শাহনেওয়াজ বাবলু::সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির পর কেটে গেছে ৯ মাস ১৭ দিন। গুলশান এভিনিউয়ের ‘ফিরোজা’য় কেমন আছেন ৭৫ ঊর্ধ্ব বেগম খালেদা জিয়া? এমন প্রশ্ন দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও। পারিবারিক ও চিকিৎসক সূত্রে জানা যায়, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো আগের মতোই। তিনি নিজে চলাফেরা করতে পারছেন না। ডায়াবেটিস এখনো কন্ট্রোলে আসেনি। মাঝেমধ্যে তিনি বারান্দায় এসে বসেন। গৃহপরিচারিকা ফাতেমা তাকে হাত ধরে নিয়ে এসে বারান্দায় বসান। বিশেষ করে বিকাল বেলা বেগম জিয়া বারান্দায় বসে কিছুটা সময় কাটান।

শারীরিকভাবে এখনো কোনো ইমপ্রুভ হয়নি। ট্রিটমেন্ট আগের মতোই চলছে। তিনি আগের মতো একটু বেলা করে ঘুম থেকে ওঠেন। ফ্রেশ হয়ে এক গ্লাস জুস পান করেন। তারপর জোহরের নামাজ আদায় করেন। পরে দুধ আর কর্নপ্লেক্স বা সুপ খান। আর বিকালে চা পান করেন। রাত ১১টার দিকে ভাত খান। বাসায় প্রতিদিন তার পছন্দের খাবার রান্না করা হয়। মাঝেমধ্যে তার বোন সেলিমা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা তাদের বাসা থেকে খালেদা জিয়ার জন্য খাবার রান্না করে আনেন। বেগম জিয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। নিয়মিত কোরআন শরিফ তিলাওয়াত ও অজিফা পড়েন। এ ছাড়া দিনের বাকি সময় টিভি দেখেন, পত্রিকা পড়েন আর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটান।

সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে গত বছর ২৫শে মার্চ মুক্তি পান খালেদা জিয়া। তিনি তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ওঠেন। দলের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। লন্ডন থেকে চিকিৎসায় সমন্বয় করছেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। যে শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে প্রথমেই ছিল বাসায় বসে চিকিৎসা নিতে হবে। কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না।

জানা যায়, গুলশানের বাসভবন ফিরোজার দোতলায় তার রুমেই থাকেন খালেদা জিয়া। করোনাভাইরাসের কারণে দলের কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন না। তবে স্বজনরা তার বাসভবনে যান। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা প্রতিদিন যান। বাসার সবকিছু তিনিই তদারকি করেন। মোবাইল ফোনে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, কোকোর

দুই কন্যা জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন খালেদা জিয়া। প্রায় দিন বিকালে ফিরোজায় যান তার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ভাই শামীম এস্কান্দার, ভাতিজা শাফিন এস্কান্দার ও তার স্ত্রী অরণী এস্কান্দার, ভাতিজা অভিক এস্কান্দার ও ভাগ্নে শাহরিয়া হকসহ অন্য স্বজনরা। তাদের সঙ্গে দীর্ঘসময় গল্প করে কাটান খালেদা জিয়া। জরুরি কোনো প্রয়োজন হলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা দলের আইনজীবী কোনো নেতাকে তিনি ডেকে পাঠান। তখন তারা সাক্ষাৎ করেন। এছাড়া মামলা সংক্রান্ত কাজে আইনজীবীরা তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তার বোন সেলিমা ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ওনার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসাও আগের নিয়মেই চলছে। তিনি মানসিকভাবে খুব ভালো আছেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে সর্বশেষ আপনার কবে সাক্ষাৎ হয়েছে জানতে চাইলে সেলিমা ইসলাম বলেন, আমি গত কয়েকদিন ধরে কিছুটা অসুস্থ। তাই তার সঙ্গে ইদানীং দেখা হয়নি। তবে আমি তার নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত চিকিৎসক প্রতিনিধিদলের প্রধান ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। তার ডায়াবেটিস ওঠানামা করে। এছাড়া থেরাপি দেয়ার জন্য একজন নার্স রয়েছেন, তিনি নিয়মিত থেরাপি দেন। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে রিউমাটিজ আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন।

২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাজীবন শুরু করেন বেগম খালেদা জিয়া। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তার সাজার রায় হয়। তার বিরুদ্ধে আরো ৩৪টি মামলা রয়েছে। ২৫ মাসেরও বেশি সময় কারাবন্দি থাকার পর গত বছর ২৫শে মার্চ খালেদা জিয়া করোনাকালে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘মানবিক বিবেচনায়’ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে ৬ মাসের জন্য মুক্তি পান। এরপর আরো এক দফায় তার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তারপর থেকে তিনি গুলশানের বাসা ‘ফিরোজায়’ রয়েছেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn