মুক্তিযুদ্ধের নয় বছর পর জন্ম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন মো. মীজানুর রহমান। তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের পরই জন্মগ্রহণ করেননি, তাঁর মা-বাবার বিয়েও হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পর। মীজানুর রহমানের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাজিগাঁও গ্রামে। তাঁদের বাড়ি আশু পণ্ডিতের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। বাবার নাম আবদুল মজিদ, মা দিলরুবা খানম। তাঁদের বিয়ে হয়েছে ১৯৭৮ সালে। এর দুই বছর পর ১৯৮০ সালের ৩ জুলাই জন্ম হয় মীজানুর রহমানের। স্নাতক ডিগ্রিধারী মীজানুর রহমানের পাসপোর্ট নম্বর ডব্লিউ-০১৪২৬৫৭। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মীজানুর রহমান প্ বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় কীভাবে তাঁর নাম এসেছে সেটা তিনি জানেন না। বিষয়টি তাঁকে প্রতিনিয়ত বিব্রত করছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছেন।

গত সপ্তাহে সোমবার জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁর বয়স চার বছর ছিল তাঁকেও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের এমন নির্দেশে তিনি বিব্রত। সংসদে এই বিবৃতি দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে আলোচনা শুরু হয়। ’৭১ সালে চার বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় জানতে গত সপ্তাহে মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে গেলে মন্ত্রী আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আমি তো বলেছি ১৯৭১ সালে চার বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধার কথা। বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের নয় বছর পর জন্ম নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বনে গেছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারার মীজানুর রহমান। আর আমি যাঁর কথা সংসদে বলেছি তিনি নিখিল রঞ্জন সাহা। আদালতের নির্দেশে তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার সনদ বহাল রাখা হয়েছে। গাইবান্ধার নিখিলের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৩০ মার্চ।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ‘মুজিবনগর সরকার কর্মচারীদের নিয়েও জটিলতা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় চার বা দুই বছর বয়সী কর্মচারীরা মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পাচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে।’ কীভাবে মীজানুর রহমানের মতো ব্যক্তিরা মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন—জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ২০১৩ সালে সংশ্লিষ্ট পার্টি থেকে ২ হাজার ৩৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়ে তাঁদের নামে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট জারি করার অনুরোধ জানানো হয়। সেই সময় দলগতভাবে তাঁদের নামে মুক্তিযোদ্ধার সনদ ইস্যু করা হয়।

এদিকে গেজেট প্রকাশের পর ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সঠিকতা নিয়ে হাইকোর্টের রিট করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা হতে হলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৩ বছর। কিন্তু তালিকায় কয়েকজনের বয়স ছিল ১৩ বছরের কম। এই যুক্তিতে ২০১৪ সালে দলগত গেজেটের সবার নাম বাতিল করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হলে আদালত তালিকাভুক্ত ২ হাজার ৩৬৭ জনের সবার নামে জারি করা গেজেট বহাল রাখার আদেশ দেন। ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনীর তালিকায় স্বাক্ষর করা ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য  বলেন ২ হাজার ৩৬৭ জনের মধ্যে ১ থেকে ১০ জনের তথ্য ভুল হতে পারে। তাঁদের বিষয়টি সংশোধন করে নিলেই হয়। এ জন্য দুঃখজনকভাবে সবাইকে অমুক্তিযোদ্ধা বলে দেওয়া ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাম রাজনীতিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অস্বীকার করার প্রবণতা রয়েছে। এ থেকেই বিষয়টি নিয়ে নাড়াচড়া হচ্ছে। প্রবীণ ওই নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে নতুন করে ৩০ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ দেওয়া হয়েছিল। তাদের সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। সেসব বিষয় নিয়ে কথা না হলেও ন্যাপ, কমিউনিস্ট পাটির গেরিলা বাহিনীর তালিকার ভুল খোঁজা হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn