বনানীর আলোচিত ধর্ষণের প্রমাণ পায়নি ফরেনসিক বিভাগ
ঢাকা: বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী দেরিতে পরীক্ষা করতে আসায় বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে আলোচিত ধর্ষণের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান। ওই দুই ছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার (ফরেনসিক রিপোর্ট) পর প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উল্লেখ করা হয়েছে।ধর্ষণের ঘটনায় গঠিত ৫ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বৈঠক শেষে এ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষা কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ড. সোহেল মাহমুদ। ওই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন একই বিভাগের ডা. কবির হোসেন, ডা. মমতাজ আরা, ডা. নিলুফা ইয়াসমিন ও ডা. কবিতা সাহা।
বন্ধু সাদনান সাকিফের প্ররোচণায় ২৮ মার্চ বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে ধর্ষণের শিকার হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণী। ঘটনার এক মাসেরও বেশি সময় পর ২ মে রাজধানীর বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেন তারা। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে দুই তরুণী বলেন, আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম আবদুল হালিম) ঘটনার রাতে তাদের দু’জনকে সারা রাত হোটেলটির দুটি কক্ষে আটকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তারা। ঘটনার দীর্ঘদিন পর অভিযোগের কারণ হিসেবে তারা (দুই তরুণী) সামাজিকভাবে হেয় হবেন ভেবে এতদিন ঘটনাটি গোপন রেখেছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
তারা থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে আরও বলেন, ‘সেদিন ধারণকৃত সেই ভিডিও ধর্ষকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশসহ তাদের খুন ও গুম করার হুমকি দিচ্ছে বিধায় তারা থানায় অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছেন।’ ওই ঘটনায় সাফাত আহমেদের আরেক বন্ধু সাদনান সাকিফ ছাড়াও সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদকেও দায়ী করা হয়। এদিকে এ ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয়। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মেলায় বনানী থানা পুলিশ ৪ দিনের মাথায় ৬ মে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। আর ৭ মে অভিযোগকারী দুই তরুণীকে পুলিশ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। দুই শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
ওই সময় ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ দুই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ওই সময় বলেছিলেন, ‘ঘটনাটি অনেকদিন আগের হওয়ায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া কঠিন হবে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ধর্ষণের পর সাধারণত ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়।’ তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সে সময় বলেছিলেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড পর্যালোচনা করে মতামত দেবেন। আর ওই মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।’
এদিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াও আলোচিত ওই ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি ঘটনার রাতে দুই তরুণীর পরা সালোয়ার-কামিজ জব্দ করেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে ১০ মে জব্দকৃত সালোয়ার-কামিজ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠিয়ে দেন। জব্দকৃত ওই আলামতের ফরেনসিক রিপোর্ট এখনও মামলার তদন্ত কর্তৃপক্ষের হাতে আসেনি।