বেশির ভাগই সেনা মোতায়েনের পক্ষে : সিইসি
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বেশির ভাগই নির্বাচনকালীন সময়ে সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। সোমবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনায় সেনা থাকবে কী থাকবে না এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। সেখানে বেশিরভাগই নির্বাচনকালীন সময়ে সেনাবাহিনী থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে সেনাবাহিনীকে বাহিনী হিসেবে রাখলে অন্য বাহিনীর ক্ষমতা খর্ব হবে- তাদের কাজ ব্যাহত হবে এমনও মত দিয়েছেন কয়েকজন বলেও জানান তিনি।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে নুরুল হুদা বলেন, আমরা অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি। দিকনির্দেশনা পেয়েছি। নির্বাচন কমিশন কীভাবে স্বাধীনতা ঠিকভাবে পালন করবে সে পরামর্শ দিয়েছেন। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, ভোটার তালিকায় মাইনরিটি জনগণ যাতে বাদ না যায় সে পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি থাকা উচিত কি উচিত না সেটা নিয়েও পরামর্শ এসেছে। জাতি নির্বাচন কমিশনের কাছে কঠোরভাবে নির্বাচন পরিচালনা প্রত্যাশা করে এটাও কমিশনকে মনে করিয়ে দিয়েছেন। আমরা আশ্বস্ত করছি আইনের আলোকে নির্বাচন কমিশন ক্ষমতা পালন করে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়ার চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, ‘না’ ভোটের বিষয়টি অনেকেই বলেছেন। যেমন যারা প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাদের কাউকেই পছন্দ না করলে না ভোটের বিধান থাকতে পারে। প্রবাসে অবস্থানরত প্রায় ১ কোটি ভোটারকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, প্রবাসী ভোটারের বিষয়টা জটিল। এগুলো করা যাবে কি না বলতে পারব না। তবে আমরা চেষ্টা করব ভোটার তালিকার আওতায় আনা যায় কিনা।
মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ এসেছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে মিডিয়াকে ব্যবহার করা যায় কি না তা নিয়েও আলাপ হয়েছে। ভোটার তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করার পক্ষে সুশীল সমাজ থেকে মতামত এসেছে জানিয়ে বলেন, ভোটারদের ভোগান্তি কমাতে এমন পরামর্শ এসেছে। মোবাইল নিয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের না যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও পরামর্শ এসেছে। যাতে ভোট দেয়ার পর প্রার্থীকে ছবি দেখাতে না হয়। কোনো মিডিয়া যাতে প্রার্থীদের নিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করতে না পারে এ বিষয়টি নির্বাচনী আচরণবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল হুদা বলেন, এ সংলাপে সরকারের কাছে তাদের জনগণের এবং সুশীল সমাজ যারা নির্বাচন নিয়ে ভাবেন, তাদের যে বার্তা এই বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে যাবে। এবং যারা বিরোধী দলে আছেন অথবা সংসদে বিরোধী দলে নেই তাদের কাছে পৌঁছে যাবে। তারা একটা সমঝোতায় আসতে পারবেন। আমার ধারণা প্রভাব পড়বে। কিন্তু আমরা বাধ্য করতে পারব কিনা জানি না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা যা যা বলেছেন জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন আকারে আমরা প্রকাশ করব। প্রকাশ করে সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেব। এমনকি প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠিয়ে দেব।
নাগরিক সমাজের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিদের মধ্যে সংলাপে অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাবেক সচিব এ এইচ এম কাশেম, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
এছাড়া সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, সাবেক রাষ্ট্রদূত এ এফ গোলাম হোসেন, সাবেক সচিব রকিব উদ্দিন মণ্ডল, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, অধ্যাপক এমএম আকাশ, অধ্যাপক অজয় রায়, অধিকারকর্মী খুশী কবির, সাইফুল হক, সঞ্জীব দ্রং, ফিলীপ গায়েন, ব্রতীর নির্বাহী শারমিন মুর্শিদ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, কলাম লেখক মহিউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন ও কবি লুবানা হাসান আলোচনায় অংশ নেন। পরে এসে সংলাপে যোগ দেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান সা’দত হুসাইন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী।