মিসবাহ সিরাজের সাথে ভারতে সুনামগঞ্জের হাওর দুর্নীতি মামলার আসামি
দেশ ছেড়েছেন সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ঠিকাদার আব্দুল হান্নান। গত মঙ্গলবার দুপুরে তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তের তামাবিল ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে চলে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তাঁর পরিবার। স্বপরিবারের ভারতে মিসবাহ সিরাজের সাথে ঘুরেও বেড়াচ্ছেন্ন হান্নান। এসব ছবি নিজেই আপ করছেন ফেসবুকে। আলোচিত এই মামলার আসামির প্রকাশ্যে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া এবং তাঁর সঙ্গড়ে রাষ্ট্রের একজন আইন কর্মকর্তার বিদেশ যাওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।। সুনামগঞ্জের বোরো ফসল হানির পর গত ২ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ বাদী হয়ে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২১ নম্বর আসামি করা হয় মেসার্স হান্নান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হান্নান আহমেদকে।
দুদকের মামলায় পাউবোর ১৫ জন ছাড়াও সুনামগঞ্জের ১৩ জন, ঢাকার ৯জন, সিলেটের ৬জন, কুমিল্লার ৩ জন, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার ও সাতক্ষীরার ২ জন করে এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, পটুয়াখালি, খুলনা ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার একজন করে ঠিকাদারকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত ঠিকাদারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছিলেন ফরিদপুরের খন্দকার শাহীন আহমদ, টাঙ্গাইলের মো. আফজালুর রহমান, সুনামগঞ্জের সজীব রঞ্জন দাশ ও সিলেটের আব্দুল হান্নান। হান্নান নয়টি বাঁধের কাজ পেয়েছিলেন। সিলেট মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। গত মঙ্গলবার দুপুরে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ভারতে গেছেন বলে ঘনিষ্ঠজনরা নিশ্চিত করেছেন। দুটি পরিবার একই সময়ে ভারতে গেলেও তারা একসঙ্গে ছিলেন কি-না, এ প্রশ্নে মন্তব্য করতে রাজি হননি ইমিগ্রেশন সংশ্নিষ্টরা। তবে হান্নানের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে আপলোড করা ছবিতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে উভয় পরিবারকে একসঙ্গে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার বেলা সোয়া ২টার দিকে হান্নানসহ অন্যরা ভারতের উদ্দেশে তামাবিল ইমিগ্রেশন ত্যাগ করেন। সকালে সিলেট থেকে একটি সাদা রঙের নোয়াহ ও কালো রঙের আরেকটি প্রাইভেট কারযোগে উভয় পরিবারের সদস্যরা তামাবিলে যান। যাত্রাপথে গোয়াইনঘাটের আলুবাগান এলাকায় জাতীয় পার্টির এক নেতার বাগানবাড়িতে তারা খাওয়া-দাওয়া করেন। তামাবিল অভিভাবস পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ পরিদর্শক (এসআই) এমএ হান্নান চৌধুরী বলেন, হান্নান দুদকের মামলার আসামি কী না তা আমাদের জানান নেই। এজন্য তাকে দেশ ছাড়তে বাধা দেওয়া যায়নি। তবে পরে তিনি ফিরে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান তিনি।
সিলেটের পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান জানান, প্রয়োজনে ইমিগ্রেশনকে সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবহিত করবে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমদ বলেন, আসামিদের পালিয়ে বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে কেবল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনগুলোতে তাদের তালিকা পাঠানো হয়েছিলো। স্থলবন্দরের অভিভাসনে তাদের তালিকা পাঠানো হয়নি। আমরা আজই তাদের পাসপোর্ট জব্দ করার জন্য সব থানায় চিঠি দেবো। সেইসঙ্গে এ সম্পর্কিত তথ্যাদি সব ইমিগ্রেশন দপ্তরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে অকাল বন্যায় সুনামগঞ্জের হাওরের বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ফসলহানির ঘটনা ঘটে। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় সুনামগঞ্জসহ দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ওই সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সুনামগঞ্জ সফরে গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এমন পরিস্থিতিতে গত ২ জুলাই পাউবোর ১৫ কর্মকর্তা, ৪৬ জন ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ।
এ ছাড়া গত ৩ আগস্ট সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হক বাদী হয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৪১ জনকে আসামি করে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। আইনজীবী সমিতির এ মামলায় মোট ৪৬ জন ঠিকাদারকে আসামি করার পাশাপাশি দুদকের মামলার ৬১ জন আসামির সবাই রয়েছেন। আদালতের বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে এই মামলাও দুদককে তদন্তের দায়িত্ব দেন। গত ১৬ আগস্ট মামলার অন্যতম আসামি সুনামগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নুর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার খায়রুল হুদা চপল সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে দুদক তাকে গ্রেপ্তার করে। গত ৩ অক্টোবর এ মামলার আরেক আসামি একজন ঠিকাদার হাজির হয়ে জামিন চাইতে সুনামগঞ্জের আদালতে যান। সেদিনও সিলেট জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিনকে সুনামগঞ্জের আদালতে দেখা যায়।