বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি বিশ্ব আন্তর্জাতিক রেজিস্টার স্মারকে অন্তর্ভুক্ত করায় ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, ‘ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি বাঙালি জাতি এবং বাংলা ভাষার জন্য এক বিশাল গৌরবের। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করায় আমি ইউনেস্কো এবং এর মহাসচিব ইরিনা বোকোভাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ গত সোমবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে ৭ মার্চের ভাষণকে স্মারকে অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার শেখ হাসিনা এক বিবৃতিকে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসন-শোষণের ইতিহাস তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাকিস্তানিদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রুখে দাঁড়ান। তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সংগ্রাম। বাঙালিদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার এবং নির্যাতন। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম এক যৌক্তিক পরিণতির দিকে ধাবিত হয়।’ শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভার ডাক দেন। সেদিনের জনসমুদ্রে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’ বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণই ছিল প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা।
‘বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের পর থেকেই পূর্ব বাংলার নিয়ন্ত্রণভার বাংলার মানুষের হাতে চলে যায়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে দেশ। কিছু সেনানিবাস ছাড়া দেশের অন্য কোথাও পাকিস্তানি শাসনের কোনো নিদর্শন ছিল না। জাতির পিতার এই সম্মোহনী ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।’ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর অনন্য বাগ্মিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার আলোকে তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাঙালি জাতির আবেগ, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে একসূত্রে গ্রথিত করেন। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণে দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময়ের বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র যার আবেদন আজও অম্লান। প্রতিনিয়ত এ ভাষণ তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে এবং অনাদিকাল ধরে অনুপ্রাণিত করে যেতে থাকবে।’ শেখ হাসিনা আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক শাসকেরা এবং পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত জোট জাতির পিতার এই ভাষণকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। সরকারি গণমাধ্যমে নিষিদ্ধ ছিল এর প্রচার। কিন্তু সাধারণ মানুষের হৃদয় থেকে কোনোদিনই মুছে যায়নি এই ভাষণ।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn