মৌলভীবাজারের চার আসনেই এগিয়ে আ.লীগ, কোন্দলে জর্জরিত বিএনপি
আগামী একাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগ্রহের শেষ নেই মৌলভীবাজার তৃণমূলের। চায়ের টেবিল থেকে রাজনীতির টেবিল পর্যন্ত মৌলভীবাজারের সর্বত্র চলছে আগামী নির্বাচনের মনোভাব নিয়ে ক্ষমাতীন দল আ.লীগ এবং বিএনপির আলোচনা সমালোচনা। আর ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনাকে পুঁজি করে ভিন্নভিন্ন কৌশল প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে আগামী একাদশ নির্বাচনে জেলার সবকটি আসনের বিপরীতে জয়লাভ করতে চান বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
তবে এ যাত্রায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ছাড়া অনান্য সিনিয়র নেতাদের নীরব ভূমিকা নিয়ে বেশকিছু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে নানি-নাতি বলে পরিচিত খালেদা রব্বানী ও নাসের রহমানের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। এতে অনকেটা হতাশা দেখা গেছে তৃণমূলের বিএনপি নেতা কর্মীদের মধ্যে।
এদিকে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটা ফলপ্রসূ হবে না বলেও অনেকের ধারণা। কেননা মৌলভীবাজার জেলা বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ যাত্রায় কতটা সফল হওয়া যাবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। জেলার চারটি আসনের বিপরীতে ক্ষমতাসীন দলের একক প্রার্থী ছাড়াও একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আ.লীগের এক সময়কার জনপ্রিয় নেতা। তবুও বিএনপির প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকাটা ভালো চোখে দেখছে না নেতা-কর্মীরা। সব মিলিয়ে শক্ত প্রার্থী না দিলে ব্যাপকহারে ভরাডুবি হতে পারে বিএনপির।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম. সাইফুর রহমান তনয় মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি এম. নাসের রহমান ব্যবসার কাজে ব্যস্ত, ঢাকায় থাকেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি খালেদা রব্বানী অসুস্থ স্বামীকে চিকিৎসার জন্য বেশিরভাগ সময় মৌলভীবাজারের বাইরে থেকেও অনেকটি দলীয় কর্মসূচি পালন করেন। জেলার সভাপতি ও এলাকায় না থাকায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কর্মসূচি পালিত হতে তেমন দেখা যায় না। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ বিরোধতো আছেই। গেল ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে ওই বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করে। জেলার ৬৭ ইউনিয়নের মধ্যে ৬৬টিতে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু মাত্র ৯টি ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে মিটিং-মিছিলে ফটোসেশন ও প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার সময় জামায়াতের দেখা মেলে।
অনুসন্ধানে মৌলভীবাজার চারটি আসনের বিপরীতে বিএনপির একাধিক প্রার্থীদের নাম উঠে এসেছে।
মৌলভীবাজার-০১ (জুড়ী-বড়লেখা):
মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী উপজেলা বড়লেখা। জামায়ত-বিএনপির অধ্যুষিত এলাকা হলেও ভোটের সময়ের নৌকা প্রতীকেই ভোট পড়ে বেশি। এর কারণ হিসাবে বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছেন অনেকে। এ আসনে ক্ষমাসীন দলের শক্ত প্রার্থীর বিপরীতে লড়তে চান দলীয় প্রতীক প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবাদুর রহমান ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক কাতার বিএনপির সদস্য সচিব শরিফুল হক সাজু এবং জুড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মিন্টু। তবে এ আসনে বিএনপি তিন প্রার্থীর মধ্য দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনায় এগিয়ে আছেন শরিফুল হক সাজু।তিনি ইতিমধ্যেই দলীয় গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
অন্যদিক এ আসনে জামায়ত সমর্থিত এক প্রাথী নির্বাচনে অংশ নেবেন। বড়লেখা উপজেলা জামায়তের আমির আমিনুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ আংশিক):
জেলার মধ্যবর্তী উপজেলা কুলাউড়া। ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি বিএনপির কোন্দলের কমতি নেই এ উপজেলায়। প্রকাশ্যে দুগ্রুপে বিভক্ত উপজেলার বিএনপির নেপথ্যে আছেন বড় বড় দুই খুঁটি। তবে এ আসনে আ.লীগ-বিএনপির সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত দুই নেতা আগামী একাদশ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ে বেশ আগ্রহে আছেন সাধারণ ভোটার। অনেকে মনে করছেন মৌলভীবাজার-২ আসন নিজের করে নিতে হলে দুই দলকেই এ দুই সংস্কারপন্থি নেতাকেই মনোনয়ন দিতে হবে। অন্যতায় দুই দলেরই ভরাডুবি নিশ্চিত।
নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রতীক প্রত্যাশী বিএনপির একাদিক প্রার্থী। এরই মধ্যে বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতা সাবেক এমপি ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএম শহীন, ঢাকার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাড. এএনএম আবেদ রাজা, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নওয়াব আলী আব্বাছ খান, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি (একাংশ) সাবেক পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন জুনেদ।
তবে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভবনায় আছেন এমএম শাহীন।
এদিকে এ আসনে জামায়ত সমর্থিত প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমান স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
মৌলভীবাজার-০৩ (মৌলভীবাজার সদর-রাজনগর):
জেলা সদর আসনে দলীয় প্রতীক প্রত্যাশী জেলার দুই কিং নানি-নাতি। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে নানি-নাতি বলে পরিচিত খালেদা রব্বানী ও নাসের রহমানের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে জেলা বিএনপির সভাপতি এম. নাসের রহমান এবং তারই নানী সাধারণ সম্পাদক খালেদা রব্বানী অনেক চেষ্টা করেও অপর পক্ষের জন্য কোনোভাবেই দলকে শক্তিশালী করতে পারছেন না। জেলার দলকে সু-সংগঠিত করতে না পারলেও দলীয় প্রতীক প্রত্যাশী নানী-নাতি। তবে মনোনয়নের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছেন এম. নাসের রহমান।
তবে এ আসনে সরকারদলীয় বাঘা-বাঘা একাধিক প্রার্থী থাকাতে আগামী একাদশ নির্বাচন বিএনপির অনুকূলে আসাটা বেশ কষ্টসাধ্য।
মৌলভীবাজার-০৪ (কমলগঞ্জন-শ্রীমঙ্গল):
হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজার-৪ আসন। একাদিক চা বাগান থাকার সুবাদে হিন্দুদের সঙ্গে বেশ সখ্য রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার। এ আসনের বতর্মান সাংসদের পরিবর্তন চাইলে সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে বলে মনে হয় না বিএনপি। কেননা নিরব ভূমিকায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী হওয়াতে তেমন কোনো আমেজ নেই স্থানীয় বিএনপিপন্থিদের মধ্যে। সঙ্গে কোন্দলত আছেই। এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাজী মুজিবুর রহমান ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাসিন আলী মধু। এ দুই প্রার্থী ছাড়া জেলা কিংবা তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। তবে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার গুড তালিকায় রয়েছেন হাজী মুজিবুর রহমান।