যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবাদ বর্জনের ঘোষণা
লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক ২ বারের সভাপতি ও জনমত সম্পাদক নবাব উদ্দিন এবং সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক জনমতের প্রধান সম্পাদক, বিডিনিউজ ইউকের প্রতিনিধি সৈয়দ নাহাস পাশা অনুষ্ঠান স্থলে পৌছালে আমন্ত্রন পত্র দেখিয়ে প্রথম গেইট অতিক্রম করলেও দ্বিতীয় গেইট থেকে প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল ফোর্স তাদের ফিরিয়ে দেয়। তারা বের হয়ে আসলে উপস্থিত সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। পরবর্তী পর্যায়ে হাইকমিশনের আরেক কর্মকর্তা তাদের নিয়ে বেতরে প্রবেশের চেস্টা করেন। কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায়েও তাদের হলের ভিতর ঢুকতে দেয়নি নিরাপত্তা কর্মীরা। তাৎক্ষনিক ভাবে আওয়ামীলীগ নেতা ও হাইকমিশন কর্মকর্তাদের এর ব্যাখা চাওয়া হলেও কেউই কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ভেতরে থাকা লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের অন্যান্য সাংবাদিকরাও অনুষ্ঠান বর্জন করে বের হয়ে আসেন।
নিরাপত্তা কর্মীরা যখন সিনিয়র সাংবাদিকদের বের করেদেন তখন তাদের হাতে একটি লিস্ট ছিলো। যাদের এই অনুষ্ঠানে প্রবেশে নিষেজ্ঞা জারীকরা। কেন কি কারনে তাদের বিরুদ্ধে নিষেজ্ঞা জারি করা হয়েছে সে বিষয়েও কেউ কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। বিকালেই নিষেজ্ঞাধার কবলে পড়া সাংবাদিকদের নাম ফাঁস হয়ে যায়। যাদের বিরুদ্ধে নিষেজ্ঞা ছিলো তারা হচ্ছেন সাপ্তাহিক জনমতের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, সম্পাদক নবাব উদ্দিন, এনটিভি ইউকের সিইও সার্বিনা হোসেইন, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের ট্রেজারার ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু সালেহ মোহাম্মদ মাসুম, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভিও ইউকের প্রতিনিধি হাসান হাফিজুর রহমান পলক, সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক আহমেদ ময়েজ, সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, চ্যানেল এস এর নিউজ এডিটর কামাল মেহেদী, টিভি ওয়ান রিপোর্টার ও ওয়ানবাংলানিউজের সম্পাদক জাকির হোসেন কয়েছ, সাপ্তাহিক নতুন দিনের পলি রহমান, লেখক দিলু নাসের, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের যু্গম সম্পাদক মতিউর রহমান, সাপ্তাহিক বাংলাপোস্ট সম্পাদক ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী, জিবি নিউজের সম্পাদক রাকিব রুহেল, সাংবাদিক বাতিরুল হক চৌধুরী, টিভি ফান্ডরাইজার আব্দুল্লাহ আল মামুন,। চ্যানেল এস এর সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিলের নাম এই তালিকা থাকলেও তাকে বিশেষ অনুরোধে প্রবেশ করা হয় বলে জানাগেছে। একই তালিকা ছিলেন সাংবাদিক ও যুক্তরাজ্য ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সারোয়ার কবির, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সায়াদ আহমদ সাদ ও শেখ মতিউর রহমান বাবু এর নাম। এই ঘটনায় যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনকে দোষারুপ করলেও হাইকমিশন বলছে এতে তাদের কোন হাত নেই। এদিকে বিকেলে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সকল অনুষ্ঠান বর্জনসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একটি সভায় লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক দুই প্রেসিডেন্টসহ কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে নজিরবিহীন অশোভন আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব। এই প্রেক্ষিতে জরুরীভিত্তিতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় সৃষ্ট ঘটনার সুষ্ঠু ও সম্মানজনক সমাধানের আগ পর্যন্ত ইউকে আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম ও তৎপরতার সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাঁর শনিবারের অনুষ্ঠানের বক্তব্য এবং অন্যান্য সংবাদের বেলায় তা প্রযোজ্য হবে না। এসব সিদ্ধান্তের সাথে উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করে স্বাক্ষর প্রদান করেন। লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া হাউজের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ সবাইকে মেনে চলার আহবান জানানো হয়। একই সাথে এক্ষেত্রে মিডিয়া হাউজগুলোর মালিক, কর্তৃপক্ষ ও সম্পাদকদের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩ আগস্ট, শনিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক শোকসভায় আমন্ত্রণপত্র ইস্যুর পরও প্রায় আট জন সাংবাদিকের আমন্ত্রণপত্র বাতিল করা হয়। এছাড়া প্রেসক্লাবের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে জনমতের প্রধান সম্পাদক ও বিডি নিউজের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি সৈয়দ নাহাস পাশা ও জনমতের সম্পাদক নবাব উদ্দিন আমন্ত্রণপত্রসহ অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। এছাড়া আগেই যাদের আমন্ত্রণপত্র বাতিল করা হয়েছিলো তাদের মধ্যে প্রেসক্লাবের ট্রেজারার ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউরোপ ব্যুরো চীফ আ স ম মাসুকসহ একাধিক পত্র-পত্রিকা এবং টিভি সাংবাদিক ও সম্পাদক রয়েছেন। আয়োজকদের এই চরম অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রেস ক্লাব প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য সাংবাদিক অনুষ্ঠান বর্জন করে বেরিয়ে আসেন।ক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়েরের পরিচালনায় তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় ঘটনার পুরো বিবরণ তুলে ধরেন সৈয়দ নাহাস পাশা, নবাব উদ্দিন ও আ স ম মাসুম।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমদ, প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম বাসন, ইন্ডিপিন্ডেন্ট টিভির প্রতিনিধি হাসান হাফিজ, দর্পন সম্পাদক রহমত আলী, এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার ও বেতার বাংলার পরিচালক মোস্তাক বাবুল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ডেপুটি ব্যুরো চীফ আফজাল হোসেন, চ্যানেল এস এর সিনিয়র রিপোর্টার ইব্রাহীম খলিল, ওয়ানবাংলা সম্পাদক ও টিভি ওয়ানের সিনিয়র রিপোর্টার জাকির হোসেন কয়েস, এনটিভির চীফ রিপোর্টার আকরাম হোসেইন, প্রবাস বাংলার সম্পাদক মাহবুব আহমদ, বাংলা ভিশনের প্রতিনিধি আব্দুল হান্নান, এসএ টিভি র বিশেষ প্রতিনিধি হেফাজুল করিম রাকিব, জনমতের কমিউনিটি এডিটর ইমরান আহমদ, ৫২ বাংলা টিভি র সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম অভি ও রিপোর্টার সামসুর রহমান, এল বি টিভির সিনিয়র রিপোর্টার আলাউর খানসহ প্রমুখ ।সভায় গৃহীত উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তসমূহ:
১/ যেহেতু অনুষ্ঠানের আয়োজক যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, (প্রেসিডেন্ট সুলতান শরীফ ও সেক্রেটারি সৈয়দ ফারুক স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্র) তাই তাদেরকেই এই ঘটনার জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং নাম বাতিলের গ্রহণযোগ্য কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে।
২/ ইউকে আওয়ামী লীগকে অবশ্যই এই চরম দায়িত্বহীন ও নজীরবিহীন আচরণের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।
৩/ সংবাদপত্রগুলো এক সপ্তাহ তাদের প্রথম পাতায় প্রতীকী প্রতিবাদ প্রকাশ করবে।
৪/ ঘটনাসংশ্লিষ্ট সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও সংবাদ তাঁর সম্মানে যথার্থভাবে প্রচার ও প্রকাশ করা হবে। তবে আয়োজক সংগঠন ও এর নেতৃবৃন্দের নামের উল্লেখ না করার পাশাপাশি তাদের ছবি ও ফুটেজ প্রচার ও প্রকাশ করা হবে না।