পেকুয়ায় দুই ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি: ২৫ জন গুলিবিদ্ধ
জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামার ফুলতলা স্টেশনে দুই ঘন্টাব্যাপী গুলি বর্ষণের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন ব্যবসায়ী ও পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। স্থানীয় এক সন্ত্রাসী বাহিনীর ১৫/২০ জনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল অতর্কিত এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণের এ ঘটনা ঘটায়। গুলি বর্ষণের ঘটনায় তিন ঘন্টা ধরে পেকুয়া-মগনামা সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এসময় আতঙ্কে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শনিবার (৩ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শুরু হয়ে এ ঘটনা রাত ৯টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এতে মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোক্তার মেম্বার, নাজু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ, ওয়াহেদ সওদাগর, করিম সওদাগর, আছাবউদ্দিন সওদাগর, আবু হানিফ, জোবায়ের সওদাগর, আবু ছৈয়দ, ফজল কাদের, রেজাউল করিম সওদাগর, মঞ্জুর, জসিম, বেলাল সহ ২০/২৫ জন এলাকাবাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় বলে জানান এলাকাবাসী।
আহতদের পেকুয়া, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও চট্রগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, পুলিশের উপস্থিতিতেও অস্ত্রধারীরা ফুলতলা ষ্টেশনের পাশ্ববর্তী করলিয়াপাড়া, বহদ্দারপাড়া, লালমিয়ারপাড়া, মৌলভীপাড়া সহ আশ-পাশের এলাকায় হামলা চালায়। এসময় ৫/৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ১০/১২টি বসতবাড়ীতে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বহদ্দারপাড়ার উলামিয়ার পুত্র নাজুকে অস্ত্রসহ আটক করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, শনিবার (৩ জুন) ইফতারের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফুলতলা ষ্টেশনে খালেদ মোশাররফকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘেরাও করে সন্ত্রাসীরা। এসময় আশ-পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা প্রায় দুই ঘন্টা ধরে ফুলতলা ষ্টেশন ও আশ-পাশের ৫টি গ্রামে গুলি চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট ও হামলা চালায়।
খালেদ মোশাররফ নামে স্থানীয় একজন জানান, আমার স্ত্রী হামিদা আক্তার মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান। ইউনিয়ন পরিষদের একটি দুর্নীতির বিষয়ে চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম এবং পিআইও সৌভ্রাত দাশকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি বর্তমানে দুদক তদন্ত করছে। এ অবস্থায় মামলাটি প্রত্যাহারে চেয়ারম্যান ওয়াসিম আমাকে চাপ দিয়ে আসছে। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে হত্যারও হুমকি দেয়। সর্বশেষ গতকাল তারা হত্যার উদ্দেশ্যে ফুলতলা ষ্টেশনে আমাকে ঘেরাও করলে এলাকাবাসী প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। এসময় সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া গুলিবর্ষণ শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শী করলিয়া পাড়ার বাসিন্দা আকতার আহমদ, হাজী জাহাঙ্গীর আলম, ফয়সাল চৌধুরী জানান, শনিবার ইফতারের পর ফুলতলা ষ্টেশনে হঠাৎ করেই আফজলিয়াপাড়ার বাসিন্দা হত্যাসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামী আলী আকবর বাদল, জয়নাল, আবু ছৈয়দ, আহমদ কবির রদক, আনছার, সোনাইয়্যা, আরকান, আনোয়ার, মুগুল, নেজাম, মো. ইউনুছ প্রকাশ গুরাইয়্যা, আমজাদ, আশরাফ মিয়া, আমির সহ ১৫/২০ জনের একদল সন্ত্রাসী একাধিক অস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে ২০/৩০ জন আহত হয়। আতঙ্কে লোকজন দিকবিদিক ছুড়তে থাকে।
মগনামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী বাবুল জানান, ওয়াসিম বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে এলাকার নিরীহ লোকজনকে আহত করেছে। আহতদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যবসায়ী ও নিরীহ পথচারী। পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মঞ্জুর কাদের মজুমদার শনিবার রাতে বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে। একজনকে আটকও করা হয়েছে। মনে হয় ১০/১৫ জন আহত হয়েছে। এখনও আমরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করছি।