‘মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি’
মো: মইনুল হাসান টিটু:
কথায় আছে ‘মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি’। এটা বাস্তবে প্রমান করে দেখাচ্ছি আমরা। আমরা বাঙ্গালী আমাদের সহজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমরা পরম দয়ালু, পরোপাকারী ও ভ্রাতৃত্ববোধ। সে কারনে হয়ত মানুষের বিপদে আপদে আমরা নিজ তাগিদেই এগিয়ে যাই। আর কারো বিপদে এগিয়ে যাওয়াটাও মানুষ হিসাবে আমাদের নৈতিক কর্তব্য। আমাদের প্রত্যেকের ধর্মেও তা বলা আছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রহিঙ্গাদের উপর সে দেশের সেনা বাহিনী যে নিষ্ঠুরতম বর্বর হামলা চালাচ্ছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম বর্বরতা। আর সেই বর্বরতার কারনে লক্ষ লক্ষ রহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে এখনো আসছে। আমরাও তাদেরকে মানবিক দিক চিন্তা করে সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্বেও যায়গা দিয়েছি বা দিচ্ছি। আমাদের দেশে এমনিতেই অনেক সমস্যা, আয়তনে ক্ষুদ্র একটি দেশ। জনসংখ্যা প্রায় ১৭কোটি। আয়তনের তুলনায় মানুষ বেশি হওয়ায় দিনদিন আবাদি জমি কমছে। যার কারনে দেখা দিচ্ছে খাদ্য সংকট। এছাড়াও আরো অনেক সমস্যা আছে সে দিকে বা না গেলাম। আমাদের দেশের এত সমস্যার মধ্যেও শুধু মানবিক দিক বিবেচনা করে রহিঙ্গাদের যায়গা দেয়া হয়েছে। মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে যাবে এটাই মানুষের চরিত্র হওয়া উচিৎ। ধর্মীয় মতেও মানব সেবা উত্তম কাজ। আমি একটি বিষয় দেখে অনেকটা অবাকই হচ্ছি যে, আমার এতদিন ধারনা ছিল, এই আখেরি জামানায় হয়ত আমরা উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ সহানুভূতি সব ভুলেই যাচ্ছি। কিন্তু রহিঙ্গাদের নিয়ে আমার দেশের মানুষদের ভালবাসা দেখে সেই ধারনা পাল্টে গেল। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের মানুষদের ভালবাসা প্রসংশার দাবী রাখে। সিলেট নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে, দোকানে দোকানে ও রাস্তাঘাটে যেভাবে রহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে চাঁদা তুলা হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে আমরা আমাদের নিজের দেশের জন্য করছি। অন্যের জন্য করবেন না সেটা আমি বলছি না। আমি আগেই বলেছি মানব সেবা উত্তম কাজ, সুতরাং মানুষ মানুষের বিপদে এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার নিজের দেশের বিশেষ করে সিলেট বিভাগের লক্ষ লক্ষ কৃষকের ফসল আগাম বন্যায় তলিয়ে গেল, আবার বর্ষায় সিলেট সহ সারাদেশের মানুষ ফসল সহ তাদের বাড়িঘর হারালো। এই লক্ষ লক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা দিনে একবেলা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে সাহায্য দেয়া হচ্ছে তাতে মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ উপকৃত হচ্ছে, বাকি ৯০ শতাংশ মানুষ সাহায্য থেকে বঞ্চিত। একসাথে এতগুলো মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তা দেয়ার মত সক্ষমতা আমার দেশ এখনো অর্জন করতে পারেনি। একদিন হয়ত আমরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারবো। কিন্তু সে পর্যন্ত তো ঠিকে থাকাটা জরুরী। সরকারের পাশাপাশি সমাজের সচ্ছল সবাই এগিয়ে আসলে লক্ষ লক্ষ মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করা কোন কঠিন কাজ ছিলনা। খুব দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে, যারা বা যেসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে রহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে চাঁদা তুলার হিড়িক দেখা যাচ্ছে, নিজ দেশের জন্য তার অর্ধেক যদি দেখা যেত বা চেষ্টা চালানো হতো তাহলে আজ দেশের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন অর্ধাহারে অনাহারে থাকতোনা। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ দেয়ার খবর পাওয়া গেলেও এটা যে বিশাল সমুদ্রের একফোটা জল এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। কে যেন একজন ফেইসবুকে একটি ছবি দিয়ে ক্যাপসন লিখেছেন, এক মগ চাল দিতে কি দশহাতে ধরতে হয়? অর্থাৎ ত্রাণ দেয়া থেকে মিডিয়া কাভারেজটা তাদের মূখ্য উদ্যেশ্য। এই জন্য প্রথমেই লিখেছি ”মায়ের থেকে মাসির দরদ বেশি”। তাই এসব দেখে সন্দেহ হচ্ছে তাহলে কী চাঁদা তুলার পেছনে অন্যকোন কারন জড়িত আছে। সন্দেহের কারন, আপনি আপনার মাকে খাবার না দিয়ে অন্যের মাকে খাবার দিচ্ছেন। অন্যের মাকে খাবার দেন সমস্যা নেই কিন্তু নিজের মাকে খাবার দেয়াটা তো আগে প্রয়োজন। আপনি সে কাজটি করছেন না, নিজের মাকে রেখেই অন্যের মাকে খাবার দিতে ছুটছেন। তাই আপনাদের প্রতি সন্দেহের দানা আরো ঘনিভূত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে রহিঙ্গাদের জন্য সংগ্রহ করা কোটি টাকা মেরে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন হচ্ছে। হে আমি মানছি যে সবাই হয়তোবা চোর নয়, কিন্তু ভালমানুষ কে? সেটা বিশ্বাস করাও তো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই রকম ধান্দাবাজি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ভাল কাজে উদ্যোগি হওয়া ভাল মানুষটিকে হয়তো আর কেউ বিশ্বাস করবে না। বিশ্বাস অর্জন করতে সারাজীবন দরকার হয় আর খোয়াতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড হলেই হয়। সুতরাং সাধু সাবধান।