বড়লেখায় আইনজীবী আবিদা হত্যাকাণ্ড: কোথায় সেই আফসার?
এ.জে লাভলু, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় আইনজীবী আবিদা সুলতানা হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি আফসার আলম। আবিদা খুনের পর থেকে সে পলাতক রয়েছে। আফসার জকিগঞ্জ উপজেলার ময়নুল ইসলামের ছেলে। সে আবিদা হত্যা মামলার প্রধান আসামী মসজিদের ইমাম তানভীর আলমের ছোট ভাই। আফসার তার ভাইয়ের সঙ্গে খুন হওয়া আইনজীবী আবিদার পৈতৃকবাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকতেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে ধরতে তারা বিভিন্নস্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ, নিহতের পরিবার, মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউপির মাধবগুল গ্রামের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের তিন মেয়ে। তাঁর স্ত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি দ্বিতীয় মেয়ের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে থাকেন। মেয়েদের মধ্যে আবিদা সুলতানা সবার বড়। তিনি মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। আবিদার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বসুনিয়া একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে মৌলভীবাজার শহরে বসবাস করতেন। আবিদা ছুটির দিনে বাবার বাড়ি দেখাশোনা করতে সেখানে যেতেন। গত শনিবার আবিদা সুলতানা বোনের বাড়ি বিয়ানীবাজার ছিলেন। পরদিন গত রোববার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টায় জরুরি প্রয়োজনে তিনি বাবার বাড়িতে আসেন। বাবার বাড়িতে আসার পর বিকেল পাঁচটা থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর আবিদা সুলতানার স্বামী ও বোনরা তাঁকে খুঁজতে বাবার বাড়ি মাধবগুল গ্রামে আসেন। বাড়িতে এসে তারা ঘরের একটি কক্ষ বন্ধ দেখতে পান। চার কক্ষবিশিষ্ট বাসার দুই কক্ষে আবিদা সুলতানা ও তাঁর বোনরা বেড়াতে আসলে থাকেন। বাকি দুটোতে ভাড়া থাকতেন তানভীর আলমের পরিবার। আবিদার দূর সম্পর্কের আত্মীয় তানভীর। এসময় ঘরে তানভীর আলমের পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তানভীরের পরিবার ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের এক আত্মীয় বাড়িতে ছিলেন।
পরে তাদের কাছ থেকে চাবি এনে ওইদিন (গত রোববার) রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘরের দরজা খুলে দেখে আবিদা সুলতানার মৃতদেহ রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে। পুলিশ ওইদিনই তানভির আলমের স্ত্রী ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। ঘটনার পর তানভীর আলম ও তার ভাই আফসার আলমও পালিয়ে যান। গত সোমবার (২৭ মে) দুপুরে শ্রীমঙ্গলের বরুণা এলাকা থেকে ইমাম তানভীরকে আটক করা হয়। এই ঘটনায় সোমবার (২৭ মে) দিবাগত রাতে আবিদা সুলতানার স্বামী মো. শরিফুল ইসলাম বড়লেখা থানায় চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আটককৃত ভাড়াটিয়া ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম তানভীর আলম এবং তাঁর স্ত্রী হালিমা সাদিয়া ও মা নেহার বেগমকে মঙ্গলবার দুপুরে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম আদালতে আসামিদের রিমান্ড আবেদন করেন। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তানভির আলমকে ১০ দিনের এবং তানভিরের স্ত্রী হালিমা সাদিয়া ও মা নেহার বেগমকে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে রিমান্ডে নেওয়ার পর তানভীরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে (২৮ মে) মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা মাদ্রাসা এলাকার একটি বাসা থেকে তানভীরের ব্যাগ থেকে মুঠোফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল সোমবার ঐ বাসা থেকে তানভীরকে আটক করে পুলিশ। তবে কী কারণে আবিদাকে হত্যা করা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম বলেন, ‘ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। পলাতক আসামি আফসারকে ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।’ এদিকে, আবিদা হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তাঁর ফুঁসে উঠেছেন আইনজীবীরা। আবিদার খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।