পৌর মেয়র জগলুলে’র প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে মুখ খুললেন মতিউর রহমান
ইমানুজ্জামান মহী-
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্ষিয়ান নেতা আলহাজ মতিউর রহমান আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদ সদস্য সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুলের বিভিন্ন প্রোপাগান্ডার জবাবে মুখ খুলেছেন। ‘সুনামগঞ্জ বার্তা’ অনলাইনের পক্ষ থেকে ফোনে তর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র বিভিন্ন সভায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। মেয়রের সাথে নানা ইস্যুতে তার ঈমানী ঐক্য ত্তৈরী হয়েছিল স্মরন করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘যাদের ঈমানে দূর্বলাতা আছে তাদের সাথে ঈমানদারদের কখনো ঐক্য হয় না।‘
বিগত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচনের পরে কিছু ইস্যু নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মতিউর রহমান, পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলুল ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুটের মাঝে ঈমানি ঐক্য প্রতিষ্টিত হয়েছিল। তখন একমঞ্চ থেকে তারা তিনজন এই ঐক্যর ঘোষনা দিয়েছিলেন। বছর যেতে না যেতেই তাদের সেই ঈমানি ঐক্যে চির ধরতে শুরু করেছে। প্রকাশ্যে এখন তারা একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন।
মূলতঃ জেলা আওয়ামীলীগের নব গঠিত কমিটতে স্থান পাওয়া না পাওয়া নিয়েই এই দ্বন্ধের সূত্রপাতা। পূর্নাঙ্গ কমিটিতে জগলুল ও মুকুট দু’জনই সিনিয়র সহ-সভাপতি পদের দাবীদার। সভাপতি মতিউর রহমানের পছন্দ নূরুল হুদা মুকুট। জগলুল এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। জগলুল ভেবে ছিলেন মুকুট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে এ পদের দাবী করবেন না । মুকুটকে খুশী করার জন্য জগলুল তাই জেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগীতা করেন।
সভাপতি মতিউর রহমান ও নূরুল হুদা মুকুট সিনিয়র সহ-সভাপতির পদটি নিরাপধ করতে চান। জগলুলকে তাই কেন্দ্রে পূর্ণবাসিত করার ব্যবস্থা করেন। দলের জাতীয় পরিষদ সদস্য মনোনীত হতে তারা তাকে উৎসাহিত করেন। জাতীয় পরিষদ সদস্য মনোনীত হলে মেয়র জগলুল আর জেলা কমিটিতে পদ দাবী করবেন না এটাই তাদের ধারনা ছিল। জগলুল জাতীয় পরিষদ সদস্য মনোনীত হয়ে প্রথম ভেবেছিলেন লাভবান হয়েছেন। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন ভাবছেন জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদটাই লাভজনক ছিল।
জেলা আওয়ামীলীগের বিগত ৫ ফেব্রুয়ারী কাউন্সিলের আগ থেকেই জগলুলের সিনিয়র সহ-সভাপতি হবার টার্গেট ছিল। সম্মেলনে মুকুটকে তিনি তাই সাধারন সম্পাদক হিসাবে সমর্থন জানান। মুকুট সাধারন সম্পাদক না হওয়ায় তিনি কিছুটা হতাশ হন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন এলে আবার সুযোগ আসে। জগলুলকে আশ্বাস দেয়া হয় মুকুট চেয়ারম্যান হলে তুমি সিনিয়র সহ-সভাপতি হবে। নির্বাচনের পর হিসাবে যখন গড়মিল দেখা দেয় তখনই জগলুল ঐক্য ছেড়ে একলা পথে হাটতে থাকেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতিউর রহমান যেদিন নিজেকে আগামী সাধারন নির্বাচনে সুনামগঞ্জ ৪ আসন থেকে দলীয় প্রার্থী হবার ঘোষনা দেন সে দিন থেকে মেয়র জগলুল প্রকাশ্যে মতিউর-মুকুট বিরোধী ভূমিকায় অবতির্ন হন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেকে নৌকার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে প্রচার করতে থাকেন। গত বুধবার রাতে মূলতঃ তাই তিনি পৌরসভা মিলনাতনে নিজের প্রার্থীতা ঘোষনা করার জন্য মতবিনিময় সভায় করেন। মতবিনিময় সভায় তিনি জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃত্বকে ব্যর্থ নেতৃত্ব আখ্যায়িত করেন।
জগলুলের দেয়া বক্তব্যের প্রতি জেলা সভাপতি মতিউর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারনে ঈর্ষায়িত হয়ে সে এসব মিথ্যা প্রপাগান্ডা করছে। বছর না যেতেই ঈমানী ঐক্যে কেন ভাঙ্গনের সুর বাজছে? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ঈমানদারের সাথে ঈমানদারের ঐক্য হয়। ঈমানে যাদের দূর্বলতা আছে তাদের সাথে ঈমানদারদের ঐক্য হয়না। তিনি বলেন, মিথ্যাচারের একটা সীমারেখা থাকা দরকার। আমার স্বাধীনতা সময়ের ভুমিকা নিয়ে সে প্রশ্ন তুলে। ৭১ সালে আমার পরিবারের কি ভূমিকা ছিল মাননীয় প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করলে যে কেউ জানতে পারবে। মুক্তিযোদ্ধের সংগঠকদের অনেকে জীবিত নেই না হলে তাদের কথা বলতাম। তখনতো সে দুধের শিশু। ৭৫ সালের কথা বলে। আমরা কোথায় ছিলাম? ৭৯ সালের আগেতো সে রান্না ঘরে থাকতো। পুরাতন বাসষ্টেশন ছিল তার শেষ সীমানা।
আমার রাজনৈতিক বয়স নিয়ে কটাক্ষ করে। ৫৬ বছর না কতো বছর ধরে আমি রাজনীতিতে আছি। পরীক্ষা কি তার কাছে আমার দিতে হবে? রাজনৈতিক সনদ কি তাকে দেখাতে হবে? ৬ মাসে এলাকাবাসী জেলার শীর্ষ নেতাদের দেখা পায়না। সবাই জানে তৃনমূলের সাথে আমার কি সম্পর্ক। এখন ডিজিটেল যুগ কোন কিছু গোপন করা যায় না। দেশে কি হচ্ছে লন্ডনে বসে খবর পাওয়া যায়। আমি ঢাকা কদ্দিন আর এলাকায় কতো দিন এলাকাবাসী সবাই জানেন।। তার কথায় কি আসে যায়। সে আমার নাম উল্লেখ না করলেও কাকে ইঙ্গিত করে এ সব কথা বলছে তা সবাই বুঝে। তিনি বলেন, জেল কাটলেই রাজনীতিবিদ হওয়া যায় না । তার ৫ ভাই কি জন্য? কোন রাজনৈতিক কারনে কারাগারে ছিলেন? অনেকে জানে। চোর,সন্ত্রাসী ডাকাতরাও জেলে যায়। তাই বলে এরা কি সবাই রাজনীতিবিদ?
জেলা সভাপতি মতিউর রহমান স্থানীয় আওয়ামীলীগের ঐক্যের ব্যাপারে বলেন, ভালো মানুষকে যারা এক সময় ছাত্রলীগ করতে দেয়নি। যুবলীগ করতে দেয়নি। আজ তারা তাদেরকে আওয়ামীলীগ করতে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, এরা দল থেকে বহিস্কার হয়। এরা আওয়ামীলীগ করে কিন্তু নৌকায় ভোট দেয়না। দলের আদর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে এরাই জামাত শিবিরের সাথে আতাৎ করে।
ক্ষমতার অপব্যহার করে কতো কোটি টাকা কে বানিয়েছে সঠিক তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসবে। কিচেন মার্কেট সহ বিভিন্ন মার্কেটে নামে বেনামে কতো দোকান কোঠা কার আছে সবাই জানে। কোটি টাকা দিয়ে মনোনয় কিনে আনবে বলে তার ঘনিষ্ট জনেরা প্রচার করে। এ টাকা কোথা থেকে আসে? টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনা যায় প্রচার করে মনোনয়ন ব্যবস্থাকে এরা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এরাই দু’জনকে এক সাথে দেখলে গ্রুপিং করে। ঘাপ্টিমারা দলের এসব শত্রুদের চিহ্নিত করে নব গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিকে শক্তিশালী করে গঠন করতে চাই। আগামী নির্বাচনে সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি আসন আমরা নেত্রীকে উপহার দিতে চাই। সে লক্ষে কাজ করছি। অতিথের সকল ভেদাভেদ ভুলে নৌকাকে বিজয়ী করতে চাই। নৌকার বিজয় যাতে চিনিয়ে আনা যায় সে জন্য যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আমরা তার পক্ষে কাজ করবো।
উল্লেখ্য যে, গত বুধবারের মতবিনিময় সভায় মেয়র আয়ূব বখত জগলুল জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষনেতাদের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মিত হচ্ছে। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। সারাদেশে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন ও সফলতা সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা তৃণমূলে সে কৃতিত্বের কথা তৃণমূলে পৌছে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। নেতারা দলের চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতে বেশী ব্যস্ত। তারা ঢাকায় বিলাসী জীবনযাপন করেন। ৬ মাসে একবারও এলাকার নেতা কর্মীরা তাদের দেখা পান না। জগলুল আরো অভিযোগ করেন জেলার শীর্ষনেতা গত ইউপি নির্বাচনে টাকা খেয়ে অযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থীরা কারনেই পরাজিত হয়েছে। তিনি জেলা নেতাদেরে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে বলেন, এ সব ব্যক্তিদের জনগণের কাছে নিজের বা দলের জন্য ভোট চাওয়ার কোন অধিকার নেই।