ফেসবুকে এসে যা বললেন ধর্ষণে অভিযুক্ত মামুন
বার্তা ডেস্ক :: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর করা ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত ছাত্র অধিকার পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাসটি লিখেন তিনি। ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘‘মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার ধর্ষিত ছেলের আর্তনাদ! আমি হাসান আল মামুন, যে ছেলেটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের অধিকার আদায়ে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রধান হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। এই আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছি, আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে বানানো হয়েছিল জামাত, আমাদের নামে দেওয়া হয়েছিলো শিবির ব্লেইম এবং বিএনপির তারেক রহমানের কাছ থেকে ১২৫ কোটি টাকা পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ, যার কোনোটির সাথে আমাদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা ছিলোনা বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের হয়ে টানা ৩ বার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন, ২ বার আমার নেতৃত্বে আন্তঃবিভাগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরভ অর্জন করে ডিপার্টমেন্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভলিবল টিম ও মুহসীন হলের ফুটবল ও ভলিবলে টিমে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল টিমের নিয়মিত খেলোয়ার ছিলাম আমি। এছাড়াও আমি নেত্রকোনা জেলা ফুটবলের টিমের একজন সদস্য। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বহু সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে অনেকের সাথে আমার পরিচয় হয়। দলমত নির্বিশেষে কেউ আমার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি। যখনই আমরা নতুন ধারার রাজনীতি করার ঘোষণা দিয়েছি এবং সারাদেশের মানুষের মাঝে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিলো তখন আমার নামে ও সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের নামে ধর্ষণের মত গুরুতর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যা রাজনৈতিক ভাবে আমাকে এবং আমার সংগঠনকে হেয় করার জন্য এবং দেশের মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার জন্য করা বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।
দীর্ঘ ৮ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ও আড়াই বছর সংগঠনের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনে যারা আমাকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা হয়তো বলতে পারবেন কেমন ছেলে আমি। অভিযোগকারী মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে আমাকে, আমার পরিবার ও সংগঠনের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে। আচ্ছা এই সমাজে কি শুধু মেয়েদের পরিবার-পরিজন আছে! ছেলেদের পরিবার কিংবা পরিজন নেই! মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে বাবার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। চরম বাস্তবতায় সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গণমানুষের অধিকার আদায়ে কাজে মনোনিবেশ করেছিলাম।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজ সারাদেশের মানুষের কাছে আমাকে মিথ্যা মামলায় ধর্ষক বানানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর মতো এই মেয়ের সাথেও আমার পরিচয় ছিলো কিন্তু মেয়ে যে অভিযোগ করেছে তা আমাকে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে করেছে। মেয়ে নিজেই এক সময় স্বীকার করে যে সে পরিকল্পিত ভাবে আমাকে ফাঁসাতে এগুলো করেছে, নিচে একটি স্ক্রিনশট এবং তার ভিডিও দেয়া হলো। স্ক্রিনশট সত্য মিথ্যা বলে অনেকেই মতামত দিতে পারেন, কিন্তু এই চ্যাট এখনও আমার ফোনে আছে। প্রয়োজনে আমি আদালতের সামনে সরাসরি তা উপস্থাপন করবো।
সততা- নিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষতাই আমার জীবনে আজ কাল হয়ে দাঁড়ালো। আমি এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। আপনারা যারা আমাকে চিনেন বা জানেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, যদি আমি অপরাধী হয়ে থাকি তাহলে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবেন আর যদি নিরপরাধ হয়ে থাকি আমার পাশে দাঁড়াবেন। ভয়াবহ দুঃসময়ের মুখোমুখি জীবন!’’ এদিকে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়েরের পর এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ এনে নয়জনের নাম উল্লেখ আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সেই ছাত্রী। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগ থানায় ডিজিটাল অ্যাক্টে মামলাটি দায়ের করা হয়। তথ্যমতে, মামলার অভিযুক্ত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা হলেন, তামান্না ফেরদৌস শিখা, তামান্না আকতার, তাজুল ইমলাম আকাশ, শারমিন রিজিয়া, এইচ এম হোসাইন বিন নুর, মো. তুহিন মোল্লা হৃদয়, মেহেদী হাসান সুজন, রেজাউল করিম কাজল ও ফেসবুক গ্রুপ স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মামলায় ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর থেকে ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি এবং গ্রুপে আমার নামে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মিথ্যা সংলাপ পাবলিক পোস্ট, কমেন্ট ও শেয়ারের মাধ্যমে প্রচার করে আমার ব্যক্তিগত ও সামাজিক মর্যাদাহানি করে আসছে। এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছি। এই ব্যাপারে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ শাস্তির দাবি জানান ওই ছাত্রী। এর আগে গত ২১ ও ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ ৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ এনে লালবাগ ও কোতোয়ালি দুই থানায় দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। ধর্ষণের মামলা দায়েরের পর বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে হাসান আল মামুনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়ে ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। বুধবার বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।