বিএনপি ছাড়া নির্বাচন প্রতিহত করা হবে : মির্জা ফখরুল
সরকারকে গ্যাসের মূল্য কমানো এবং পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। সেইসাথে বিএনপি এবং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর বাইরে যদি নির্বাচনের চেষ্টা করা হয়, তবে তা প্রতিহত করা হবে।
সেইসাথে সরকারকে গণবিরোধী আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে গ্যাসের দাম কমানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার জনবিচ্ছিন্ন, তাই একের পর এক জনবিরোধী চুক্তি করছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি এসব বলেন। এই কর্মসূচী চলে দুপুর বারোটা পর্যন্ত। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশজুড়ে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি।
কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল মান্নান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, আনোয়ার হোসাইন, তাইফুল ইসলাম টিপু, শহীদুল ইসলাম বাবুল, শরীফুল আলম, রফিক শিকদার, আমিনুল ইসলাম, সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, শরিফ উদ্দিন জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, গোলাম মোস্তফা সহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ব্যতীত নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা আগামী দিনে নিরপেক্ষ নির্দলীয় নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। এখানে কোনো মতেই কোনোভাবে যদি চিন্তা করে থাকেন যে, বিএনপিকে বাদ দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হবে তাহলে সে নির্বাচন দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না এবং সেই নির্বাচন প্রতিহত করবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন সময় হয়েছে জেগে উঠবার। সময় হয়েছে আমাদের প্রতিবাদী ও সোচ্চার হওয়ার। একটি নিরেপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের অংশ গ্রহণমূলক নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারকে আমরা বাধ্য করবো।
তিনি বলেন, জনগণের কাছে জবাব দিতে হয় না। সেকারণে তারা একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে এবং বিভিন্ন চুক্তি করছে। এমন কি গতকাল পরিবহন সেক্টর নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা উসকানি দিয়ে ধর্মঘটের নামে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করেছে। এছাড়া একজন শ্রমিককেও হত্যা করা হযেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলেছে। আমাদের রাজনৈতিক যে কথা বলার যে ক্ষমতা, গণতান্ত্রিক পরিসর তাকেও সঙ্কুচিত করা হচ্ছে এবং আমাদেরকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদেরকে সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করতে বারবার অনুমতি চেওয়া হলেও তা দেওয়া হয়নি। বিএনপির কোনো জেলা সম্মেলন ও কমিটি করতে দেওয়া হয় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার গণবিরোধী। জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যে সরকার আছে- সেটা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষের সরকার নয়। এরা নতজানু হয়ে বিভিন্ন চুক্তি করছে। যা বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এই অবস্থান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বলতে চাই গ্যাসের মূল্য বাড়ানো যাবে না। গ্যাসের মূল্য কমাতে হবে। এটা দেশের জনগণের সকলের দাবি।
সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এই কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ গণতন্ত্র আওয়ামী লীগের বাক্সে বন্দি, মানুষের ভোটাধিকার আওয়ামী লীগের বাক্সে বন্দি। এই সরকার নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। আমরা বলতে চাই, যদি আবার এই সরকার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো গায়ের জোরে নির্বাচনের নামে তামাশা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তাহলে জনগন আর কখনো বরদাশত করবে না।
তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, আর বেশিদিন সরকার তার পুলিশ বাহিনী দিয়ে, পেটুয়া বাহিনী দিয়ে জনগণকে আর ঘরে আটকিয়ে রাখতে পারবে না। বিএনপির নেতৃত্বে, দেশনেত্রীর নেতৃত্ব আমরা রাস্তায় নেমেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচনের দাবি আদায় করবোই ইনশাল্লাহ।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা অনেকেদিন ধরে ঘরে বসে কথা বলেছি। আজকে ঘরে ছেড়ে আঙিনায় এসেছি। আমরা ইচ্ছা করলে রাজপথে গিয়ে মিছিল করতে পারি। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আমরা প্রস্তুত। এ যাত্রা মাফ করলাম। এর পরের থেকে অনুমতি নিয়ে নয়, ঘরে নয়, রাজপথে নামব। এই সরকারের বাধা দেয়ার কোনো অধিকার নাই। জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত নয়, তাদের কোনো আদেশ-নির্দেশ মানার জন্য জনগণ প্রস্তুত নয় এবং জনগণ এই সরকারের কোনো আদেশ-নির্দেশ মানবে না।
তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদত্যাগ করুন, দল-নিরপেক্ষ সরকারের কাছে কিভাবে ক্ষমতা দেবেন, সেই চিন্তা করুন। নির্বাচন দিন, নির্বাচন নিয়ে খেলাফেলা করবেন না। একদিকে কোর্টের বারান্দায় আমরা ঘুরবো, আর আপনারা হেলিকপ্টারে ঘুরে বেড়াবেন- এটা বেশি দিন মেনে নেয়া হবে না। অবস্থান কর্মসূচিতে আরো বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মীর নাছির উদ্দিন।