মুক্তিযোদ্ধাদের কাংক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে হবে- সুনামগঞ্জে জাফর ইকবাল
সকাল থেকেই জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সাজ সাজ রব। স্কুলের বাদক দলের প্রস্তুতি। ছিল ফুলের তোড়া হাতে ছাত্রীদের অপেক্ষা। নিজেদের উদ্ভাবিত নানা প্রজেক্ট নিয়ে বার্ষিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় অংশ নিয়েছিল অনেকেই। তবে এ আয়োজন স্কুলটির ইতিহাসে অন্যান্যবারের চেয়ে অনেকটাই আলাদা ছিল। শিক্ষক ও ছাত্রীদের আনন্দ যেন কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বৃহস্পতিবার প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এ আয়োজনে অংশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে এ মেলার শুভ উদ্বোধন করেন। এর আগে তিনি জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মেলায় তিনি ছাত্রীদের বিভিন্ন উদ্ভাবনী ঘুরে দেখেন এবং এসব প্রজেক্ট বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় বিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্রীরা ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে পেয়ে তার অটোগ্রাফ সংগ্রহ, সেলফি তোলাসহ কুশল বিনিময় করে। অনেক ছাত্রীই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এসময় তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
বিজ্ঞান যন্ত্র উদ্ভাবনী নিয়ে তিনি অনেককে পরামর্শ দেন। পরে মেলা উপলক্ষে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সফিউল আলমের সভাপতিত্বে ও বিদ্যালয়টির শিক্ষক শওকত আলী আহমদ ও ছাত্রী তাজকিরা হক তাজিনের যৌথ সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমার কিছু বন্ধু যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো তাদের অনেকেই শহীদ হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদেরকে বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন। তারা আসলে কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন? মুক্তিযোদ্ধারা সে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন যেখানে সব ধর্মের মানুষ সমান। মুক্তিযোদ্ধারা এ বাংলাদেশের জন্য যে রক্ত দিয়েছেন সে রক্তের ঋণ শোধ হবেনা যদি আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাংক্ষিত বাংলাদেশ গড়তে না পারি। আমাদেরকে সেভাবে চলতে হবে। যে আমার ধর্ম আছে তোমারও ধর্ম আছে, আমি হয়তো মুসলমান তুমি হিন্দু, আমি হিন্দু তো তুমি হয়তো খ্রিস্টান বা তুমি বৌদ্ধ, কিন্তু আমি তোমাকে সাহায্য করবো যে কিভাবে তোমার ধর্মটা তুমি সঠিকভাবেই পালন করতে পারো। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। আমরা জিডিপিতে পাকিস্তানকেও পেছনে ফেলতে পেরেছি। আমরা খাদ্যে প্রায় সয়ংসম্পূর্ণ। মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরা প্রায় তার কাছাকাছি, বাকিটা তোমরা শিক্ষার্থীদের উপরে নির্ভর করছে’।সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সতিশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সতিশ চন্দ্র বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মো. মাশহুদ চৌধুরী।
আলোচনা শেষে ড. মুহম্মদ জাফল ইকবাল ছাত্রীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। এসময় ছাত্রীরা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি তাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় স্কুলটির ১০ম শ্রেণির ছাত্রী ফারিয়া আক্তার নুসরাতসহ কয়েকজন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে নিয়ে তাদের স্বরচিত কবিতা পাঠ করে শোনান। এসব কবিতা ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর সংগ্রহে নেন। কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক মোল্লা, নারীনেত্রী ফৌজিআরা বেগম শাম্মী, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজুসহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকবৃন্দ।