ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় কক্সবাজার উপকূল থেকে তিন লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে এক লাখেরও বেশি মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অন্যদের সরিয়ে নেয়ার কাজও পূর্ণ উদ্যোমে চলছে। উপকূলবাসীর নিরাপত্তায় ৫৩৭টি আশ্রায়নকেন্দ্রকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া উপকূলবর্তী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রায়নকেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি চার হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিকেল টিম। খোলা হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার বিকাল ৬টা নাগাদ কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে মাত্র ৩৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। এটি কক্সবাজারের কুতুবদিয়া হয়ে হাতিয়া, স্বন্দ্বীপে আঘাত হানতে পারে। এজন্য বিকাল থেকে কুতুবুদিয়ার উত্তর ও দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবর ডেইল এলাকাসহ পুরো উপজেলায় ৫২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করছে।
এদিকে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা আর বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পৃথক প্রস্তুতি সভা করে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় জানানো হয়, উপকূলের অন্তত তিন লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার সিদ্ধান্তের পর কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। তিনি জানান, দূর্যোগকালীন সময়ে নিরাপদে নিয়ে আসা লোকজনের জন্য সেহেরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া প্রথম সভার পরপরই উপকূলবর্তী এলাকাসমূহে দুপুর ১টা থেকে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সংকেত ও সম্ভাব্য ভয়াবহতা নিয়ে সতর্কতামূলক মাইকিং চলছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজারের আটটি উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ মেডিকেল টিম গঠনসহ সর্বাত্মক আগাম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।ছুটিতে থাকা চিকিৎসক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপকূল এবং পাহাড়ের পাদদেশে জনসাধারণকে সন্ধ্যার মধ্যে সরিয়ে আনতে কাজ করছে সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসক জানান, কুতুবদিয়ার প্রতিটি ইউনিয়ন, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কুতুবজুম, সদরের পোকখালী, চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল, পেকুয়ার রাজাখালী, উজানটিয়া, মগনামা, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, সেন্টমার্টিন ও বাহারছড়া ইউনিয়নের লোকজনকে বিকালের আগে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। যারা আসতে চাইবে না তাদের জোর করে নিয়ে আসার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, পেকুয়ার  উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালি, সদরের পোকখালী, চৌফলদন্ডী, মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটায় মাইকিং করা হলেও কেউ বাড়ি থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছে না। তাদের মতে, বেড়িবাঁধের চারদিকে খোলা, বাঁচার কোনো উপায় নেই। মাইকিং ও স্থান ত্যাগ করে লাভ কী?
জেলা প্রশাসনের সভায় কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ক্রমে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি সোমবার রাত নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এখন বাতাসের গতিবেগ কম থাকলেও সন্ধ্যার পর গতিবেগ বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে জোয়ার থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এমনটি হলে উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর রোববার মধ্যরাতে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দফতর ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেলের তালিকা অনুযায়ী এর নাম দেয়া হয় ‘মোরা’। থ্যাইল্যান্ডের প্রস্তাবে এ নাম রাখা হয়।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn