কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং-এর পশ্চিম হিন্দু পাড়ায় দেখা যায়, ৪১২ জনের হিন্দু নারী-পুরুষ ও শিশু একটি মুরগির খামারে মানবেতর দিনযাপন করছেন। তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে স্থানীয় কিছু হিন্দু পরিবার। সহায় সম্বলহীন এ হিন্দু পরিবারগুলোর জন্য দ্রুত খাদ্যের প্রয়োজন।উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের পশ্চিম হিন্দু পাড়ার মেম্বার স্বপন শর্মা রনি জানান, গত মঙ্গলবার রাতে ১৬ জন হিন্দু মিয়ানমার থেকে আমাদের গ্রামে এক আত্মীয়র পরিবারে আশ্রয় নেয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অর্ধাহারে-অনাহারে অবস্থান করা ৪১২ জন হিন্দুকে আমাদের গ্রামের একটি পরিত্যাক্ত মুরগির খামারে আশ্রয় দিই। তাদের বুধবার রাত থেকেই আহারের ব্যবস্থা করি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক তাদের আহারের ব্যবস্থা করে। পরে উখিয়া ইউএনও ও ওসি পরিদর্শনে আসেন। কিন্তু সহায় সম্বলহীন এ হিন্দু পরিবারগুলোর জন্য দ্রুত খাদ্যের প্রয়োজন জানান এলাকার লোকজন।  আশ্রয় নেয়া হিন্দুরা জানিয়েছেন, মিয়ানমারে রাখাইনের মংডুর চিকনছড়ি, ফকিরাবাজারসহ কয়েকটি হিন্দু অধ্যূষিত গ্রামে স্বশস্ত্র লোকজন তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। তাদের পুরো পাড়া ঘিরে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে অনেককে গুলি করে হত্যা করছে। শিশু ও নারীদেরকেও নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেকে পরিবার আতংকে পাহাড়, ধান ক্ষেতে ও বনজঙ্গলে পালিয়ে লুকিয়ে আছে। কিছু হিন্দু পরিবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। কিন্তু বাধা ও ভয়ের কারনে কেউ ঢুকতে পারছে না। ক্ষুধার জ্বালায় তারা রাতের আধারে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান।

পালিয়ে আসা মিয়ানমারের মংডুর চিকনছড়ি গ্রামের কুলাল পাড়ার বকুল বালা জানান, মুখোশধারী কিছু স্বশস্ত্র লোক তাদের গ্রামে ঢুকে তাদের উপর অত্যাচার চালায়। এক পর্যায়ে তার স্বামী কালু রুদ্র,কন্যা সন্ধ্যাবালা ও নাতী বাপ্পুকে তুলে নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়েছি নির্যাতন চালিয়ে তাদের হত্যা করা হয়েছে।একই এলাকার বিজয় রাম পাল জানান, তিনি মংডুর চিকনছড়ি গ্রামে হালচাষ করতেন। কিন্তু সহিংসতা শুরুর পর থেকে তাদের গ্রামেও সশস্ত্র ব্যক্তিরা নিরীহ হিন্দুদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। প্রাণ ভয়ে তিনি কয়েকদিন পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলেন। পরে খবর পেয়ে সীমা খোনে আশ্রয় নিয়েছি।মংডু এলাকার কোয়াছং হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা দীজেন্দ্র জানান, তার অনেক আত্মীয়স্বজন থাকতেন ফকিরাবাজারে। সেখানকার ৮৬ জনকেই হত্যা করেছে স্বশস্ত্র বাহিনীর লোকজন।ফকিরা বাজার থেকে পালিয়ে আসা মিলন মল্লিক জানান, স্বশস্ত্র লোকজন তাদের গ্রাম ঘিরে ফেলে। সশস্ত্র লোকজনের সঙ্গে কিছু মুখোশধারী লোকজনও ছিল। এরপর ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় অনেককে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। আমার পরিবারের অনেকের কোনো খবর পাচ্ছি না।

এদিকে উখিয়ার কুতুপালং-এর পশ্চিম হিন্দুপাড়ায় আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের হিন্দু পরিবারদেরকে দেখতে যান জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়োতষ শর্মা চন্দন,সহ সম্পাদক চঞ্চল দাশগুপ্ত, অর্থ সম্পাদক স্বপন গুহ। তারা তাৎক্ষণিকভাবে ২৫ হাজার নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে তাদের আহারের ব্যবস্থা করেন।এ ব্যাপারে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়োতষ শর্মা চন্দন মিয়ানমারের সহিংসতায় ৮৬ জন হিন্দু নিহত হওয়ায় এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, রাখাইনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর হস্তক্ষেপ করতে হবে।আর রাখাইনে নিরীহ হিন্দুদের উপর হত্যা-নির্যাতন কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি কুতুপালং-এর পশ্চিম হিন্দুপাড়ায় আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্য সহায়তা করার জন্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানান। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈনুদ্দিন জানান, কুতুপালং-এর পশ্চিম হিন্দুপাড়ায় আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের হিন্দু পরিবারদেরকে নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn