মাহবুব বললেন রিজাইন করেছি, স্ত্রীর দাবি গুঞ্জন
বার্তা ডেস্ক ::রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। তিনি দলের সব ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এই প্রথম বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের কোনো নেতা স্বেচ্ছায় দল ছাড়লেন। সাবেক এই সেনাপ্রধান বুধবার রাতে যুগান্তরকে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে এর কিছুক্ষণ পরই তার স্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, দল থেকে পদত্যাগের বিষয়টি গুঞ্জন। দেড় মাসেরও বেশি সময় আগে পদত্যাগ করেছেন জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি রাজনীতি থেকে সরে এসেছি। আমি রিজাইন করেছি দল থেকে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছি দেড়-দু’মাস আগে। কী কারণে পদত্যাগ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারণ আমি বয়স্ক মানুষ। সামনের ডিসেম্বরে ৮০ বছর পূর্ণ হবে। রাজনীতিতে কনট্রিবিউট করার মতো আমার কিছু নেই। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, লন্ডনে এক সভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী জাতির পিতা আখ্যা দিয়ে এর সমর্থনে নেতাকর্মীদের কাছে প্রস্তাব রাখেন। এ সময় সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে সমর্থন করেন। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে এলে এ বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন মাহবুবুর রহমান। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি দলের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে চারজন নেতা মাহবুবুর রহমানের দ্বিমত করার বিষয়টি উত্থাপন করেন। এ নিয়ে ওই বৈঠকে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হওয়ার পর সিদ্ধান্ত হয়, মাহবুবুর রহমান যেন তার দ্বিমতের বক্তব্যের বিষয়ে লিখিতভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। দু’দিন পর এ বিষয়ে জানতে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য মাহবুবুর রহমানের বাসায় গেলে তিনি তার দ্বিমত পোষণের বক্তব্যে অনড় থাকার কথা জানিয়ে দেন। এরপরই তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
বুধবার রাতে মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে পদত্যাগের বিষয়টি স্বীকার করার এক ঘণ্টা পর আবার ফোন দিলে ফোন রিসিভ করেন তার স্ত্রী। তিনি তখন বলেন, মাহবুবুর রহমান অসুস্থ। এ জন্য দীর্ঘদিন থেকে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে নেই। দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। তবে তার পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়। সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন মাহবুবুর রহমান। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে দিনাজপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। একাদশ নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। রাজনীতি থেকে পদত্যাগের আরও কিছু কারণ উল্লেখ করেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমি রাজনীতি নিয়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছি। বাংলাদেশে রাজনীতি নেই। এখানে কোনো আদর্শও নেই। এখানে রাজনীতির নামে একটা এক্সপ্লয়টেশন চলছে। একটা তোষামোদ, ধাপ্পাবাজি ও মিথ্যাচারিতা চলছে। অবসরের চিঠি কোথায়, কার কাছে দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার কাছে তো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। আমি চিঠি দিয়েছি মহাসচিব বরাবর।
চিঠি দেয়ার পর দলের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহাসচিব কিছু বলেননি। তার সঙ্গে বিস্তারিত কথাও বলিনি। জাস্ট চিঠি দিয়েছি। চিঠি পেয়েছেন কি না, তাও জানি না। আমি গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছি। আমি নিজেই দিয়েছি। কথাও বলেছি। হাতে লেখা চিঠি দিয়েছি। কোনো কপি রাখিনি। এ বিষয়ে জানতে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বিএনপির মহাসচিবকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমি পদত্যাগের বিষয়টি জানি না। মঙ্গলবার ক্ষোভ ও অভিমানে ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। এরপরই মাহবুবুর রহমানের পদত্যাগের খবর এলো। সৌজন্যে : যুগান্তর