সোমবার (১৬ এপ্রিল)দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আমরা একটি রিকশায় করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আন্দোলনকারী আহত ছাত্রদের দেখতে যাই। কিন্তু হাসপাতালের সামনে পৌঁছা মাত্র আমাদের রিকশা থেকে জোর করে নামিয়ে চোখ বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে কালো কাচ দেওয়া সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দাবি করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন যুগ্ম আহবায়ক দাবি করেছেন রাশেদ খান, নুরুল হক এবং ফারুক হোসেন। ছাড়া পাওয়ার পর বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তারা। তারা বলেন,‘কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সারাদেশে কমিটির নেতারা সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে,আমাদের ওপর জীবননাশের হুমকি আছে। শুধু তাই নয়, আমাদের পরিবারও হুমকির মুখে আছে। এ অবস্থায় আমরা সরকারের কাছে পরিবারসহ কমিটির সব সদস্যের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি। যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, ‘আজ  ১২ টার পরে সংবাদ সম্মেলন শেষে ঢাকা মেডিকেলে আহত আন্দোলনকারী ছাত্রদেরকে দেখতে যাই। যখন মেডিক্যালের (হাসপাতালের) ইমার্জেন্সি গেটে পৌঁছাই তখন কালো গ্লাসের দুটি হায়েস গাড়ি ও কয়েকটি মোটর সাইকেলে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন আমাদের আটকিয়ে রিকশা থেকে নামিয়ে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে। পরে আমাদেরকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। তখন তারা আমাদেরকে বলে, আমাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হবে। ভিডিও দেখানো হবে। কিন্তু নিয়ে গিয়ে কিছুই বলেনি। কোনও কথা জানতেও চাওয়া হয়নি, ভিডিও দেখানো হয়নি। শুধু বলেছে, আমাদের ওপর নাকি হামলার আশঙ্কা ছিল, তাই তুলে নিয়ে আসছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে যদি তথ্য নেওয়ার প্রয়োজন থাকতো তাহলে আমাদেরকে ডাকলে স্বেচ্ছায় যেতাম। কিন্তু, এভাবে চোখ বেঁধে তুলে নেওয়ার কারণ কি?’ তিনি বলেন,‘আমাদেরকে তুলে নেওয়ার সাথে সাথেই ভেবেছি আর হয়ত জীবিত ফিরতে পারবো না।’

ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইল তিনি বলেন, ‘আমদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন আমাদেরকে তুলে নেওয়া দেখে ফেলেছিল এবং সঙ্গে সঙ্গে মিডিয়াতে নিউজ হওয়ার ঘটনায় তারা তোপের মুখে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। না হলে হয়ত আজ আমরা পৃথিবীর আলো আর দেখতে পেতাম না।’ নুরুল হক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তাকে স্বাগত জানিয়ে আমরা আনন্দে মিছিল করে আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু তারপরেও আজ  আমাদের তুলে নিয়ে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাই।’ রাশেদ খান বলেন, ‘আজ আমাদরকে তুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার বাবাকে ঝিনাইদহ সদর থানায় নিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে। তাকে দিয়ে জোর করে স্বীকার করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে আমি শিবির করি, আমার বাবা জামায়াতের লোক। কিনন্তু,আজ যদি সাধারণ ছাত্র হিসেবে আমি ন্যায্য দাবি করি তাহলে এভাবে হয়রানি কেন করা হবে? আমি কি আমার অধিকার চাইতে পারি না? আমি কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নই। তাহলে কেন শিবির আপবাদ দেওয়া হবে? আজ আমরা হুমকির মুখে, আমাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। নুরুল হক বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সারাদেশে কমিটির নেতারা সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি,আমাদের ওপর জীবননাশের হুমকি আসছে। শুধু তাই নয়, আমাদের পরিবারও হুমকির মুখে আছে। ফলে তারা সরকারের কাছে পরিবারসহ কমিটির সব সদস্যের নিরাপত্তার দাবি জানাই। এদিকে, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিকাল ৪টায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn