মানবজমিন থেকেঃ সুবীর ভৌমিক বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত
প্রধানমন্ত্রীর হত্যাচেষ্টা নিয়ে রিপোর্ট লিখে বিতর্ক তৈরি করা ভারতীয় সাংবাদিক সুবীর ভৌমিককে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি ঘোষণা করা না হলেও একাধিক সূত্রে তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। মিথ্যা ও ভুয়া সংবাদ পরিবেশনের কারণে তাকে ভিসা না দিতে বলা হয়েছে। ওদিকে, ‘ভিত্তিহীন’ রিপোর্টের পক্ষে নিজের প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন সুবীর ভৌমিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা সম্পর্কিত তার লেখা রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে নাকচ করে দেয়ার পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের রিপোর্টের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি। যোগ করেছেন আরো কিছু নতুন তথ্য। ঢাকার একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানে অবশ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে তার নতুন যোগ করা তথ্য। তবুও নিজের রিপোর্টের পক্ষে সরব রয়ে গেছেন বিবিসি’র সাবেক এই সাংবাদিক। যোগাযোগ করা হলেও নিজের রিপোর্টের পক্ষে সাফাই বক্তব্য দেন তিনি। শুধু তাই নয়, বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হবে বাংলাদেশকে। সুবীর ভৌমিকের দাবি, আগে ঢাকাতে কনসাল জেনারেল অফিসে কাজ করতেন সন্দ্বীপ চক্রবর্তী। তার মাধ্যমে দিল্লি থেকে একটি ডিটেইলস প্রতিবেদন শেখ হাসিনাকে আজ বৃহস্পতিবার দেয়া হবে। সুবীর ভৌমিকের এসব বক্তব্য নিয়ে অবশ্য তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন। তার উদ্দেশ্যে কী সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। গত শনিবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নিউজ-১৮ এ সুবীর ভৌমিকের লেখা একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এর আগে একই রিপোর্ট প্রকাশিত হয় মিয়ানমারের মিজিমা নিউজেও। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার একটি চেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দাদের যৌথ দল। বলা হয়, গত ২৪শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশ্যাল সিকিউরিটি ফোর্সের অন্তত ৬ থেকে ৭ জন সদস্য হত্যা প্রচেষ্টার প্রস্তুতি নিয়েছিল। এর সঙ্গে জড়িত ছিল জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পরদিন সাফ জানিয়ে দেয়, পুরো সংবাদটিই মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু সুবীর ভৌমিক এখনো দাবি করছেন, ঘটনাটি সত্য। আর এর মূলে রয়েছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তার দাবি ঘটনাটি ঘটানোর জন্য সব ধরনের কথোপকথন হয়েছে ভারতে। এজন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানতে পেরেছে। তবে নিজের রিপোর্টের সূত্র সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু বলতে পারেননি সুবীর ভৌমিক। তার রিপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা নিয়ে রিপোর্ট করায় কিছু লোক আমাকে গালিগালাজ করছে। তারা বলছে, আমি পেইড এজেন্ট। এতে আমি বদার ফিল করছি না। প্রতিবেদন সম্পর্কে সুবীর ভৌমিক জানান, আমার নিউজের সঙ্গে মনোজ গুপ্তের নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে। আসলে সে কিছু করেনি। কিন্তু তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মনোজ গুপ্ত এখানকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে কাজ করেন। তিনি এজেন্সিতে গেলে তারা তাকে জানান, ঘটনাটি বিলকুল সহিই। পরে অফিস থেকে আমাকে জানিয়েছে, তোমার নামের সঙ্গে ওর নামটা জুড়ে দিও। আমি বলেছি, এটা কোনো বিষয় নয়। কারণ এ নিউজ নিয়ে তো পুলিৎজার অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার কোনো বিষয় নেই। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সুবীর ভৌমিক বলেন, এত বছর ধরে সাংবাদিকতার কারণে ‘র’কে যেমন চিনি তেমনি বাংলাদেশের অনেককেও চিনি। তিনি জানান, আমার একটি বই আছে, নাম-ইনসার্জেন্ট ক্রসফায়ার। এই বইয়ের একটি পুরো অধ্যায় রয়েছে কিভাবে ‘র’-এর সাহায্যে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিবাহিনী, অমুক-তমুকের নামে ২১ বছর ধরে অপারেশন চলেছিল। এ নিয়ে কোনো বাংলাদেশি যদি বিস্তারিত লিখে থাকে তাহলে আমি কান কেটে ফেলে দেব। এ নিয়ে ‘র’-এর সঙ্গে আমার তিন/চারবার ম্যাসিভ ঝামেলা হয়েছে। মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি কলকাতার ভদ্রলোক বা দিল্লির বাবু নই। বাংলাদেশে কোথায় কি হচ্ছে সব আমি জানি। আমি বাংলাদেশকে জানি। সুবীর ভৌমিক আরো নানা মন্তব্য করলেও আমরা তা প্রকাশ করছি না। সূত্র: মানবজমিন