নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই বাংলাদেশি হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে একজন মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহ আলম (৭২) এবং অপরজন কমিউনিটি লিডার খবির উদ্দিন ভূইয়া(৫৮)।মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে এলমহার্স্ট হাসপাতালে আইসিইউ’তে রাখা হয়েছে। অপরদিকে, খবিরউদ্দিনের চিকিৎসা শেষে বাসায় বিশ্রাম নিতে বলা হয়েছে। ব্রঙ্কসে একই সময়ে আরো দুই বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তাদের আঘাত ততটা মারাত্মক নয় বলে হাসপাতালে যেতে হয়নি।আমেরিকার কুইন্সের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকা এবং ব্রঙ্কসের ক্যাসেলহিলে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালায়। খবিরউদ্দিনের কাছে থেকে কোন কিছু না নিলেও শাহ আলমের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়েছে বলে স্বজনেরা জানান। উভয় ঘটনার ব্যাপারে মামলা হয়েছে। তবে ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ কোন দৃর্বৃত্ত গ্রেফতার হয়েছে বলে নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে জানা যায়নি। তবে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত এবং গ্রেফতারের জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। এ নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যার পর নির্জন স্থান দিয়ে চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন কমিউনিটি লিডাররা।

কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউ থেকে বাসায় ফেরার পথে কয়েক দৃর্বৃত্তদের দ্বারা আক্রান্ত হন। তার ঘাড় এবং মাথার পেছনে প্রচণ্ড আঘাত করা হয়। এ সময় তার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে দুর্বৃত্তরা তাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। এরপর খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে অচেতন অবস্থায় নিকটস্থ কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি করে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত তার জ্ঞান না ফেরায় শাহ আলমকে এলমহার্স্ট হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। জ্যাকসন হাইটসের নিকটে অবস্থিত এই হাসপাতালে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করে জমে থাকা রক্ত অপসারণ করা হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানান।

৫ বছর আগে অভিবাসন মর্যাদায় স্ত্রী ও ১৩ বছর বয়েসী কন্যা নোভাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম। বছর দুয়েক আগে তার স্ত্রীর ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছে। অসুস্থ স্ত্রীর দেখভালের জন্যে নিজে কোন কাজও করতে পারছেন না। আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় বসবাস করছেন। এমনি অবস্থায় দুর্বৃত্তের হামলায় মৃত্যুপথযাত্রী শাহ আলমের অসুস্থ স্ত্রী এবং শিশু কন্যা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।যুক্তরাষ্ট্র সফররত (শাহ আলমের ভাতিজি) বাংলাদেশের ‘নারী উন্নয়ন শক্তি’র নির্বাহী পরিচালক ড. আফরোজা পারভিন সংবাদ পেয়ে এলমহার্স্ট হাসপাতালে যান এবং চাচার অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন। চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছেন যে, ৩/৪ দিন পর বলা যাবে শাহ আলমের সুস্থ হওয়ার কথা। তার যদি জ্ঞান ফিরে তাহলে তিনি ক্রমান্বয়ে সুস্থ হবেন। অন্যথায় আবারো তার মাথায় অস্ত্রোপচার করতে হবে এবং তা কোনোভাবেই সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায় না। তার আরোগ্য লাভের জন্য চিকিৎসকরা সকলকে দোয়া করতে বলেছেন।যুক্তরাষ্ট্রস্থ কুষ্টিয়া জেলা সমিতির সভাপতি মো. গিয়াসউদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র ইউনিটের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ এবং নির্বাহী সদস্য মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারও হাসপাতালে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলমের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছেন।

নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, শাহ আলমের মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের জন্যই হয়তো দুর্বৃত্তরা হামলা করেছিল। এটি ধর্মীয় অথবা জাতিগত বিদ্বেষমূলক কোন হামলা নয় বলে তদন্ত কর্মকর্তারা দাবি করলেও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ তা মানতে রাজি নন।এর ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ব্রঙ্কসের ক্যাসেলহিল সাবওয়ের অদূরে ক্যাসেলহিল এবং স্টার্লিং এভিনিউর কর্ণারে মো. খবির উদ্দিন ভূইয়াকে ৪/৫ জন যুবক এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি মেরে মারাত্মক জখম করে। খবির উদ্দিনের দেশের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়। তিনি সপরিবারে দীর্ঘদিন ওই এলাকায় বসবাস করছেন।

জানা গেছে, স্থানীয় বাংলাবাজার এভিনিউতে একটি স্টোর থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার পথে অতর্কিত হামলার শিকার হন তিনি। দুর্বৃত্তরা অকস্মিকভাবে তার মুখে এবং শরীরে মারাত্মকভাবে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ফেলে দেয়। তারা তার সাথে থাকা ফোন কিংবা অর্থ কড়ি কোন কিছুই নেয়নি। তার আর্তচিৎকারে এ পথ দিয়ে যাওয়া এক বাঙালি ট্যাক্সি ড্রাইভার সাহায্যে এগিয়ে আসেন এবং পুলিশকে ফোন করেন। এসময় দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।স্থানীয় কমিউনিটি লিডার মোহাম্মদ এন মজুমদার এই হামলা প্রসঙ্গে এ সংবাদদাতাকে আরো জানান, অ্যাম্বুলেন্সসহ পুলিশ এসে তাকে স্থানীয় জ্যাকবী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা শেষে পরদিন ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে করে খবিরউদ্দিনকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। তিনি এখন বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন।এন মজুমদার আরো বলেন, এলাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ধর্মীয় ও জাতিগত বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। তবে নির্জন পথে চলাচলে সকলেরই সাবধানতা অবলম্বনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।এন মজুমদার উল্লেখ করেন, ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খবিরউদ্দিনের ওপর হামলার পরই আরও দুই বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের আঘাতের মাত্রা ততটা গুরুতর নয় বলে হাসপাতালে যেতে হয়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn