাস। ছেলে জয়ের এক বছর বয়েস হলেই পূর্ণদ্যমে চলচ্চিত্রে ফেরার ইচ্ছের কথা জানান তিনি। তবে জয় পিতা-মাতার মতো তারকা হোক তা চান না অপু বিশ্বাস। “আমি আমার ছেলেকে আর মানুষদের থেকে আলাদা করতে চাই না। ও পড়াশোনা শিখে ভাল একজন মানুষ হোক”। “মিডিয়াতো অনেক জানার অনেক শেখার জায়গা, হয়তো আমার ছেলে এটা পারবে না। এটা অনেক ভারী একটা দায়িত্ব। আমি মা হিসেবে এত ভারী দায়িত্ব আমার ছেলের কাঁধে তুলে দিতে পারব না”।