এমপি রতনের বাসায় হামলা : যুবলীগ নেতা আবাবিল সহ আটক ৫ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ :
মোটরসাইকেল মহড়া ও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বাসায় হামলা ও ভাংচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময় বাসভবনের ফটকে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের মল্লিকপুর এলাকায় সাংসদের ‘পায়েল পিউ’ নামের বাসভবনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যে, হামলাকারীরা প্রায় ২০-২৫টি মোটরসাইকেলযোগে সংসদ সদস্যের বাসভবন সম্মুখে উপস্থিত হয়েছিল। এসময় তারা বাসার ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করে। কিন্তু গেইটে তালাবদ্ধ থাকায় ভেতরে ঢুকতে পারেনি। তারা এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বাসায় ভাংচুর চালায়। এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারাও। তবে ওই সময় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বাসায় ছিলেন না।
এদিকে, হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সদর মডেল থানা পুলিশের একটি দল। তবে এর আগেই হামলাকারীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। পরে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫জনকে আটক করে পুলিশ।
সদর মডেল থানা পুলিশের দেয়া তথ্যে, বিশেষ এ অভিযানে আটককৃতরা হলেন শহরের আরপিননগর এলাকার মৃত বাবন মিয়ার ছেলে পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক ও পৌর কাউন্সিলর আবাবিল নূর, আরপিননগরের ময়না মিয়ার ছেলে আসান মিয়া (৪৫), উত্তর আরপিননগর এলাকার আব্দুছ ছহুরের ছেলে বশির মিয়া (৪২), আরপিননগর এলাকার হাবিব আলীর ছেলে মনির মিয়া (৩৮) এবং শহরের তেঘরিয়া এলাকার তহিফুর মিয়ার ছেলে বিল্লাল চৌধুরী (৫৫)।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের “পায়েল পিউ” নামক বাসার কেয়ারটেকার সৈয়দ সুজন বলেন, ‘আমি জরুরি কাজে বাজারে ছিলাম। এ সময় স্থানীয় লোকজন আমাকে জানান, এমপি সাহেবের বাসার সামনে ২০-২৫টি মোটর সাইকেলসহ একদল যুবক বাসায় ঢুকার চেষ্টা করছে। এসময় বাসার গেইট তালাবদ্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে তারা ব্যাপক ভাংচুর চালায়। আমি দ্রুত বাজার থেকে আসি এবং বিষয়টি সাথে সাথে এমপি সাহেবকে জানাই।’
সুনামগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘আমি হাওরের মানুষের জন্য হাওরে হাওরে ঘুরছি। কৃষকদের জমির ফসল যাতে পানিতে তলিয়ে না যায় সেজন্য কয়েকটা হাওরের বাঁধের কাজ আমি পরিদর্শন করছিলাম। আমি দেখলাম যে অনেক বাঁধের কাজ শুরুই করা হয়নি। একটু মাটিও কোন ঠিকাদার কাটায়নি। ইতিমধ্যে এমন অবস্থার জন্য কয়েকটি হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। আমি ঠিকাদারদের সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডে খবর নিয়ে জানতে পারলাম যে যারা কাজ পেয়েছে তারা চেম্বারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের পক্ষ নিয়ে কিছু আওয়ামী লীগের নামধারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা নব্যযুবলীগের ছেলেরা যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে তারা মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে আমার বাসায় হামলা করেছে। আমি বাইরে ছিলাম, যদি ভেতরে থাকতাম তাহলে হয়তো এমপি লিটনের মতো ঘটনাই ঘটতো। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ সংসদ সদস্য মহোদয়ের বাসভবনে পৌঁছে। সেখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আমরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালাই এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৫ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যান্যদের ধরতে চেষ্টা এবং মামলার প্রক্রিয়া চলছে।’
এদিকে ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বাসভবনে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন। তিনি বলেন, ‘একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। তার বাসায় এমন ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন।
জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ :
এদিকে ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি’র বাসভবনে হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাতে জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার বটতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। বাজারের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে এসে প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউসুফ আল আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ আল আজাদ, মোশারফ হোসেন, সায়েম পাঠান, মলি হোসেন, জেলা যুবলীগ নেতা আবুল আল আজাদ, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবুল খয়ের, আবু তাহের, কাশেম আখঞ্জি, শিরিন তালুকদার, তোফাজ্জল হোসেন, মাহমুদুল হাসান লিমন, ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর কবির, আরিফ আলম লিমন, লিমন, শহীদ, জিয়া, সাদ্দাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া, প্রজন্ম লীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন।
অপরদিকে, হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাত ৯টায় বাদশাগঞ্জ বাজারের আ.লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ে এসে প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন সেলবরষ ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন শাহ, সাধারণ সম্পাদক বেনুয়ার হোসেন খান পাঠান, আওয়ামী লীগ নেতা শাহ জাহান, ধর্মপাশা উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আব্দুল বারেক ছোটন, সেলবরষ ইউপি যুবলীগ সভাপতি মো. দুলা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম খোকন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নুর হক কাছা আবু প্রমুখ।
সভায় বক্তারা সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন-এর বাসায় হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।