বিএনপিকে ইসলামপন্থী রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে হবে
গত ৭ই এপ্রিল মোদি-হাসিনা বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা,ঋণ, তথ্য-প্রযুক্তি,বিদ্যুৎ-জালানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ২২টি চুক্তি ও ৪টি সমঝোতা স্মারক নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিদের মতামত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি লিখা।
অন্যান্য চুক্তিগুলো নিয়ে সাধারণ পাবলিকের মাতামাতি না থাকলেও প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবীসহ সকলেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তাদের স্বারসংক্ষেপ তুলে ধরছেন।
তার কয়েকটি এই-
১.চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, বাংলাদেশ ভারত ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবেনা।
২.ভারতের নিন্মমানের অস্ত্র নিয়েই আমাদেরকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
৩.আমাদের অস্ত্রের সক্ষমতা সম্পর্কে তারা সবসময় অবগত থাকবে।
৪.রাশিয়া ও চীনের সাথে আমাদের সম্পর্কে ছিড় ধরবে। যেহেতু তারা আমাদের অস্ত্রের প্রধান যোগানদাতা ছিল।
৫.অন্য মিত্র না থাকলে ভারতের ধরে তা চড়ামূল্য হলেও তাদের অস্ত্রই কিনতে হবে।
৬.২৫ বছরের এই চুক্তি বাস্তবায়নের কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে ভারতের একটি প্যারামিলিটারিতে পরিণত হবে।
আরো অনেকগুলো অপকারিতা উল্লেখ করা যেতে পারে।
যাহোক, ক্ষমতাসীন দলের কট্টরপন্থী সমর্থকরা বিএনপির ব্যাপারে যতই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করুক না কেন, সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কিন্তু এই চুক্তির ব্যাপারে বিএনপি কী পদক্ষেপ গ্রহন করে সেদিকে তাকিয়ে রয়েছে। সাথে বাম ঘরানার কিছু দল এবং ধর্মভিত্তিক একাধিক দল তারা অভিমত দিয়েছে যে, তারা চুক্তিটির প্রতিবাদ করলেও ছোটদল হিসাবে যথাযথ প্রতিক্রিয়া হবে না। তারা বলছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব না থাকলে সেখানে আমরা দল বা রাজনীতি করার কোন মানে হয়না। বড়দল হিসাবে বিএনপিকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এখন সবার প্রশ্ন?
বিএনপি কি পারবে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে? এক্ষেত্রে আমার ভাবনা-
আচ্ছা! বিএনপির রাজনীতির মূলভিত্তি কী? বিএনপি কি কখনো সুসংগঠিত দল ছিল? উত্তর হবে না। তারপরেও তারা বারবার ক্ষমতায় যাওয়ার প্রেক্ষাপট কী! আসলে বিএনপি হচ্ছে একটি আওমী-অ্যান্টি সেন্টিমেন্ট।
দলটির জন্ম হয়েছিল এক মাহেন্দ্রক্ষণে! যখন বাংলার মানুষ লালঘোড়ার দৌরাত্ম্য-এ অসহায়,বাকশালের নামে দিশেহারা জনগোষ্ঠীর স্বাধিনতা হরন হয়েছিল এমন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে মেজর জিয়া ও তার দলের আবির্ভাব। তখন, মূলত ভারতের প্রভুত্বমূলক আধিপত্য আর আওয়ামীলীগের বাকশালী মানসিকতা এদুটি বিষয়ের বিরুদ্ধে বিএনপির স্পষ্ট অবস্থানের কারণেই দলটি জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠেছিল।
অতএব, এদুটি বিষয়ই দলটির সফল রাজনীতির মূলভিত্তি। দলটি যতদিন স্পষ্টভাবে আধিপত্যবাদী ভারত-বিরোধিতার রাজনীতিকে মূল প্রতিপাদ্য বানিয়েছে, তখনি বাংলার গণ-মানুষ তাদেরকে ম্যান্ডেড দিয়েছে। যখনি আপোষকামিতার রাজনীতি চর্চা শুরু করেছে,
নক-দন্তহীন ব্রাগ্যে পরিণত হয়েছে।
সুতরাং, বিএনপি যদি আবার সফলতা পেতে চায়,তাহলে ভারতকে তৈলমর্দন আর তোষণনীতি পরিহার করে তাদেরকে তাদের মূল রাজনীতিতে ফিরে আসতে হবে। তা হচ্ছে আধিপত্যবাদী ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষনা করা। বলতে হবে এভাষায়-
সিমান্তে যদি আর একটি প্রাণও ঝড়ে পড়ে, ভারত বাংলাদেশে নেপালের ভাগ্য বরণ করতে হবে। বিনাশুল্কে ভারতের একটি গাড়িও চলতে দেওয়া হবে না।অন্যথায় প্রতিরোধ করা হবে। তিস্তাসহ প্রায় ৫৪টি অভিন্ন নদীর ন্যায্য পানির হিসসা না দিলে ভারতের সকল পণ্য বর্জন করা হবে। তিনবিঘা করিডোর অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে।
সফলতা চাইলে আরেকটি বিষয়েও বিএনপিকে মনোযোগী হতে হবে- তা হচ্ছে, চরম ডানপন্থী ভাষায় কথা বলা। ট্রাম্পের মত ক্যাসিনো ব্যবসায়ী খৃষ্টানী-উচকানী তথা চরম ডানপিটের তকমা নিয়েও হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা! গুজরাটের কসায়-খ্যাত মোদিও কিন্তু হিন্দুত্ববাদের জিগির তুলে তথা উলঙ্গ-ডানপন্থী সেজে দিল্লির মসনদে! ইউরোপের ব্রেক্সিটেও একই নিয়ামক কাজ করেছে।
অতএব, বিশ্বব্যাপি সামাজিক এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ কিন্তু স্পষ্টভাবে ডান-বামেই হয়ে যাচ্ছে! বাংলাদেশও এ গ্রহের বাইরে নয়।
ডান-বাম উভয় দিক রক্ষা করা যায়না, যাবেওনা। দুই নৌকায় আরোহণ করা চরম বোকামিও।
অতএব, অস্তিত্বরক্ষার আন্দোলনে খালেদা-তারেককে অবস্যই ইসলামপন্থীদের ভাষায় কথা বলতে হবে। চরম ডানপন্থীদের বুলি না আওড়ালে কখনো মেরুকরণও হবে না। আন্দোলনও সৃষ্টি হবে না। কেল্লাও ফতেহ হবেনা।
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সর্বপ্রাচীন এবং বৃহৎ একমাত্র সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামীলীগ। অথচ এই দলটি অতীত থেকে তো শিক্ষা গ্রহন করেনি। অধিকন্তু একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছে বারবার। ফলশ্রুতিতে, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার মত গৌরবগাঁথা উপাখ্যানও আজ ভূলুণ্ঠিত! তারা কি বিবেচনা করছেনা? (৬৯-৭১) পেরিয়ডে – জাতীয় নির্বাচনে তারা নিরংকুশ বিজয় পাওয়া এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া একটি দল! অথচ সেই দলটিই (৭২-৭৫) প্রেক্ষাপটে গিয়ে ১৫ই অগাষ্টের ভাগ্যবরণ কেন করতে হল? কারণ আর কিছু নয়, ঐদুটিই। ভারতকে বাংলাদেশে স্টাবলিশ করা এবং তাদের বাকশালী মানসিকতা! যেহেতু এই দুটি বিষয়ে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের চরম আপত্তি।
তাই আওয়ামীলীগকে এই মহা-দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের অনুভূতি বুঝে তাদেরকেও তাদের সোনালি রাজনীতি তথা (৬৯-৭১) পেরিয়ডে ফিরে যেতে হবে। ফেসবুকে পাঠকের মতামত