মাসব্যাপী গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
দেশের ভাষা ও কৃষ্টি, শিল্প-সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে মর্যাদা প্রদানের আহ্বান জানিয়ে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং উদ্বোধনী স্মারকে স্বাক্ষর করেন তিনি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সূচনা সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশিত হয় এবং অমর একুশের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একুশের মেলা আমাদের প্রাণের মেলা। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে নানা সংগ্রামের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ভাষাভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা সারা বিশ্বের মানুষের কাছেই এক বিস্ময়ের ব্যাপার। একুশের চেতনাও এখন আর বাংলাদেশের সীমানায় আটকে নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে এবং প্রবাসী বাঙালিদের প্রচেষ্টায় আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্প সংস্কৃতি কেবল বাংলাদেশের সীমানায় না, বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘নিজেদের সংস্কৃতি, নিজেদের ভাষা, নিজেদের শিল্প-সাহিত্যকে যদি আমরা মর্যাদা দিতে না পারি, তার উৎকর্ষ সাধন করতে না পারি, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের দরবারে আরো উন্নত হতে পারবো না।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের যে চেতনা সেই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশকে গড়তে চান উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে অসাম্প্রদায়িক, যে বাংলাদেশ হবে শান্তিপূর্ণ, যে বাংলাদেশে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম-কর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, এমনকি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরাও তাদের ভাষার চর্চা করতে পারবে। তাছাড়া আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। যেখানে হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা নিয়ে গবেষণা হবে।’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিদেশি অতিথি লেখকের বক্তব্য উপস্থাপন করেন এগনিস মিডোস (যুক্তরাজ্য), ড. জয়েস অ্যাসউনটেনটেক্স (ক্যামেরুন), ইব্রাহিম এলমাসরি (মিশর), অরনে জনসন (সুইডেন) প্রমুখ। বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি সচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত আলোকচিত্রে বাংলা একাডেমির ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ গ্রন্থ দু’টি তুলে দেয়া হয়। গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ প্রদান করা হয়। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন কবিতা-মোহাম্মদ সাদিক ও মারুফুল ইসলাম, কথাসাহিত্য-মামুন হুসাইন, প্রবন্ধ-মাহবুবুল হক, গবেষণা-রফিকউল্লাহ খান, অনুবাদ-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য-কামরুল হাসান ভূঁইয়া ও সুরমা জাহিদ, ভ্রমণকাহিনি-শাকুর মজিদ, নাটক-মলয় ভৌমিক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী-মোশতাক আহমেদ, শিশু সাহিত্যে ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ। অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের হাতে ১লক্ষ টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, মেধাবিকাশ ও সু¯’ বিনোদনের জন্য তৈরি অনলাইনভিত্তিক প্লাটফর্ম কিশোর বাতায়ন কানেক্ট এবং প্রতিবন্ধীবান্ধব একসেসিবেল ডিকশনারি-এর উদ্বোধন করেন। এটুআই-প্রোগ্রামের ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র থেকে অনলাইন প্লাটফর্মেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের উদ্যোগে ডিজিটাল তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী গ্রন্থমেলার স্টলগুলো ঘুরে দেখেন এবং লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।