মার্কিন কংগ্রেসের নির্বাচনী লড়াইয়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত নারী
ওয়াশিংটন: রেজিনা মোস্তফা মার্কিন কংগ্রেসে প্রথম নির্বাচিত মুসলিম নারী হিসেবে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি তার ‘নির্ভেজাল আবেগ’ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব করবেন, আরো অধিকমাত্রায় বন্দুক নিয়ন্ত্রণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে তিনি জানান। ৩৭ বছর বয়সী কমিউনিটি কর্মী মোস্তফা মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের রচেস্টারে বসবাস করছেন। রাজ্যের প্রথম কংগ্রেসনাল জেলার পদে তিনি তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। মোস্তফা ১২ বছর আগে ফিলাডেলফিয়া থেকে এখানে আসেন। গভর্নর পদে লড়তে এই আসনের কংগ্রেসম্যান টিম ওয়াল্জ পদত্যাগ করায় আসনটি শুন্য হয়ে যায়। আসনটিতে আটজন ডেমোক্রেট প্রার্থীর মধ্যে মোস্তফা একজন। এখানে ডেমোক্রেট প্রার্থীর জয় লাভ করার সম্ভবনা বেশি। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে যিনি জয়লাভ করবেন, সম্ভবত তিনিই এই সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হবেন। মুস্তাফা জানান, তিনি একজন অভিজ্ঞ কমিউনিটি কর্মী। রচেস্টারে আসার পর থেকেই তিনি খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সঙ্গে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস কাউন্সিল (সিআরএআর) এবং রচেস্টারের ইসলামিক সার্কেলের সহায়তায় তিনি ইসলামের ওপর কমিউনিটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করেন। কংগ্রেসের ইতোমধ্যেই দু’জন মুসলিম সদস্য রয়েছে। তারা হলেন, কিথ এলিসন এবং অ্যান্ডি কারসন। কিন্তু মুস্তাফা নির্বাচিত হলে তিনি হবেন ফেডারেল স্তরে বিধানসভায় ইসলামি বিশ্বাসের প্রথম নারী। তিনি ইসলামি রাজনীতিবিদদের আসন্ন তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ। এর মধ্যে রয়েছে সোমালি-আমেরিকান ইলহান ওমর এবং ড. আবদেল আল সায়েদ। ইলহান ওমর সম্প্রতি মিনেসোটা স্টেট হাউসের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন এবং আবদেল আল সায়েদ ছিলেন ডেট্রয়েটের সাবেক স্বাস্থ্য পরিচালক এবং একজন মিশরীয় অভিবাসীর সন্তান। তার বাবা বর্তমানে মিশিগান গভর্নরের জন্য নির্বাচন করছেন।
আবদেল আল সায়েদ ও তার স্ত্রী
সায়েদের শ্বশুর বর্তমানে মিশিগানের সিআইএআইআর এর বোর্ড সদস্য। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খাকাকালীন আল-সায়েদ মুসলিম ছাত্র সংগঠনের সহ-সভাপতি ছিলেন। ফাইরোজ সাদ নামে আরেকজন আরব-আমেরিকান সম্প্রতি ঘোষণা দেন যে, তিনি রিপাবলিকান রিপ্রেজেন্টিটিভ ডেভিড ট্রটের মিশিগান কংগ্রেসনাল আসনের জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে নামছেন। মোস্তফা হচ্ছেন তরুণ মুসলিম রাজনীতিবিদদের নতুন প্রজন্মের অংশ। তার আন্তঃধর্মীয় কর্মকাণ্ডের পিছনে অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য তিনি তার সন্তানদের এবং সিএআইআরকে কৃতিত্ব দেন। এই আন্তঃধর্মীয় কর্মকাণ্ড একটি রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করার ‘পরবর্তী পদক্ষেপ’ নিতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে বলে মোস্তাফা জানান। মুস্তাফা মনে করেন ৯/১১ এর পর বিশ্বজুড়ে প্রকৃত ভিকটিম হয়েছে মুসলমানরা।
মোস্তফা তার ওয়েবসাইটে বলেন, ‘আমার অনুপ্রেরণা আমার সন্তানরা। আমি তাদের জন্য একটি ভাল ভবিষ্যত চাই। এমন একটি ভবিষ্যত চাই যেখানে তারা গর্বিত মুসলমান ও আমেরিকান হিসেবে সমাজে মাথা উঁচু করে বাচঁতে পারেন। ৯/১১ এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করছে এবং মিডিয়াতে তাদের ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই মিথ্যাচার এবং নেতিবাচকতার মুখোমুখি হওয়ার একমাত্র উপায় হল আমাদেরকে আমাদের প্রতিবেশিদের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং আমাদের সমাজের সক্রিয় সদস্য হতে হবে। আমেরিকানরা বিশেষ করে মিনোসট্যানসরা সত্যিই আন্তরিক এবং উদারমনা মানুষ।’ কংগ্রেসের জন্য তার প্রার্থিতা ঘোষণা করার কয়েকদিন পর ১০ আগস্ট টেলিফোনে তার একটি সাক্ষাৎকার নেয় ‘ডব্লিউএনডি’।তিনি বলেন, ‘আমি গত কয়েক বছর ধরে রচেস্টারের একজন কমিউনিটি কর্মী হিসেবে কাজ করছি। একটি আন্তঃধর্মীয় গ্রুপ গঠনের মাধ্যমে আমাদের সমাজের মধ্যকার যে গ্যাপ রয়েছে তার দূর করার চেষ্টা করছি। তাই কংগ্রেসনাল আসনটিতে লড়াই হচ্ছে আমার কাজ অব্যাহত রাখার পরবর্তী পদক্ষেপ। এবার আমার কাজ কেবল বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে একত্রিত করার মধ্যই সীমাবদ্ধ থাকবে না। জনগণের সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা এবং আবাসনসহ ফেড়ারেল লেভেলের অন্যান্য বিষয়- যেমন বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করব।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আরো বেশি করে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আমাদের সম্প্রদায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এবং আমাদের সম্প্রদায়কে নিরাপদ করে তুলবে।’আন্তঃধর্মীয় বিষয়গুলোতে তার কাজ সত্ত্বেও মোস্তফা তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক ছিলেন না।একজন আমেরিকান নারী হিসাবে ইসলামের কোন বিষয়টি তাকে আকৃষ্ট করে এবং কেন তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হলেন- এমন প্রশ্নে তিনি উল্টো প্রশ্নকর্তাকে প্রশ্ন করেন।তিনি বলেন, ‘আপনি কিভাবে জানলেন আমি ধর্মান্তরিত?’ ‘ডব্লিউএনডি’ তাকে বলে, এটি শুধু একটি অনুমান।তিনি বলেন, ‘আমি ধর্মান্তরিত হয়েছি। আমি এই প্রশ্নটি আমার নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে সামঞ্জস্য হওয়ার কিছু দেখি না। আমি কোন নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারী হিসেবে বেড়ে উঠি বা না উঠি; এতে আমি কোন প্রাসঙ্গিকতা হিসেবে দেখি না।’