ব্রেক্সিট পরবর্তী বৃটেনে থাকতে চান না বৃটিশ নাগরিকরা
বৃটিশ জনগণের মধ্যে নতুন এক প্রবণতা শুরু হয়েছে। ব্রেক্সিট গণভোটের পর তা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি। বৃটেন ইউরপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে গণভোটে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য অধিক সংখ্যক বৃটিশ আবেদন করেছেন। তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিই পাচ্ছে। অর্থাৎ তারা ব্রেক্সিট পরবর্তী বৃটেনে থাকতে চান না। তারা মুক্ত ইউরোপের নাগরিক হতে চান। এ জন্য আগের তুলনায় এমন আবেদন এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনগুন, দ্বিগুন হয়েছে। যেসব দেশে এমন নাগরিকত্বের জন্য আবেদন বেশি পড়েছে তার মধ্যে রয়েছে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, ডেনমার্ক ও পোল্যান্ড। শুধু গত এক বছরে ইউরোপের অন্য দেশে নাগরিকত্বের আবেদনকারী বৃটিশের সংখ্য বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় লাখে পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ডে আবেদনের সংখ্যা তিনগুন। আর স্পেন, সুইডেন, ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডে আবেদন দ্বিগুন হয়েছে।
অন্যদিকে ফ্রান্সে নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এখনও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন ১০ লাখের মতো বৃটিশ। তাদেরকে ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে সেখানে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দেয়া হবে কিনা তা এখনও অনিশ্চিত। এর মধ্যেই এভাবে ইউরোপীয় দেশগুলোতে বৃটিশদের নাগরিকত্বের আবেদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আয়ারল্যান্ডে এ বছর জুন পর্যন্ত পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন ৬৪ হাজার ৪০০ বৃটিশ নাগরিক। আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ২০৭। স্পেনে একই সময়ে আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ২৩০০। এ বছর তা দাঁড়ায় ৪৫৫৮। সুইডেনে আগের বছর ছিল ৯৬৯। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০২। পোল্যান্ডে আগের বছর ছিল ১৫২। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩২। আর ডেনমার্কে আগের বছর ছিল ২৮৯। এ বছর এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০৪। ২০১৫ সালে ফ্রান্সে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন ৩৮৫ জন। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপক বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০১৬ সালে এ সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১৩৬৩-এ।
এ যাবত অর্থাৎ ব্রাসেলসের সঙ্গে বৃটেনের সম্পর্ক কর্তন হয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বৃটিশ নাগরিকরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের যেকোনো দেশে অবাধে যাতায়াত করতে পারেন এবং কাজ করতে পারেন। কিন্তু বৃটেন একবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলে তাদেরকে এই সুবিধা দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ব্রাসেলসের মন্ত্রীরা। তারা বলেছেন, এমন গ্যারান্টি বৃটিশ নাগরিকদের আর দেয়া হবে না। তবে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক, যারা বৃটেনে বসবাস করছেন, তাদেরকে যদি এমন অধিকার দেয়া হয় তাহলে তারা বৃটিশদের ক্ষেত্রে বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। গত সপ্তাহে ফ্লোরেন্সে বক্তব্য রাখেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এ সময় সেখানে বিপুল সংখ্যক বৃটিশ প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। তারা দাবি তোলেন ইউরোপে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে। এ সময় তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার দেখা যায়। তার কোনোটিতে তেরেসা মে’র ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তার ওপর ইংরেজিতে লেখা হয়েছে ‘ডিনাইড এ ভয়েস’। আরেকটি ব্যানারে তাকে দেখানো হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাসপোর্ট আগুনে ধরে রেখেছেন। এখানে উল্লেখ্য, ব্রেক্সিটের অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদেরকে বৃটেনে থাকার অধিকার দিতে রাজি হয়েছেন তেরেসা মে। তবে তা একটি শর্তাধীনে। তাহলো বৃটেনে অবস্থানকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সদস্য তার পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যতে অবাধে বৃটেনে আনতে পারবেন না। তার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা। দু’পক্ষে এখন ব্রেক্সিট নিয়ে যে আলোচনা তাতে এই একটি পয়েন্টে আলোচনা থমকে আছে। এ ছাড়া আরো যেসব ইস্যু আছে তা হলো বৃটেনের সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সীমান্তের ভবিষ্যত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ বিষয়য়ে বৃটেন কি পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করবে তার ওপর।